ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

কাগজের বইয়ের মেলায় ই-বুকের হাওয়া

আদিত্য আরাফাত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৬
কাগজের বইয়ের মেলায় ই-বুকের হাওয়া ছবি : দীপু মালাকার / বাংলানিউজটোয়েটিফোর.কম

বইমেলা থেকে: তাসনুভা মারজান। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়ছেন।

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এসেছিলেন বই কিনতে। ফিরে গেলেন বই ডাউনলোড করে।

তাসনুভার সঙ্গে তার যেসব বন্ধু এসেছেন তারাও মোবাইলে অ্যাপসের মাধ্যমে নিয়ে গিলেন পছন্দের কয়েকটি বই। বেশির ভাগ বই ফ্রি’তে ডাউনলোড করলেও পছন্দের কয়েকটি বই অল্প খরচে ডাউনলোড করেছেন।

মূলত মুদ্রিত বইয়ের মেলা হলেও দিন দিন ই-বুকের প্রভাবও বাড়ছে। কাগজের বই নিয়ে পাঠকে মধ্যে আবেগ কাজ করলেও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও বইছে ই বুকের হাওয়া। বইমেলাতেও ই-বুক পড়বার সুবিধা নিয়ে হাজির হয়েছে বেশ কিছু স্টল। তরুণ-তরুণীদেরই বেশি আগ্রহ সেসব স্টল ঘিরে।

সারবিশ্বের মতো এ দেশেও জনপ্রিয় হচ্ছে ই-বুকের ওয়েবসাইট। যার মাধ্যমে স্মার্টফোন, ট্যাবসহ ল্যাপটপ ডেস্কটপ কম্পিউটারে পড়তে পারছেন প্রিয় লেখকদের প্রিয় বই। মেলার একাডেমি চত্বরে থাকা এসব ই-বুকের স্টলে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে পাঠক সংগ্রহ করার পাশাপাশি তাদের সেবা সম্পর্কে জানাচ্ছেন। এসব সাইটে গিয়ে বই পড়ার পাশাপাশি ডাউনলোডও করা যায়।

মেলায় আসা বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, মোবাইলেই থাকি কাজের অবসরে। নয়তো ল্যাপটপে। অ্যাপস ডাউনলোড করেই বই পড়ি এখন। মেলায় এসেছি ই-বুক প্রতিষ্ঠান কে কি সুবিধা দিচ্ছে তা দেখতে। তার মতে, ঘরে বসেই যদি বই পাওয়ার সুবিধা থাকে তাহলে তো শুধু বই কেনার দরকার পড়ে না।

ই-বুকের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোবাইল ফোনে অ্যাপস ডাউনলোড করে এখন বেশিরভাগ বই বিনামূল্যে পড়বার সুযোগ থাকছে। তবে কিছু বিশেষ গ্রন্থ রয়েছে যা অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে পড়া যাবে।

বইমেলায় ‘সেইবই’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ফোনে বই পড়বার অ্যাপস নিয়ে হাজির হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৯ হাজার পাঠক তাদের তালিকাভুক্ত। এই বই ভাণ্ডারে অধিকাংশ বই বিনামূল্যে পড়া যাবে। তবে কিছু বই টাকা দিয়ে পড়তে হবে।

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের বেঙ্গল পাবলিকেশন্সেও রয়েছে ই-বুক সেবা। বইমেলায় এখানে রেজিস্ট্রেশন করলে রয়েছে নানা রকমের লটারিতে পুরস্কার জেতার সুযোগ।
‘সেইবই’ স্টলের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ দেব জানান, স্টলে তারা গুগল প্লে-স্টোর থেকে অ্যাপস ডাউনলোড ও বিনামূল্যে নিবন্ধন করিয়ে দিচ্ছেন। ডাউনলোড ও নিবন্ধন করলে ২৫০টির বেশি ক্লাসিক বই ফ্রিতে পাচ্ছেন গ্রাহকরা। এরপর অ্যাপসে থাকা দেড়শর বেশি বই পড়তে হলে টাকা পরিশোধ করতে হবে।

মেলা ঘিরে বড় পরিসরে ‘সেই বই’ এর ই-বুকের যাত্রা শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে আমরা এটা চালু করেছি। এই অ্যাপস ইতোমধ্যে ১০
হাজারের বেশি ডাউনলোড এবং ৫০ হাজারের বেশি নিবন্ধন হয়েছে। মেলার সময়ে নিবন্ধন হয়েছে ছয় হাজারের মতো।

এদিকে, শুধু মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের গ্রাহকদের জন্য রয়েছে ‘বইঘর’সেবা। গুগল স্টোর থেকে ই-বুক অ্যাপ ডাউনলোড করে বাংলালিংক ফোন গ্রাহকরা জনপ্রিয় লেখকদের বই কম খরচে পড়ার সুযোগ পাবেন। এসব প্রতিষ্ঠানের ওয়েব লিংক sheiboi.com, www.bengalboi.com.
‘বইঘর’ শিরোনামের স্টলটি রয়েছে মেলার একাডেমি চত্বরে। বইঘর অ্যাপসে রয়েছে হাজারো বই। বইপ্রেমীরা সাবস্ক্রাইব করে জনপ্রিয় সব লেখকদের বই পড়তে পারবেন। ‘চড়ুই ডট কম’ নামেরও একটি ই-বুক সাইট রয়েছে মেলায়। তারা নিয়ে এসেছে একটি অ্যাপস। যাতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাস, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, সুকান্ত ভট্টাচার্য সহ জনপ্রিয় সব লেখকদের বইয়ের অ্যাপস পাওয়া যাবে নামমাত্র মূল্যে।

