বইমেলা থেকে: চারটি আর্চওয়ের সামেনই দীর্ঘ লাইন। লাইন চারটির মাঝের চওড়া প্রবেশ পথ দিয়ে একের পর এক রিকশা ও রিকশাভ্যান ঢুকছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত- এই ৩০ মিনিটে অন্তত অর্ধশত রিকশা ও রিকশাভ্যান মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ঢোকে বই নিয়ে।
বিকেল ৩টায় মেলার গেট উন্মুক্ত হওয়ার পর ভেতরে ঢুকেই হাতের বাম দিকে মোড় নিই। সোজা গিয়ে দাঁড়াই সময় প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নের সামনে।
প্রকাশনীটির অন্তত আটজন বিক্রয়কর্মী রিকশাভ্যান থেকে বই নামিয়ে প্যাভিলিয়নে সাজাচ্ছেন। কারো সঙ্গে কথা বলার ফুরসৎ তাদের নেই।
তারপরও প্যাভিলিয়নটির জ্যেষ্ঠ বিক্রয়কর্মী গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়ার কাছ থেকে পাওয়া গেল এক মিনিট সময়। তিনি বলেন, আজ থেকে বইয়ের বিক্রি অবশ্যই বাড়বে। এতদিন যারা মেলায় এসেছেন তাদের বেশিরভাগই দর্শনার্থী। আশা করছি আজ দর্শনার্থীর চেয়ে ক্রেতার সংখ্যাই বেশি হবে। সে কারণে প্যাভিলিয়নের বইয়ের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।
সময় প্রকাশনীর প্যাভিলিয়ন থেকে তাম্রলিপির স্টলে গিয়ে দেখা গেলো একই চিত্র। রিকশাভ্যানের ওপর রাখা বিশাল আকৃতির চারটি কার্টন থেকে বই তোলা হচ্ছে স্টলে।
স্টলটির সামনে ছোট-খাটো একটি ভিড়ও জমে গেছে। ঝাঁপ তোলার পরই বিশ-ত্রিশ জন পাঠক-দর্শনার্থী তাম্রলিপি প্রকাশনীর সামনে এসে জড়ো হয়েছেন। কয়েকজন বইও কিনে ফেলেছেন এরই মধ্যে।
কথা হয় উত্তরা থেকে বাবার সঙ্গে মেলায় আসা তামান্না মাসুমের সঙ্গে। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘গ্রামের নাম কাঁকনডুবি’ বইটি কিনতে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী তামান্না মেলায় এসেছেন। তিনি বলেন, ‘ভিড় এড়াতেই একুশের পরে মেলায় এসেছি। আজ শুধু বই কিনবো। ভিড় কম থাকায় স্বস্তিতে ঘোরা যাবে। ’
তামান্না মাসুমের বাবা মাসুম বিল্লাহ বলেন, যেহেতু বই কেনাটাই একমাত্র উদ্দেশ্য, সেহেতু মেলায় আসার জন্য শেষ সপ্তাটাই বেছে নিই। এতে সুবিধা হয় এই যে, নতুন বই যা আসার, এর মধ্যেই চলে আসে। দেখে-শুনে কেনা যায়।
স্টলে বই তোলা ও বই বিক্রিতে ব্যস্ত থাকা বিক্রয়কর্মী ফায়সাল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম তিন সপ্তাহে যা বিক্রি হয়, শেষ সপ্তাহে তার চেয়ে বেশি হয়। সেই প্রত্যাশা থেকেই স্টলে বেশি করে বই তুলছি। দেখা যাক কি হয়।
তাম্রলিপি থেকে শোভা প্রকাশনীতে গিয়ে কথা হয় স্টল ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, একুশের আগে মানুষ মেলায় আসে ঘুরতে, দেখতে, আড্ডা দিতে অথবা পছন্দের বইয়ের তালিকা তৈরি করতে। কিন্তু একুশের পরের দিনগুলোতে কেনার জন্য মেলায় আসে সবাই। এ বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের প্রস্তুতিও থাকে সেরকম। ’
ভাষাচিত্রের নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর আহমেদের সঙ্গে কথা হয় তাদের প্রকাশনীর স্টলে দাঁড়িয়ে। প্রকাশনার জগতে সাত বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন তরুণ এই প্রকাশক বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম সপ্তাহের পর থেকে প্রত্যাশা বাড়তে থাকে। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণের কাছাকাছি যেতে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় শেষ সপ্তাহের জন্য।
প্রকাশকদের প্রত্যাশার পারদ ঊর্ধ্বমুখী দেখে পাঠকদের কেনার খবর নিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা চত্বরে বেশ কয়েকটা চক্কর দিলাম।
এরই মধ্যে দেখা মিলল ধানমন্ডি থেকে মেলায় আসা কলেজ শিক্ষিকা হাবিবা আশরাফ ও মেয়ে গুলে জান্নাত খান সুমির সঙ্গে।
মা-মে দু’জনের হাতেই বই। মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনী কিনেছেন চার হাত ভরে। মোটা মোটা বই বহন করতেও কষ্ট হচ্ছে তাদের।
জিজ্ঞেস করতেই হাবিবা আশরাফ বলেন, দেখুন, কি ছিমছাম পরিবেশ। অন্য দিন এলে কি এতগুলো বই নিয়ে ঘুরতে পারতাম। প্রতি বছরই আমরা একুশের পরেই বইমেলায় আসি। পছন্দের বই কিনে বাসায় ফিরি।
মেলা মঞ্চের আয়োজন: প্রতি দিনের মতো আজও মেলা শুরুর এক ঘণ্টা পর বিকেল ৪টায় মূলমঞ্চে শুরু হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। আজকের বিষয় রবীন্দ্রনাথ: মহাজীবনের অঙ্গ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান বেগম আকতার কামাল। এর ওপর আলোচনায় অংশ নেন আতিউর রহমান ও ফখরুল আলম। সভাপতিত্ব করেন সনজীদা খাতুন।
সন্ধ্যায় মেলার মূল মঞ্চে শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে দেশের খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী, আবৃত্তিকার ও নৃত্যশিল্পীরা অংশ নেবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৫