ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

কেউ সন্তুষ্ট কেউ অসন্তুষ্ট বিক্রিতে

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫
কেউ সন্তুষ্ট কেউ অসন্তুষ্ট বিক্রিতে তারিকুল ইসলাম ও ওসমান গণি

বইমেলা থেকে: অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বেজে উঠেছে বিদায়ের স‍ুর। শনিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় পর্দা নামবে বাঙালির এই প্রাণের মেলার।

এরই মধ্যে বিকিকিনির হিসাব কষতে শুরু করেছেন বইয়ের বিক্রেতা ও প্রকাশকরা।
 
মেলায় যাদের বিক্রি ভালো ছিলো, তারা বলছেন- ‘চমৎকার গেছে মেলা’। যাদের বিক্রি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি, তারা বলছেন ভিন্ন কথা। আর যাদের বিক্রি ছিলো একেবারই কম, তারা তো বাংলা একাডেমির কাছ থেকে প্যাভিলিয়ন-স্টল ভাড়ার টাকা ফেরত চেয়ে বসে আছেন।
 
অবশ্য এই ফেরত চাওয়াটা ইনডিভিজ্যুয়ালি নয়, বরং অ্যাকাডেমি অ্যান্ড পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র প্রেসিডেন্ট ও আগামী প্রকাশনীর সত্ত্বাধিকারী ওসমান গণি বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনের পক্ষ থেকে বাংলা একাডেমির কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। শুধু ক্ষতিপূরণ নয়, সংবাদ সম্মেলন থেকে মেলার সময় বাড়ানোরও দাবি জানানো হয়।
 
শুক্রবার বিকেল সোয়া ৪টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রকাশকদের ক্ষতিপূরণ ও মেলার সময় বাড়ানোর ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো সাড়া দেয়নি বাংলা একাডেমি। দেওয়ার সম্ভাবনাও নেই।
 
এসব বিষয় নিয়েই শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কথা হয় তাম্রলিপির প্রকাশক এ কে এম তারিকুল ইসলাম রনির সঙ্গে। এর আগে মঙ্গলবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) কথা হয় আগামী প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী ওসমান গণির সঙ্গে।  
 
বাংলানিউজ: মেলায় বিক্রি কেমন?
 
ওসমান গণি: হরতাল অবরোধের কারণে এবারের বিক্রি খুব একটা ভালো হয়নি। বাইরে থেকে লোক আসতে না পারায় কেবল ঢাকার পাঠকদের কাছেই বই বিক্রি করতে হয়েছে। অর্থাৎ, ক্রেতাদের বড় একটা অংশকে আমরা মিস করেছি। এ কারণে এবার টার্গেট পূরণ হবে না।
 
তারিকুল ইসলাম রনি: বিক্রি সন্তোষজনক। যারা পাণ্ডুলিপি সিলেকশনে ভুল করেছে, ইনভেস্ট ছিলো কম, তাদের হয়তো বিক্রি ভালো হয়নি। কিন্তু যারা হিউজ ইনভেস্ট করেছে এবং পাণ্ডুলিপি সিলেকশনের ক্ষেত্রে রাইট ডিসিশন নিয়েছে তাদের বিক্রি ছিলো সন্তোষজনক। যেন তেন পাণ্ডুলিপি দিয়ে তো আর ভালো বই হবে না। ভালো বই না হলে পাঠক কিনবে কেন?
 
বাংলানিউজ: মেলার সার্বিক পরিস্থিতি কেমল ছিলো?
 
ওসমান গণি: মেলা নিয়ে আরো পরিকল্পনার প্রয়োজন। মাসব্যাপী মেলার জন্য কয়েকজন লোক বসে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত নিলে মেলা ভালো হবে না। এই দেখুন মেলার প্যান্ডেলটা কীভাবে সাজানো হয়েছে। গেটের সামনে এসে দাঁড়ালে বোঝার উপায় নেই মেলা কোনটা। নাক বরাবর পুরো জায়গায় খালি রেখে দুই পাশে স্টল সাজানো হয়েছে। আবার দেখুন যত অখাদ্য-কুখাদ্য প্রকাশনীগুলোকে শিশুতোষ আখ্যা দিয়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রেখে দিয়েছে। আমরা কি শিশুতোষ বই প্রকাশ করিনি। অভিভাবকরা শিশুদের সঙ্গে এনে ওখান (বাংলা একাডেমি) থেকে মানহীন বই কিনে চলে যায়। উদ্যানে আসে না।
 
