ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

বসন্তের উপহার বই

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
বসন্তের উপহার বই ছবি: দীপু মালাকার / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: ডানা মেলে উড়ে আসা কোকিল তখন জায়গা করে নিয়েছে গাছের ডালে। সূর্যের কিরণ ছাপিয়ে বেলা যায় যায়।

হঠাৎই শোনা গেলো কোকিলের ডাক। মূলত বইমেলায় কয়েক দিন ধরেই এই পাখিটির কলতান শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। হয়তো একেই বলে বসন্তের মিষ্টি সময়!

মিষ্টি এ সময়ে প্রিয়জনকে দেওয়ার জন্য সেরা উপহার বই। ঘুরে বেড়ানোর সেরা স্থান বইমেলা। এমনকি সুন্দর একটি বিকেল ও সন্ধ্যার প্রত্যাশায় কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যও এই মেলাই। প্রাণের মেলায় প্রাণের একটা টান আছে না! সে টানেই বুঝি মেলার ১৫তম দিন সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ছুটে এলেন সুচিত্রা রানী। রাজশাহীর বিনোদপুরে অবস্থিত মির্জাপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষিকা তিনি। কথা বলে জানা গেলো, বইমেলার সঙ্গে তার আবেগ জড়িত।

সুচিত্রা রানী বাংলানিউজকে বললেন, সেই ৯০ এর দশক থেকে মেলায় আসি। তখনও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হইনি, সেই থেকেই বইমেলার সঙ্গে আমার নিবিড় একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে ১৯৯৬ সালে ভর্তি হলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। তখন তো আরও বেশি বেশি আসতাম মেলায়। ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে বন্ধুরা মিলে দলবেঁধে চলে আসা হতো। সে সময়কার মেলার কতো স্মৃতি যে আমার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তা বোঝানো যাবে না।

তিনি বলেন, এখন ছেলেকে নিয়ে এসেছি। সুদূর রাজশাহী থেকে মেলায় আসা। অনেকগুলো বইয়ের তালিকা করা হয়েছে, তা সংগ্রহের জন্য মেলার বিকল্প দেখি না।

সুচিত্রার মতে, লাইব্রেরি বা স্টোর হাউজ থেকে বই কেনার চেয়ে বইমেলায় ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করা আনন্দের। আর এই আনন্দ পূরণ ও ছেলে সুদীপ্ত পালকে মেলা ঘোরানোর উদ্দেশ্যে ছুটে আসা ঢাকায়। সঙ্গে নিয়ে এসেছি ভাগ্নি জয়া সরকারকে।

জয়া বাংলানিউজকে বলেন, খালা (সুচিত্রা) বই উপহার দেবেন বলে আমাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। আমিও নিজের পয়সায় বই কিনবো। রাজশাহীতে কাছের কিছু বন্ধুবান্ধব আছে, তাদের বই উপহার দেবো।

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম ব্যক্তিত্ব সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষায় সুর মিলিয়ে বলতে ইচ্ছে জাগে, ‘বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয় না’। তাই তো কাউকে বই উপহার দিতে নেই কোনো অর্থচিন্তা, জানাচ্ছিলেন জয়া।

অর্থ নয়, শুধুই মনের আনন্দে বই কেনা। সঙ্গে বাড়তি পাওয়া ঘোরাঘুরি, আড্ডা ও মজার সন্ধান। এমনই একদল আড্ডাবাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ। সংখ্যায় ছয়জন; এসেছেন ঢাকার পাশের জেলা নারায়ণগঞ্জ থেকে। কলেজের পোশাক গায়ে। তাতে লেখা তোলারাম সরকারি কলেজ। মাহবুব, শামীম, নিয়ামুল, রাজু, মোস্তাকিম ও আল-আমিন তাদের নাম। তারা বাংলানিউজকে জানালেন, আড্ডা দেওয়া ও সারাটা বিকেল-সন্ধ্যা ঘুরে বেড়ানোর জন্যই মেলায় আসা।

মাহবুব বলেন, আমরা সবাই কলেজের ছাত্র। পড়ছি উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষে। কলেজের কয়েকজন বন্ধু মিলে চলে এলাম। এখন চাঁদা উঠাবো, তারপর সব টাকা এক সঙ্গে করে বই কিনবো। এখানে কে কম আর কে বেশি দিলো- তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এটিকে বলতে পারেন, বন্ধুর জন্য বন্ধুর বই উপহার।

সচেতন পাঠকের কাছে বই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। আপনি কতো টাকার বই কিনে দিলেন তা বিবেচ্য নয়। বরং কতো ভালো বই উপহার দিলেন সেটাই বিবেচ্য। আর এজন্যই বলা হয়, বই হচ্ছে অমূল্য উপহার। বই নিজের জন্য যেমন, অন্যকে উপহারের জন্যও।

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থার সভাপতি ও আগামী প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী ওসমান গণি বাংলানিউজকে বলেন, বইয়ের প্রতি মানুষের বেশি অনুরাগ প্রকাশ পায় ফেব্রুয়ারি এলে। মানুষ আসলে বই ভালোবাসে। বই পড়তে পছন্দ করে। সেই চাহিদা থেকে এ বছর যেমন অনেক নতুন বই প্রকাশ পেয়েছে, তেমনি পাঠক অনেক বই কিনছে। আর কাউকে উপহার দেওয়ার জন্য বইয়ের চেয়ে শ্রেষ্ঠ আর কিছু হতে পারে না।

তিনি বলেন, এবার মেলার পরিসর অনেক বড়। আমরা অভিজ্ঞতা থেকে শিখবো। আগামীতে আরও বড় হবে মেলা। তখন দেখবেন, মানুষ আরও বেশি বই কিনছে।

সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ১৫তম দিনে মেলার দুয়ার খোলে যথারীতি বিকেল ৩টায়। চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। ইতিমধ্যে বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘বাংলাদেশে জীবনানন্দ দাশ চর্চা’ বিষয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে বক্তারা সাহিত্য অনুরাগীদের জীবনানন্দকে আরও গভীরভাবে জানা-বোঝার আহ্বান জানান।

এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ। আলোচনায় অংশ নেন- কবি রুবী রহমান, মুহাম্মদ সামাদ, পশ্চিমবঙ্গের জীবনানন্দ গবেষক প্রভাত কুমার দাস, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী এবং সাহিত্যিক ও বাংলা একাডেমি কর্মকর্তা পিয়াস মজিদ।

সভাপতিত্ব করেছেন বিশিষ্ট লেখক আহমদ রফিক। আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
আইএ

** মেলার শুরুতেই সর্পিল লাইন, স্টলকর্মীদের মুখে হাসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।