মেলার অংশ নেওয়া ছাড়াও আরো রয়েছে ‘একুশ ই-বুক’ নামে একটি ই বুক সাইট। এটি মূলত ওকে মোবাইল ফোনের একুশে ট্যাবের একটি অ্যাপস। এতে বাংলাভাষাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার বই রয়েছে। এমনিভাবে আরো ই-বুকের ওয়েব অ্যাড্রেস হচ্ছে আমার বই ডট কম, অল বুকস, দেশি বই, বাংলা পিডিএফ ডট নেট, ইবুক ডট কম ডট বিডি, ফিরে দেখা ডট কমসহ অনেকগুলো ই-বুকের সাইট।

১৭তম দিনের মেলা
কর্মদিবস হলেও বুধবার অমর একুশে গ্রন্থমেলা মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিলো। সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান দু-প্রাঙ্গণ লেখক-পাঠকের পদচারণায় মুখরিত হয়। তবে এদিন বইমেলায় ব-দ্বীপ প্রকাশনী বন্ধ হওয়ার বিষয়টি ঘুরে ফিরে মেলাজুড়ে আলোচনায় আসে। ‘ইসলাম বিতর্ক’ নামে একটি বই প্রকাশের কারণে ধর্মকে অবমাননার অভিযোগে বাংলা একাডেমি গত সোমবার প্রকাশনীটি বন্ধ করে দেয়।

বুধবারের নতুন বই
একাডেমির তথ্যানুয়ায়ী, বুধবার প্রকাশিত হয়েছে ১৪০টি বই। এরমধ্যে গল্প ১৮, উপন্যাস ১৯, প্রবন্ধ ৬, কবিতা ৪৭, গবেষণা ১, ছড়া ৩, শিশু সাহিত্য ৫, জীবনী ৩, রচনাবলী ১, মুক্তিযুদ্ধ ১২, বিজ্ঞান ৩, ভ্রমণ ৩, ইতিহাস ৩, চিকিৎসা স্বাস্থ্য ১, অনুবাদ ১, ও অন্যান্য বিষয়ের উপর ১৪টি।

এর মধ্যে রয়েছে নাসির আহমেদের কিশোর প্রেমের কবিতার বই ’মেঘের দেশে তারার দেশ’ (প্রকাশনা: মাতৃভাষা প্রকাশনী; পরিবেশক: অনন্যা), ড. মোহাম্মদ হান্নান ‘বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস’, ড. চিত্তরঞ্জন দাসের ‘ভিক্টোরিয়া থেকে নায়াগ্রা: জানা অজানার পথে পথে’ (আগামী), রকিব হাসানের ‘কিশোর মুসা রবিন সমগ্র ১’ (শিকড়), পূরবী বসুর ‘বাংলার স্মরণীয় নারী’ (অন্যপ্রকাশ), রশীদ হায়দারের ‘নষ্ট জোছনায় এ কোন অরণ্য’ (নন্দিতা প্রকাশ), ড. মাহবুবুল হকের ‘ভাষার লড়াই থেকে মুক্তিযুদ্ধ’ (অনুপম), নির্মলেন্দু গুনের ‘কবিতা, অমীমাংসিত রমনী’ (জয়তী)।
 
মেলামঞ্চের আয়োজন
বিকেলে মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘শওকত ওসমান জন্মশতবার্ষিকী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক শান্তনু কায়সার। আলোচনায় অংশ নেন কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবের, কথাশিল্পী জাকির তালুকদার, লেখক নুরুল করিম নাসিম এবং জয়দুল হোসেন। সভাপতিত্ব করেন কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন।

আলোচকরা বলেন, শওকত ওসমানকে পাঠের মধ্য দিয়ে বস্তুত তার সময়কেই পাঠ করা হয়। কারণ তার সাহিত্যকর্মে দেশভাগ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, উদ্বাস্তু সমস্যা, দারিদ্র্য, শোষণ ইত্যাদির রেখাচিত্র ফুটে উঠেছে। মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ শওকত ওসমানের জন্য এক চিরপ্রেরণার বিষয় ছিল। তাই আমরা তার কাছ থেকে পেয়েছি বাহান্ন ও একাত্তরের পটভূমিতে বেশ কিছু শিল্পঋদ্ধ গল্প ও উপন্যাস।

বাউল গানে সন্ধ্যা নামে
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন মো. আনোয়ার হোসেনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আরশিনগর বাউল সংঘ’ এবং নৃত্য পরিবেশন করেন মো. মাসুম হুসাইনের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘পরম্পরা নৃত্যালয়’। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতী, হাসান মাহমুদ, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, অনিমা মুক্তি গোমেজ, টুটুল বাউল, সেলিনা আলম, আবুল কালাম আজাদ, আফরোজা খান মিতা, সাজেদা ইসলাম ফাতেমী, শান্তা সরকার, মো. মুরাদ হোসেন এবং মোহাম্মদ মারুফ হোসেন।
১৮তম দিনের আয়োজন

যথারীতি বৃহস্পতিবার বইমেলার দুয়ার খুলবে বিকেল ৩টায়। চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে আহসান হাবীব জন্মশতবর্ষিকী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন তারেক রেজা। আলোচনায় অংশ নেবেন হাবীবুল্লাহ সিরাজী, অসীম সাহা, নাসির আহমেদ এবং অনু হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন বিশিষ্ট লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ। সন্ধ্যায় যথারীতি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকছেই।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৬
এডিএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।