ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

যে রং ছড়িয়ে গেলো সবখানে

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৬
যে রং ছড়িয়ে গেলো সবখানে ছবি: দীপু মালাকার / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: ভালোবাসার রং আসলে কোনটা? লাল, হলুদ, কমলা, বেগুনি, গোলাপি, মেরুন, ব্রাউন- নাকি অন্য কিছু? বেদনার রং নীল, শোকের রং কালো। এই দু’টি রং ছাড়া-বাকি রংগুলোকে মানব জীবনের কোনো ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে হয়তো হুবহু মেলানো কঠিন।



তবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে বাঙালির জীবনে লাল ও হলুদ রঙের আবেদন এখন প্রশ্নাতীত। এ রং দু’টি বাঙালির মন ও মনন দুলিয়ে দিয়েছে।

বিশেষ করে ঋতু বৈচিত্র্যের বাংলাদেশে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আগের দিনটা বসন্তের প্রথম দিন বা পহেলা ফালগুন হওয়ায় লাল-হলুদ বা বাসন্তী রঙের মায়াজালে জড়িয়ে পড়ছে সব বয়সী মানুষ।

অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৪তম দিন রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ছিল বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এদিন পড়ন্ত বেলায় দোয়েল চত্বর দিয়ে মেলায় প্রবেশের সময় চোখে পড়লো জাতীয় চার নেতার মাজারের দেওয়ালের ওপাশে দাঁড়িয়ে গোলাপ, গাঁদা, ডেইজি, জিপসি ফুল দিয়ে তৈরি রিং বিক্রি করছেন বেশ কয়েকজন ফুল বিক্রেতা।

মেলায় অন্য বস্তু-সামগ্রী বেচা-বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় মাজারের দেওয়াল টপকিয়ে রাস্তা বা ফুটপথে আসার সুযোগ পায়নি ফুল বিক্রেতারা। কিন্তু বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আসা বইপ্রেমী ও নন্দন প্রিয় মানুষ দেওয়ালের এপাশে দাঁড়িয়েই ফুলের টায়রা কিনে মাথায় এবং মালা কিনে খোঁপায় ও গলায় পরছে।

তরুণ-তরুণীরা তো বটেই বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে বইয়ের টানে মেলায় আসা প্রবীণরাও জড়িয়ে পড়েছেন ফুলের প্রেমে।

বিকেল ৫ টার দিকে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ দেখা হয় খুরশিদা বেগম এবং হামিদা বানুর সঙ্গে। পঞ্চ‍াশোর্ধ্ব এই দুই নারী তরুণীদের মতোই মাথায় পরেছেন গোলাপ-গাঁদা-জিপসি-ডেইজি ফুলের টায়রা।

জিজ্ঞেস করতেই বললেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে মেলায় এসে আমরাও তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছি। মাথায় টায়রা পরে ফিরে গেছি হারানো দিনগুলোতে। এখন যাবো বই কিনতে।

সোহরাওয়ারর্দী উদ্যানে তাম্রলিপি ও অন্বেষা প্রকাশনীর মাঝের ফাঁকা জায়গা দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন কুষ্টিয়া থেকে মেলায় আসা যমজ দুই বোন তানিস সুলতানা শোভা ও তানিয়া সুলতানা বিভা।

স্থানীয় একটি কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্রী শোভা-বিভা উঠেছেন মিরপুর বড় বোনের বাসায়। সেখান থেকে বিকেলে মেলায় এসেই ফুলের টায়রা কিনে মাথা পরে স্টলে স্টলে ঘুরছেন বই কেনার জন্য।

বাংলানিউজকে শোভা-বিভা বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বইমেলার আনন্দ একসঙ্গে উপভোগের জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটাকে বেছে নিয়েছি। দারুণ লাগছে মেলায় এসে। কিছু বই কিনেছি। আরো কিনবো।

রোববার বেশিরভাগ ক্রেতা ও দর্শনার্থী খুরশিদা-হামিদা ও শোভা-বিভার মত বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বইমেলার আনন্দ একসঙ্গে উপভোগের জন্য মেলায় এসেছেন। ফলে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বইমেলার ১৪তম দিন মিলে-মিশে একাকার হয়ে গেছে।

এদিকে মেলায় অংশ নেওয়া প্রসিদ্ধ প্রকাশনীগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেলায় আসা দর্শনার্থী ও পাঠক অনাহুত ভিড় করছেন তা নয়। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। এক কথায় জমে উঠেছে বইমেলা।

ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের সেলস প্রমোশন অফিসার ফয়সাল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, যেমনটি আশা করেছিলাম, বিক্রি তেমনটিই হচ্ছে। গতকালও বিক্রি-বাট্টা ভালো। আজও।

অন্যপ্রকাশের সহকারী ম্যানেজার তুষার খান তুহিন বাংলানিউজকে বলেন, বিক্রি আশানুরুপ। মানুষ একদিকে যেমন স্বত‍ঃস্ফূর্তভাবে মেলায় আসছেন, কিনছেনও।

