ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

নির্মম বাস্তবতার উপন্যাস ‘কালকেউটের সুখ’

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫
নির্মম বাস্তবতার উপন্যাস ‘কালকেউটের সুখ’

ঢাকা: অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এসেছে স্বকৃত নোমানের উপন্যাস ‘কালকেউটের সুখ’। এ উপন্যাসে নিজেকে ভেঙেছেন তরুণ এ কথাসাহিত্যিক।



কাহিনী নির্মাণ, ভাষার ব্যবহার আর শব্দচয়নের ক্ষেত্রে দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা। উপন্যাসের ভাষাকে করেছেন আরো গতিশীল, আধুনিক। বিষয়বস্তু নির্বাচনেও এনেছেন বৈচিত্র্য।

উপন্যাসটির একটি অংশ বাংলানিউজের শিল্পসাহিত্য বিভাগে প্রকাশ হয়। এবার মেলায় পাওয়া যাচ্ছে তার পুরো উপন্যাসটিই।

প্রায় পৌনে দু-শ’ পৃষ্ঠার উপন্যাসটি প্রকৃত অর্থেই একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতা, হিন্দুধর্মাবলম্বীদের নীরব দেশত্যাগ এবং কালকেউটের মতো বিষধর স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর উত্থানকেন্দ্রিক একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক উপন্যাস ‘কালকেউটের সুখ’।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনের ধারঘেঁষা একটি গ্রাম উপন্যাসটির পটভূমি। গ্রামটির নাম গরানপুর। হয়ত এটি প্রকৃত কোনো গ্রামের নাম নয়, একটি গ্রামের ছদ্মনাম; এই গ্রামের আড়ালে লুকিয়ে আছে অন্য একটি গ্রাম। ঔপন্যাসিক অত্যন্ত সুকৌশলে অতিবাস্তবতা থেকে উপন্যাসের কাহিনীকে সরিয়ে আনতে গ্রামটির প্রকৃত নামের পরিবর্তে একটা ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন।

গরানপুর গ্রামে মৌয়াল, বাওয়ালি, জেলে, কিষানদের বসবাস। গ্রামের পুবে পৃথিবীবিখ্যাত সুন্দরবন, যেখানে বাঘের পিঠে চড়ে আঠারো ভাটি শাসন করে বনবিবি। বনদেবতা দক্ষিণরায় বাঘের পালকে তাড়িয়ে দক্ষিণের জঙ্গলে জড়ো করে। আরেক দেবতা শাজঙ্গলী মানুষের রূপ ধরে গ্রামের মানুষকে বাঘচালানের মন্ত্র দিয়ে যায়। তবুও বনজীবীরা হারিয়ে যায়, গুম হয়, খুন হয়য়, বাঘ-কুমিরের শিকারে পরিণত হয়।

চৌষট্টি সালের দাঙ্গায় নিহত গরানপুর গ্রামের প্রসূন মাইতির পরিত্যক্ত ভিটায় একটা স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন উপন্যাসের প্রধান চরিত্র মুক্তিযোদ্ধা কেশবচন্দ্র মণ্ডল। কিন্তু তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলে তার সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এক নিশিরাতে তিনি নিখোঁজ হন। হিন্দু, মুসলমান, ওয়াহাবি, সুন্নি, আহমদিয়া...একাধিক ধর্ম ও মতবাদের চর্চা শুরু হয় তার পরিবারে। শুরু হয় তিক্ততা, সম্পর্কের পুনর্ভাঙন।

গরানপুরে ধীরে ধীরে স্বাধীনতাবিরোধীদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়, শান্তি কমিটির নেতা ডেয়ারিং ছবু হয় ছবেদালি চেয়ারম্যান। মুক্তিযোদ্ধারা হয়ে পড়েন কোণঠাসা। নীরবে দেশ ছাড়ে হিন্দুরা, তাদের ভিটেমাটি বেদখল হয়ে যায়। মাইতির পরিত্যক্ত ভিটায় স্কুলের বদলে ওঠে মাদ্রাসা। বাবরি মসজিদ ভাঙার খবরে শুরু হয় মন্দির ভাঙার উৎসব, রক্তপাত।

মুক্তিযোদ্ধাপুত্র মোছলেম তালুকদার হয়ে ওঠে দুর্ধর্ষ বনদস্যু। গন্তব্য ঠিক করতে পারে না নিখোঁজ কেশব মণ্ডলের মেয়ে নিঃসঙ্গ তাপসী।
নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্রাইসিস নিয়ে আবর্তিত হয় উপন্যাসের কাহিনি। আসলে গরানপুরের পটভূমিকায় স্বকৃত নোমান তুলে এনেছেন স্বাধীনতা পরবর্তী সমগ্র বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতা।

এই বাস্তবতা বড় কঠিন, বড় নির্মম। গরানপুর যেন পুরো বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে। উপন্যাসটি পড়া শেষ করে বাংলাদেশ ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ’ কথাটি মিথ্যে মনে হয়। মানুষের মুক্তির জন্য, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এক ধরনের হাহাকার জাগে মনে। বিষয়, আঙ্গিক ও ভাষায় উপন্যাসটি ব্যতিক্রম। বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে এই উপন্যাস  একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হতে পারে।

উপন্যাসটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন আমজাদ হোসেন। দাম ৩৩৫ টাকা। জাগৃতির স্টলে পাওয়া যাচ্ছে ‘কালকেউটের সুখ’।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।