বইমেলা থেকে: পাশ থেকে দেখলে নির্ঘাত মনে হবে বিশ্ববিখ্যাত কোনো লেখকের কালজয়ী একটি বইয়ের রেপ্লিকা অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানাংশের মাঝমাঠে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে।
আবার সামনে থেকে দেখলে মনে হবে বইমেলার সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য দৈত্যাকৃতির একটি বই অর্ধখোলা অবস্থায় দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে; যার পাতাগুলো দুলছে বাতাসে।
এভাবে মানুষের দৃষ্টি ও চিত্তে ভ্রম সৃষ্টির সবগুলো উপযোগের সমন্বয়ে এবারের বইমেলায় প্যাভিলিয়ন তৈরি করেছে দেশের সবচেয়ে অভিজাত ও প্রসিদ্ধ প্রকাশনা সংস্থা ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)।
এবারের বইমেলায় ৩৭৬টি স্টলের পাশাপাশি ১৫টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দিয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার কর্তৃপক্ষ বাংলা একাডেমি। এই ১৫টি প্যাভিলিয়নের মধ্যে অন্যতম একটি ইউপিএল’র প্যাভিলিয়ন।
দেশের সবচেয়ে অভিজাত ও প্রসিদ্ধ প্রকাশনা সংস্থা হিসেবে ইউপিএলের প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পাওয়া ছিলো সাধারণ ঘটনা। তবে এটি তৈরিতে যে আর্ট বা নান্দনিকতার পরিচয় ইউপিএল দিয়েছে- সেটিই সাধারণ দর্শনার্থীদের চোখে ধরা দিয়েছে অসাধারণ হয়ে।
মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানাংশে শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভিন চত্বরে নির্মিত নান্দনিকতায় ঠাসা ইউপিএলের প্যাভিলিয়ন দেখতে আদতেই অর্ধেক খোলা একটি বইয়ের মতো। যার এক পাশের কাভারে প্লাইউডের উপর খোদাই করা ইংরেজি বোল্ড লেটারে লেখা ‘ফরটি ইয়ারস অব এক্সিলেন্স ইন পাবলিশিং’। সন্ধ্যার পর যখন আলো জ্বলে ওঠে তখন সিলভার ও গোল্ডেন কালারের কম্বিনেশনে ফুটিয়ে তোলা ইংরেজি লেটারগুলো রীতিমতো চোখ ধাঁধিয়ে দেয়।
একটু দূর থেকে দেখলে মনে হয়, লেমেনেটিং অফসেট পেপারে মুদ্রিত কোনো বইয়ের প্রচ্ছদে শিরোনাম লেখা হয়েছে স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করে।
প্রতিষ্ঠার চল্লিশ বছর পেরিয়ে আসা ইউপিএল প্যাভিলিয়নের অন্য পাশটিতে রয়েছে নিজেদের প্রকাশিত বিখ্যাত বইগুলোর প্রচ্ছদের স্ক্রিনশর্ট।
ত্রিকোণ আকৃতির প্যাভিলিয়নটি নির্মাণে ব্ল্যাক, অফ হোয়াইট, সিলভার ও গোল্ডেন কালার ব্যবহার হয়েছে বেশি। প্যাভিলিয়নের অন্তত চারটি জায়াগায় সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে ইউপিএলের লোগো ও নাম।
প্যাভিলিয়নের সামনে অংশ ঠিক যেন টেবিলের ওপর খাঁড়া করে রাখা অর্ধেক খোলা একটি বই। এর প্রতিটি পাতা নির্দিষ্ট দূরত্বে ফাঁক হয়ে আছে। আর ওই ফাঁক দিয়ে ভালো করে তাকালে মনে হবে বইয়ের পেটে ঢুকে দিব্যি চলা-ফেরা করছে মানুষ। কেউ বা চুপ করে বসে আছে। কেউ বা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখছে পছন্দের বই।
মেলায় সাধারণত সন্ধ্যার একটু আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়। সেদিকটা বিবেচনায় রেখে প্যাভিলিয়নের ভেতর পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখতে প্যাভিলিয়নের ছাদে ব্যবহার করা হয়েছে সানলাইট রিফ্লেক্সিভ টিন।
আর অভ্যন্তরীণ সাজ-সজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে যথারীতি ইট, কাঠ, প্লাইউড, লোহা, প্লাস্টিক, বোর্ড, শোলা, রং, আঠা, রঙিন কাগজসহ নানা উপকরণ।
বাস্তুবিদ আসিফ ইমতিয়াজ ও ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রতিষ্ঠান ডোমাসের সত্ত্বাধিকারী মোস্তফা আমীনের নকশা ও পরিকল্পনায় নির্মিত এ প্যাভিলিয়নের ভেতরে অনায়াসে কয়েক হাজার বই থরে-বিথরে সাজিয়ে রাখার সুযোগ রয়েছে।
বিক্রয়কর্মী ও কর্মকর্তাদের বসার জন্য পাতা রয়েছে লম্বা সেক্রেটারি টেবিল। একসঙ্গে ১৫/২০ জন ক্রেতা বা দর্শনার্থী প্যাভিলিয়নের ভেতরে ঢুকে পছন্দের বই কিনতে পারবেন।
মেলার সবচেয়ে আকর্ষণীয় এ প্যাভিলিয়ন দেখতে প্রতিদিনই কৌতূহলী পাঠক, বইয়ের ক্রেতা ও দর্শানার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। মেলায় আসা তরুণ-তরুণী এমনকি বয়স্ক মানুষরাও ইউপিএলের প্যাভিলিয়নের পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলার সুযোগ হাতছাড়া করছেন না।
সোমবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) ইউপিএলের প্যাভিলিয়নের সামনে কথা হয় নরসিংদী থেকে মেলায় আসা জাহিদুল ইসলাম ও তার বন্ধু রবিউল হোসেনের সঙ্গে।
এ প্রতিবেদককে তারা বলেন, মেলায় ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ এই প্যাভিলিয়নটার সামনে এসে পড়ি। এর নান্দনিক সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে। তাই মন ভরে দেখছি আর ছবি তুলছি।
ঠিক বইয়ের অবয়বে তৈরি প্যাভিলিয়নের নান্দনিক সৌন্দর্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউপিএলের অন্যতম পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চেয়েছি পাঠক, লেখক ও দর্শানার্থীদের একেবারে বইয়ের জগতে প্রবেশ করিয়ে দিতে। সেই চিন্তা থেকেই প্যাভিলিয়নটা বই আকৃতির করা হয়েছে। আর আমাদের জীবনটা তো বইয়ের ভেতর দিয়েই কাটছে।
প্যাভিলিয়নের এই নান্দনিক উপস্থাপনের ক্রেডিট বাস্তুবিদ আসিফ ইমতিয়াজ ও ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রতিষ্ঠান ডোমাসের সত্ত্বাধিকারী মোস্তফা আমীনের বলেও স্বীকার করেন ইউপিএলের পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৬
এজেড/এএ