বইমেলা থেকে: অমর একুশে গ্রন্থমেলার সমাপনী দিন শনিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টা। সাদা কাগজে হাতে লেখা তালিকার দিকে চোখ বোলাতে বোলাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢুকছেন শনিরআখড়া থেকে মেলায় আসা আব্দুল্লাহ আল মামুন।
জিজ্ঞেস করতেই বললেন, ভাই, অফিস থেকে এসেছি। বইগুলো কিনেই দ্রুত ফিরে যাবো। আজকের পর মেলা থাকবে না। তখন ১৫ পার্সেন্টে বই কিনতে হবে। আজ পাচ্ছি ২৫ পার্সেন্ট।
সন্ধ্যার পরও তো আসা যেত- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। কোনো দিন ৮টায়, কোনো দিন বের হতে রাত ১০টাও বেজে যায়। তাই শনিরআখড়া থেকে এসে মতিঝিল অফিসে হাজিরা দিয়েই মেলায় এলাম। বইগুলো কিনে দ্রুত ফিরতে হবে।
অফিস আওয়ারে চাকরি নামের সোনার হরিণটাকে সম্পূর্ণ অরক্ষিত রেখে বইয়ের টানে মেলায় ছুটে আসা বইপাগল আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আর বিরক্ত না করে উদ্যান থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ঠিক এমন সময় মাথা ভর্তি সাদা চুল ষাটোর্ধ্ব এক ভদ্রলোক হঠাৎ থামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মওলা রনির লেখা ‘মোগল হেরেমে দুনিয়া কাঁপানো প্রেম’ বইটি কোথায় পাওয়া যাবে?
এ বয়সেও ‘প্রেমের’ বই খুঁজতে দেখে জীবনের সায়াহ্নে পৌঁছে যাওয়া মানুষটিকে ‘রসিকজন’ মনে হলো। মনে হলো ইতিহাস আশ্রয়ী কাহিনীর প্রতি নিবিড় প্রেমবোধও তার আছে।
শিক্ষকতা থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া খলিলুর রহমানকে তার কাঙ্ক্ষিত বইয়ের সন্ধান দিয়ে জানতে চাই, শেষ দিনে মেলায় কেন?
মূলত, ঢাকার বাইরে ছিলাম। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর পিতৃভিটা ফেনীতেই আবাস গড়েছি। ঢাকার বাসাবোতে মেয়ের বাসা। সেখানে এসেছি কাল। মনে হলো রনি সাহেবের বইটি কিনে নিয়ে যাই। বিকেলে প্রচণ্ড ভিড় হবে জেনে এখনই মেলায় এলাম- বলেন বাংলার শিক্ষক খলিলুর রহমান।
মেলার শেষ দিনে এসে এ রকম টুকরো টুকরো খবর হয়তো অনেক পাওয়া যাবে।
সকাল ১০টায় দরজা খোলার পর খুব স্বল্প সংখ্যক লোক মেলায় ঢুকলেও প্রত্যেকেরই লক্ষ্য বই কেনা। শেষ মুহূর্তে এসে মেলা উপলক্ষে দেওয়া বিশেষ ছাড়ের সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না কেউ।
অনেকেরই আবার শুধু বই নয়, মেলার প্রতিও জমে গেছে গভীর প্রেম। তাই শেষ দিনটিতে এসে মেলা এবং এর আশপাশে বসে রয়েছেন। এ যেন প্রিয় স্বজনকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি।
কথা হয় শাকিল-সোহানা জুটির সঙ্গে। ঢাকা তেজগাঁও কলেজের ছাত্র শাকিল এবং তিতুমীর কলেজের ছাত্রী সোহানা বই কেনার জন্য নয়, মেলার শেষ দিনটাকে বিদায় জানাতে সকাল বেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে হাজির হয়েছেন। পুকুরের সিঁড়িতে বসে তুলছেন এবারের মেলার শেষ সেলফি!
তারা বলেন, যেহেতু আমরা ছাত্র, সেহেতু বই কেনার খুব একটা টাকা পয়সা আমাদের কাছে নেই। তবে মেলায় আসতে এবং ঘুরে ফিরে বই দেখতে ভালো লাগে। তাই মেলার শেষ দিনটায় সকাল সকাল চলে এলাম।
এদিকে পরিবর্তিত সূচি অনুযায়ী সকাল ১১টার পরিবর্তে শনিবার মেলা শুরু হয় সকাল ১০টায়। শেষ হবে রাত ৯টায়।
মূল মঞ্চের আয়োজন
আজ বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে নাট্যকার শম্ভুমিত্র শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শিল্প সমালোচক আবুল হাসনাত। আলোচনায় অংশ নেবেন হাসান ইমাম, মামুনুর রশীদ, এসএম মহসীন। সভাপতিত্ব করবেন রামেন্দু মজুমদার।
সন্ধ্যা ৬টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-র সমাপনী অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা ভাষণ দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান।
গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-র সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস এনডিসি।
এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চায় অবদানের জন্য সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ পুরস্কার ২০১৪, সর্বাধিক সংখ্যক মানসম্পন্ন গ্রন্থ প্রকাশের জন্য প্রকাশককে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’, সেরা গ্রন্থের জন্য ‘শহিদ মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’, গুণমান বিচারে সর্বাধিক সংখ্যক শিশুতোষ গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং স্টলের নান্দনিক অঙ্গসজ্জার জন্য ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
** বইমেলায় ১০ মিনিট অবস্থান ধর্মঘট
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৫