বইমেলা থেকে: অমর একুশে গ্রন্থমেলার অষ্টম দিন সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টা ৪৫ মিনিট। বইমেলার দরজা খুলতে তখনো ১৫ মিনিট বাকি।
এবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৫টি প্যাভিলিয়নসহ ৩৭৬টি স্টলের মধ্যে ২৭৬টি স্টলের ঠাঁই হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানাংশে। দেশের অভিজাত ও প্রসিদ্ধ প্রকাশনী সংস্থার স্টল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই রয়েছে।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে কেবল মিডিয়া হাউস, শিশুতোষ প্রকাশনী ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানের স্টল রাখা হয়েছে। সুতরাং, সিরিয়াস বইয়ের ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ভিড় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হওয়ার কথা!
কিন্তু প্রতিদিন মেলার শুরুতে বাংলা একাডেমির গেটে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। আগে-ভাগে মেলায় আসা বইপ্রেমী, দর্শনার্থী ও বইয়ের ক্রেতারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢোকার আগে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ঢুঁ মেরে যান।
সোমবার বাংলা একাডেমির মূল প্রবেশ পথে কথা হয় মিরপুর থেকে মেলায় আসা মো. সৈকত রহমানের সঙ্গে।
পঞ্চাশোর্ধ্ব সৈকত রহমান গত তিরিশ বছর ধরে নিয়মিত মেলায় আসছেন। তার ভাষায়- মেলা বলতে এখনো বাংলা একাডেমি চত্বরকেই বুঝি। যদিও সব বইয়ের স্টল চলে গেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারপরও মেলায় এলে একাডেমি প্রাঙ্গণে ঢুঁ মারি। এখানে না এলে মেলার আনন্দ পূর্ণতা পায় না। তবে বই কেনার জন্য অবশ্যই উদ্যানে যাবো।
তরুণ কবি গালিব রহমানের অনুভূতি আরেকটু কাব্যিক। তার ভাষায়- বাংলা একাডেমির পুকুর পাড়, নজরুল মঞ্চ, বর্ধমান হাউসের সিঁড়ি আর প্রাঙ্গলের ধূলায় লুটোপুটি না খেলে মেলায় এসে লাভ কি বলেন?
ঘড়ির কাঁটা ৩টার ঘর স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা একাডেমির মূল প্রাবেশপথ যেন আপনা-আপনিই খুলে গেলো। এতক্ষণ অপেক্ষায় থাকা নন্দনপ্রিয় মানুষগুলো একে একে সারিবদ্ধভাবে ঢুকে পড়লেন অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণাংশে।
প্রাঙ্গণের খোলা-মেলা পরিসর যেন সবার ভালো লাগার অনুষঙ্গ হয়ে উঠলো। কেউ কেউ নজরুল মঞ্চের বেদিতে উঠে বসে পড়লেন পা ঝুলিয়ে। এতক্ষণ ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে পা লেগে গেছে হয়তো।
কেউ বা ছুটলেন ভাষা শহীদদের ভাস্কর্যের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার জন্য। আর সেলফি শিকারিরা তো পুরো বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণটাকেই তাদের সেলফি স্পট বানাতে ব্যস্ত।
একাডেমির পুকুরের সিঁড়িতে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী আফসানা উম্মুল সুরভীর সঙ্গে।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান- দুই জায়গার অনুভূতি দু’রকম। একাডেমি প্রাঙ্গণে এলে বাঙালির মেধা-মনন চর্চার তীর্থস্থানের স্পর্শ পাই।
অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গেলে বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের অতীত ইতিহাস বুকের ভেতর অনুরণিত হয়।
তবে বইমেলার আনন্দটা প্রতিদিন বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণ থেকে শুরু করতে পারলেই ভালো লাগে- বলেন ইতিহাসের এ ছাত্রী।
একাডেমি প্রাঙ্গণে ঘণ্টাখানেক ঘোরা-ফেরার পর বিকেল ৪টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাচ্ছিলেন রামপুরা থেকে মেলায় আসা মো. সারোয়ার হোসেন।
পেশায় শিক্ষক সারোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বই মেলা যখন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সীমাবদ্ধ ছিল, তখন মেলায় ঢোকার জন্য এক-দেড় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কোনো ক্লান্তি বা অস্বস্তিবোধ করতাম না। কারণ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের যে টান, তা উপেক্ষা করার মতো ছিলো না।
এখন মেলা দুই ভাগ হয়ে গেছে। তারপরও যতবার মেলায় আসি, আগে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ঢুকি। পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাই, বই কিনি, বাসায় ফিরি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৬
এজেড/এএ