ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

শিশুদের সব বায়না পূরণের দিন

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৬
শিশুদের সব বায়না পূরণের দিন ছবি: দীপু মালাকার/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: বাবা-ছেলে এক পাঞ্জাবিতে। যেন বৃষ্টিস্নাত আকাশে নীলের ছটা কম হলেও জামায় তার প্রতিচ্ছবি।

সেই ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের কাছ থেকেই ছেলের বায়না সব স্টলের অন্তত একটি করে বই চাই তার। বাবাও আনন্দের সুরে বললেন, ‘তোর যা যা বই পছন্দ, সব নিস’। এই শুনে এবার মেয়ের অভিমান- ‘ভাইয়াকেই দিবা সব? আমি ভেতরে যাবোই না’।
 
কাজী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর রাজধানীর মগবাজার থেকে তার দুই ছেলে-মেয়ে ইলমান ও আরাদ্রিকাকে নিয়ে শুক্রবার (১২ ফেব্রুয়ারি) মেলায় এসেছেন। শিশুপ্রহরে ঘুরবেন-ফিরবেন, ছেলে মেয়ের বায়না অনুযায়ী কিনে দেবেন সব রকম বই।
 
জিগাতলা থেকে খন্দকার শামীম তার ছেলে তাহসিনকে নিয়ে মেলায়। তার অপেক্ষা সকাল ১১টায় প্রবেশপথ খোলার আগে থেকেই। শুধু তিনি কেন, এমন অসংখ্য মানুষই আগে থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে যান। লক্ষ্য একটাই, কখন খুলবে প্রবেশদ্বার।
 
গ্রন্থমেলার তৃতীয় শিশুপ্রহর, গুনে গুনে আর বাকি কেবলই একটি (২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ শিশুপ্রহর)। প্রথম দুই শিশুপ্রহরের চেয়ে ভিড়-জমায়েতটাও একটু বেশি দেখা যাচ্ছে আজ। মাসের মধ্যমে হওয়ায় হাতে আছে পয়সাকড়ি। তাই শিশুদের বায়নায় আজ কোনো ‘না’ নয়। আবদারের যে বই, যত বই- ‘না’ নেই কিছুতেই।
 
পরীবাগ থেকে আসা জামাল হোসেন সেন্টু জানালেন, ফেব্রুয়ারির বেতন হয়ে গেছে। হাতে অর্থ থাকতেই বাচ্চাকে বই কিনে দিতে চাই।

তিনি ক্ষোভও প্রকাশ করলেন। বলেন, বই তো দেবোই। কিন্তু কী বই? টোনাটুনি বা রূপকথা? এসব তো আমিই আমার ছেলেবেলায় পড়ে এসেছি। এখন কেন ভালো মানের শিশু সাহিত্য হচ্ছে না, এটাই আমি বুঝি না। তাহলে সন্তানদের আমি কী শেখাবো? তারা তো এ জন্যই পাঠ্য বইয়ের বাইরে শিক্ষা পাচ্ছে না।

ভালো সাহিত্যের অভাবও শিশুদের বইবিমুখের অন্যতম কারণ বলে মত দেন এই অভিভাবক।

রাতে বৃষ্টি হয়েছে। শান্ত প্রকৃতি। শিশুপ্রহরেও যেন বসন্তের ছোঁয়া। সে ছন্দে দুললো শিশুরাও।
 
এদিকে, একাডেমি প্রাঙ্গণে আগে থেকেই উপস্থিতি শিশুদের। সংগীত প্রতিযোগিতার জন্য মূলত। অন্যদিকে আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে সিসিমপুরের অনুষ্ঠান থাকায় ওপারের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু চত্বর বাদেও বাংলা একাডেমিতে সোনামনিদের কলতান ভালোই কানে আসে।
 
বই আর অনুষ্ঠানের আনন্দের পাশাপাশি কেউ কেউ মেতে ওঠে খেলায়। এক শিশুর মুখে ‘টুকি-টুকি’ শব্দ। শহীদুল্লাহ ভবনের পাশের দেয়ালের আড়ালে থাকা ছোট্ট কুকুর ছানাগুলোও এই শব্দ শুনে- একবার ফাঁক গলে মুখ বের করে, একবার মুখ লুকায়! এই দেখে জড়ো আরও কয়েকজন শিশু।
 
কোনো কোনো শিশু তো রীতিমতো হাঁস ধরার অভিযানে নেমে গেছে! পাশে দাঁড়িয়ে বাবা-মার ‘আকুতি’- এই এই বাবু-সোনা, হাঁস কামড় দেবে তো! কে শোনে কার কথা- কারণ দিনটা যে তাদেরই।

নিয়ম ভঙ্গ:
শিশুপ্রহর হলেও গ্রন্থমেলার নিয়ম ভেঙে শিশু ছাড়াও অনেকে প্রবেশ করেছেন এ সময়। অভিভাবদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রহরটি পুরোপুরি শিশুদের হলেও বড়রাও অবাধে ঢুকছেন। এদিকে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিশুপ্রহর কিনা তা জানা না থাকায় চলে আসা তাদের।
 
এ ব্যাপারে বাংলা একাডেমির পর্যবেক্ষণের দাবি সচেতন অভিভাবকদের।
 
তবে যাই হোক, শিশুদের সব বায়না পূরণের দিন আজ। তারা তো আনন্দে আত্মহারা হচ্ছেই। সোনামনিদের কাছে এই আনন্দের গুরুত্বও অনেক। হাতে হাতে বই, অনুষ্ঠান উপভোগ, খেলাধুলা আর দৌড়ে ঘাম ঝরানোর এই মজা উপভোগ কেবল শিশুপ্রহর বলেই সম্ভব।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৬
আইএ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।