অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: তখনও সবগুলো স্টল তার ঝাঁপি খুলেতে পারেনি। এরই মধ্যে একে একে বইপ্রেমী দর্শনার্থীদের প্রবেশ।
রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় মেলা শুরুর পর এমন চিত্র দেখা গেলো। মেলার শুরু থেকেই ধীরে ধীরে লোক সমাগম হতে শুরু করে। মূলত কর্ম দিবস বলে ভিড় ততোটা নেই, তবে মানুষের আনাগোনা যে কম তা কিন্তু নয়।
পুরো মেলা প্রাঙ্গণ নতুন বইয়ের উঠানে পরিণত হয়েছে। কিছুক্ষণ পরপরই ভ্যানে করে স্টলে ঢুকছে নতুন আসা বই। থরে থরে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে স্টলের সেলফে ও সামনের প্রদর্শনী সারিতে।
রাজধানীর ফার্মগেটে থাকেন ডেবিট রেমা। পড়াশোনা করেন তিতুমীর কলেজে ডিগ্রিতে। পাঁচ বন্ধু মিলে মেলায় ঘুরতে এসেছেন। বাঙালি নন তারা, গারো। স্থায়ী বাস ময়মনসিংহে। ডেবিটের সঙ্গী শিলশির খকসি, লিপি দিও, হিয়া দিও ও শিল্পী চিসিম।
মেলার একাংশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরতে ঘুরতে তারা বাংলানিউজকে জানান, এবার যে বইগুলো নতুন এসেছে তাই কিনবেন। ভালো লাগলে বই কিনতে দ্বিধা নেই কোনো।
লিপি জানান, তিনি উপন্যাস পড়তে পছন্দ করেন। তবে সেটি রোমাঞ্চের হলে বেশি ভালো। আজই তো প্রথম আসা, বই যে কেনাই হবে তা নয়। পরে আরও অনেকবার আসা হবে, তখন বই কিনবো।
হিয়া বলেন, আমার ধৈর্য কম, আমি ছোটগল্প পছন্দ করি।
তারা জানান, অমর একুশের চেতনা তাদেরও কাজ করে। যে চেতনার টানেই মেলায় ছুটে আসা, আবার আসবেন বলেও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সুমন আহমেদ ও সজল চন্দ্র, দুই বন্ধু মিলে মেলায় ঘুরছিলেন। মেলায় ঢোকার পর কয়েকটি সেলফি তোলেন তারা। এরপর বাংলা একাডেমির স্টলে গিয়ে অভিধান দেখতে শুরু করেন। কথা বলে জানা গেলো, আরও দুই/তিনজন বন্ধু আসবেন, তাদের জন্য অপেক্ষা করছেন।
অভিধান নেবেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে সুমন বলেন, বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত কিছু সিরিয়াস বই দেখলাম। অভিধান নেবো বলেই নেড়েচেড়ে দেখলাম।
এদিকে মেলার শুরুর পর কথা হলো প্রগতি প্রকাশনীর প্রকাশক আসরার মাসুদের সঙ্গে। কর্মদিবসে কেমন বিক্রির প্রত্যাশা আজ, এর জবাবে তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে বই সংগ্রহের তাড়া দেখতে পাচ্ছি। ফলে তাদের অনেকেই খালি হাতে ফিরছেন না। দলবেধে বন্ধুরা এলে অন্তত একটি করে বই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। যা খুব ভালো ব্যাপার।
তিনি বলেন, মেলা জমতে শুরু করেছে। আজ রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হলেও মানুষের উপস্থিতি ও বেচাবিক্রি কম হবে না বলে আশা করছি। সন্ধ্যায় অফিস শেষে লোকসমাগম আরও বাড়বে।
এদিন মিরপুর পুলিশ ক্যাম্প থেকে মেলার ডিউটি’তে এসেছেন কনস্টেবল ইসমাইল। দায়িত্ব মেলার গেটে। সেখানে তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানালেন, দুপুর ২টায় মেলা প্রাঙ্গণে ডিউটি সিফট পরিবর্তন হয়। তিন সিফটে ডিউটি। মিরপুর থেকে আমাদের পুলিশ বাস ছাড়ে দুপুর সাড়ে ১২টায়। ডিউটি শেষ হয় রাত ১১টার দিকে।
বইমেলায় দায়িত্ব পালন করতে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি যমুনা পাড়ের ছেলে। বাড়ি টাঙ্গাইল। শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের জেলার সুনাম আছে। আর আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে বই পড়তে ভালোবাসি। সব মিলিয়ে খুব আনন্দে ডিউটি করছি। এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি মেলায় ডিউটি পড়েছিল আমার। সেবার একটি বই কিনেছিলাম। অবিবাহিত মানুষ, মেসে বই পড়ে সময় কাটাই।
শুক্র-শনি দু’দিন সরকারি ছুটিতে জমজমাট হয়ে ওঠা মেলায় কর্ম দিবসে স্বাভাবিক ভিড় দেখা যাচ্ছে জানিয়ে শিশু সাহিত্যিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আলী ইমাম বলেন, গত দু’দিনের লোক সমাগম আমাদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক। তবে আজ অতোটা ভিড় হবে না, এটাই স্বাভাবিক।
তিনি আরও বলেন, আমি বহু দেশের বইমেলা ঘুরেছি। সঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থার সভাপতির বক্তব্য উদ্ধৃতি দিয়ে বলছি, বাংলাদেশের মতো কোনো দেশের বইমেলায় প্রতিদিন এতো জনসমাগম হয় না। আমরা একত্রে মিলিত হতে, গল্প-গুজবে মাততে ভালোবাসি। এই মেলাই আমাদের সে সুযোগ করে দেয়।
** গ্রন্থমেলায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৬
আইএ/আরএম