সন্ধ্যা ৬টায় সোহরাওরার্দী উদ্যান থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ঢোকার সময়ও দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা য়ায়। ফাগুনের দ্বিতীয় দিন বিশ্ব ভালোবাসা
দিবসের গোধূলি বেলায় উদ্যান থেকে একাডেমি প্রাঙ্গণ ও একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সর্বত্র ছিলো উপচে পড়া ভিড়।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয় ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল জানান, ঠিক যেভাবে বিক্রি হওয়ার কথা ছিল ততটা হয়নি। তবে বিক্রি খারাপ বলা যাবে না।

অনন্যা প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নে বসে নিজের প্রকাশিত বইয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন।

তিনি জানালেন, তার নতুন বই ‘রেশমি’ ও ‘ছোট সবুজ মানুষ’-এর পাশাপাশি তার লেখা প্রেমের উপন্যাস ‘কেমন তোমার ভালোবাসা’, ‘প্রিয় লিলিয়ান’, ‘শ্রাবণ জোছনায়’, ‘চাই’, ‘পঞ্চাশ প্রেমের গল্প’ বইগুলো ভালো বিক্রি হচ্ছে।

নিজের প্রেমের উপন্যাস লেখা নিয়ে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, একটা সময় সবাই আমাকে রোমান্টিক উপন্যাসের লেখক হিসেবেই চিনতেন। ‘নূরজাহান’ ও এমনি আরও কিছু বই প্রকাশিত হওয়ার পর সেই রেশটা কিছুটা কমেছে। তবে আমি এখনও প্রেমের উপন্যাস লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। প্রেম ও ভালোবাসাকে পাঠকের হৃদয়ে আমি পবিত্র একটি জায়গা হিসেবে তৈরি করতে চেয়েছি।

ডিএমপি কমিশনারের মেলা দর্শন
রোববার সন্ধ্যায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিদর্শনে আসেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। এসময় তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন। মেলায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মেলার সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে কথা বলেন।

‘একাত্তরের শহীদ সবুর’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব
বলাকা থেকে প্রকাশিত হয়েছে লেখক রশীদ এনামের ‘একাত্তরের শহীদ সবুর’ বইটি। রোববার বিকেলে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী সবিহ-উল-আলম, ছড়াকার সুজন বড়ুয়া, রহীম শাহ, শরীফা বুলবুল প্রমুখ।

রোববারের আয়োজন
বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশে রবীন্দ্রচর্চা: অতীত থেকে বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, অধ্যাপক করুণাময় গোস্বামী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক গোলাম মুরশিদ।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম, সায়েরা হাবীব এবং এ এস এম সামিউল ইসলাম। নৃত্য পরিবেশন করেন ওয়ার্দা রিহাব ও তার দল। এছাড়াও সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী খুরশিদ আলম, মাসুদা নার্গিস আনাম, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সি, শরণ বড়ুয়া, স্বর্ণম, দেবাশীষ বসাক, নাহিদ নাজিয়া ও সাহিনা।

নতুন বই
বাংলা একাডেমির তথ্যমতে, অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৪তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ৯৩টি। উল্লেখযোগ্য নতুন বইয়ের মধ্যে রয়েছে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের ‘সেরা দশ গল্প’, একই প্রকাশনী থেকে নাসরীন জাহানের ‘সেরা দশ গল্প’, রোদেলা প্রকাশনী থেকে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ‘ইংরেজি সাহিত্যের কয়েকটি দিক’, আব্দুল মান্নান সৈয়দের ‘নজরুল ইসলাম : কবি ও কবিতা’, ঐতিহ্য থেকে মুহম্মদ জালালউদ্দীন বিশ্বাস অনূদিত ‘বাবরনামা’, কায়জার চৌধুরীর ‘ভুলু সর্দারের চিঠি’, তুষার আব্দুল্লাহ ‘তোমাকে পাঠ করিব’, বাতিঘর থেকে প্রকাশিত স্বরূপ সুপান্থের কাব্যগ্রন্থ ‘জলকামানের বই’, চৈতন্য থেকে প্রকাশিত রিমঝিম আহমেদের ‘লিলিথের ডানা’, বলাকা থেকে প্রকাশিত জামাল উদ্দিনের ‘বাংলা আমার মা’, শ্রী চিন্ময়ের ‘প্রেমালোক’, শাশ্বত টিটুর ‘মেঘের অনেক রং’ প্রভৃতি।

সোমবারের আয়োজন
সোমবার মেলার ১৫তম দিনে মেলার দুয়ার খুলবে যথারীতি বেলা ৩টায়। চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত।
বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলাদেশে জীবনানন্দ দাশ চর্চা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ। আলোচনায় অংশ নেবেন কবি রুবী রহমান, কবি মুহাম্মদ সামাদ, পশ্চিমবঙ্গের জীবনানন্দ গবেষক প্রভাত কুমার দাস, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী ও কবি পিয়াস মজিদ। সভাপতিত্ব করবেন বিশিষ্ট লেখক আহমদ রফিক। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৬
এজেড/এডিএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।