তারিকুল ইসলাম: মেলার পরিধি ও বিস্তৃতি বাড়ায় পরিবেশ ছিলো চমৎকার। বাংলা একাডেমিতে মেলা সীমাবদ্ধ থাকলে মানুষের গাদাগাদিতে পরিবেশ নষ্ট হতো। ঝামেলা ও ভিড়ের ভয়ে অনেকে মেলায় আসতে চাইত না। দেখতেই পাচ্ছেন প্রতিদিন কী পরিমাণ ভিড় হচ্ছে। মেলার পরিধি না বাড়লে কী অবস্থা দাঁড়াতো। তাছাড়া স্টলে ভালো বই থাকলে পাঠক-দর্শনার্থীরা আসবেই। তাদের ঠেকানো যাবে না।
 
বাংলানিউজ: বইয়ের মান নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
 
ওসমান গণি: মানহীন বই তো আছেই। সবার পক্ষেই তো আর মানসম্মত বইয়ের পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ সম্ভব নয়। সে সামর্থ্যও অনেকের থাকে না। এ কারণে মানসম্মত বইয়ের পাঠক মানসম্পন্ন বই কিনবে। অন্যরা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী বই কিনবে। এ দায়টা শুধু প্রকাশকের নয়, লেখক-পাঠক সবার। তবে যারা নিয়তিম বই পড়েন ও কেনেন তারা জানেন কারা ভালো বই ছাপে। আর কারা ছাপে না।
 
তারিকুল ইসলাম: মান বলতে কী বোজাচ্ছেন সেটিই আমি বুঝতে পারছি না। আপনি যে শার্ট গায়ে দিয়েছেন সেটি আপনার কাছে মানসম্মত, আমারটা আমার কাছে মানসম্মত। মেলায় আসা সব বইয়েরই পাঠক রয়েছে। নইলে বইগুলো তো পড়ে থাকতো। তবে প্রকাশক হিসেবে আমি এটুকু বলতে পারি, যে বই সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে না, সেই বই প্রকাশের কোনো প্রয়োজন নেই। তাছাড়া বই তো আর প্রকাশকরা লেখে না, বই লেখে লেখকরা। পড়ে পাঠকরা। সুতরাং, দায়টা কেবল প্রকাশকদের ওপর চাপিয়ে লাভ নেই।
 
বাংলানিউজ: মেলার সময় বাড়ানো ও ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছে ‘অ্যাকাডেমি অ্যান্ড পাবলিশার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- এ ব্যাপারে আপনার অবস্থান কী?
 
তারিকুল ইসলাম: অন্য আর দশটি বারোয়ারি মেলার সঙ্গে অমর একুশে গ্রন্থমেলার কোনো যোগসূত্র নেই। এ মেলার সঙ্গে বাঙালির আবেগ জড়িয়ে আছে। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে এ মেলার আয়োজন, আবার ভাষার মাসেই শেষ। তাই মেলাকে টেনে মার্চ মাসে নেওয়ার পক্ষে আমি নই। তাছাড়া ক্ষতিপূরণে প্রশ্ন কেন আসছে? প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্টি দুর্যোগের কথা মাথায় রেখেই ব্যবসায় নামতে হয়। যাদের বই ভালো বিক্রি হয়েছে তারা কী একাডেমিকে বাড়তি টাকা দেবে? এসব অবান্তর দাবি। তারপরও এ দাবির পক্ষে দাঁড়াতে হয়েছে এই জন্য যে ওই সমিতির আমিও একজন সদস্য।
 
বাংলানিউজ: ধন্যবাদ
তারিকুল ইসলাম: আপনাকেও ধন্যবাদ

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫

** পাঠকের হাতে বই, প্রকাশকের মুখে হাসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।