অমর একুশে গ্রন্থমেলায় কুরআনের ১৭টি সুরা ও তার ব্যাখ্যা নিয়ে ‘সহজ কুরআন’ নামের একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। বইটি লিখেছেন আসিফ সিবগাত ভূঞা।
গত প্র্রায় একযুগ সময় ধরে ইসলাম নিয়ে তার জানাশোনা কিছুটা অন্যের সাহায্যে, কিছুটা নিজের চেষ্টায়। ২০০৯ সালে চলে যান কাতারে, কাতার ইউনিভার্সিটির একটি এক বছরকালীন আরবি ভাষার কোর্স করতে। আরবি ভাষায় কিছুটা দক্ষতা অর্জন করে সেটা দিয়ে তিনি ইসলামের বিভিন্ন শাস্ত্রের পাঠ নেয়া শুরু করেন। সম্প্রতি মিশকাহ ইউনিভার্সিটি নামক একটি অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি নতুন করে ইসলামিক স্টাডিজ নিয়ে পড়ছেন। এখানে মিশরের বিখ্যাত আয়হার ইউনিভার্সিটির বেশ কয়েকজন প্র্রফেসরের সান্নিধ্যে তার জ্ঞান অর্জনের সুযোগ হচ্ছে।
বইটি সম্পর্কে জানতে চাইলে আসিফ সিবগাত ভূঞা বাংলানিউজকে বলেন, এ বইটির নাম ‘সহজ কুরআন’ দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাপার একসাথে মাথায় রেখে। ‘সহজ কুরআন’ বলে এটা বোঝানো হয়নি যে কুরআন সহজ। সেরকমটা পাঠক মনে করতে পারেন—সেই ঝুঁকি মাথায় রেখেই আমি ‘সহজ কুরআন’ নামটি রেখেছি। ব্যাখ্যা করা যেতে পারে কী কী কারণে ‘সহজ কুরআন’ নামটি আমার কাছে লাগসই মনে হয়েছে।
ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রথমত, এ বইয়ে আমি সূরা ফাতিহা ও সূরা যিলযাল থেকে শুরু করে সূরা নাস পর্যন্ত শেষ ১৬টি—অর্থাৎ মোট ১৭টি সূরার ব্যাখ্যা নিয়ে এসেছি। এই ১৭টি সূরা সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি মুখস্থ করেন এবং কিছুটা জেনে-বুঝে থাকেন। তাই পরিচিত সূরাগুলো দিয়ে যদি তারা কুরআন পড়া শুরু করেন, সেটা তাদের জন্য সবচেয়ে সহজ হবে বলে আমার মনে হয়েছে।
দ্বিতীয়ত, কুরআনের ব্যাখ্যা কঠিন থেকে কঠিনতর হতে পারে ব্যাখ্যাদাতার টার্গেট অডিয়েন্স ও অ্যাকাডেমিক উদ্দেশ্যের ওপর ভর করে। আমি এখানে সুরাগুলোর ব্যাখ্যা যতটা পারা যায় ভাষার কাঠিন্য থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি বলাটাই বাঞ্ছনীয়। কেননা কুরআনের ব্যাখ্যা দাঁড় করানো প্রজেক্ট হিসেবে খুব সহজ নয়। কারণ কুরআনের টপিক ও ভাষা দুটোই—বিশেষ করে, বর্তমান সময়ের পাঠকদের পাঠাভ্যাস মাথায় রাখলে—সহজ নয়। সেক্ষেত্রে এর ব্যাখ্যায় মৌলিকভাবে কিছু জটিলতা ও ভাবগাম্ভীর্য রাখতেই হবে, ওইটুকু বাদ দিলে কুরআন আর কুরআন থাকে না। কুরআনের একটি মূল লক্ষ্যই হচ্ছে মানুষের চিন্তা সচল করা। ব্যাখ্যায় এসে যদি চিন্তার অংশটুকু উধাও হয়ে যায়, তাহলে সেই ব্যাখ্যা সহজ হলেও সঠিক হবে না। কিন্তু এর পরও চেষ্টা করা হয়েছে যে ব্যাখ্যায় ঠিক ততটুকু গাম্ভীর্য ও ভাবজটিলতাকে স্থান দেওয়ার, যতটুকু না হলেই নয়।
তৃতীয়ত, আরেকটি বিষয় হলো কুরআন ব্যাখ্যার সময় লেখকের একটি অ্যাকাডেমিক দায়িত্ব থাকে যে এখানে সে নিজের মনগড়া কথা বলবে না; বরং যেভাবে কুরআনের বিষয়ের ও ভাষার প্লিতরা কুরআনকে বুঝেছেন, সেটাকে বজায় রাখার চেষ্টা করবে। কিন্তু অপরদিকে লেখক যদি কেবল পুরোনো কথাই অ্যাকাডেমিক স্টাইলে রিপিট করেন, তাহলে নতুন করে ব্যাখ্যা লেখার কোনো যুক্তি থাকে না। উপরন্তু আধুনিক সমাজ যে সময়টাকে দেখছে, সেই সময়ের আলোকে নতুন মেজাজের ও ঢঙের কথা না এলে পাঠক লেখার মধ্যে নিজেকে খুঁজে পান না। তাই এই বইয়ে আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি কুরআনের ব্যাখ্যা করার যে অ্যাকাডেমিক ধারা গত কয়েক শ’ বছরে মুসলিম আলেমরা ধরে রেখেছেন তার প্রতি যথোপযুক্ত সৎ থেকে, এরপর সেই ব্যাখ্যাকে সময়ের ও সমাজের বোতলে ধারণ করার। এটি বাংলাদেশের যেকোন ভালো বাংলা বোঝা শিক্ষিত মানুষের কুরআন স্টাডি করার প্রথম স্টেপ যেন হতে পারে, সে জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বইটিতে এমন ১৭টি সূরার ব্যাখ্যাকে স্থান দেওয়া হয়েছে, যার সাথে বাংলাদেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি পরিচিত। প্রতিটি সুরার আরবি আয়াত ও অনুবাদ প্রথমে দেওয়া হয়েছে। অনুবাদটি আমার করা। অনুবাদের ক্ষেত্রে কুরআনের তাফসির গ্রন্থ এবং বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদের দিকে আমি নজর দিয়েছি। তবে অনুবাদের শেষরূপটি কী হবে সে ব্যাপারে আমিই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ক্ষেত্রে দুটো ব্যাপার খেয়াল রেখেছি। প্রথমত, অনুবাদের ভাষাকে আমি যতটা পারা যায় সহজ রেখেছি। দ্বিতীয়ত, কুরআনের যেসব আরবি শব্দের অনুবাদ খুবই কষ্টকর অথবা যা অনুবাদ করলে অর্থ খুবই সংকীর্ণ হয়ে পড়ে, সেখানে আমি অনুবাদ না করে আরবি শব্দটাই রেখে দিয়েছি।
এদিকে, প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই প্রথম সপ্তাহের সর্বোচ্চ বিক্রির তালিকায় স্থান করে নিয়েছে সহজ কুরআন বইটি। শনিবার বইটির প্র্রকাশক—আদর্শের স্টলে খোঁজ নিয়ে এই তথ্য পাওয়া যায়। গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে আদর্শের ৫৭৫-৫৭৬ নাম্বার স্টলে ও অনলাইন বুকশপ রকমারি.কমে অর্ডার দিয়ে বইটি সংগ্রহ করা যাবে। বিনিময় মূল্য ২০০ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৬
টিকে/