ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

অমর একুশে গ্রন্থমেলা

আজ গল্প আড্ডা ঘোরাঘুরি

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৭
আজ গল্প আড্ডা ঘোরাঘুরি অমর একুশে গ্রন্থমেলা আজ ছিলো গল্প আড্ডা ঘোরাঘুরির। ছবি: সুমন শেখ

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: মেলার ৫ম দিন রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) ছিলো সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস। সুতরাং পূর্ব নির্ধারিত সময় বিকেল ৩টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশদ্বার খোলার পর দর্শনার্থী ও ক্রেতার দীর্ঘ লাইন ছিলো না।

মাঘের শেষ সপ্তাহের বিকেল বেলার সূর্যটা লালচে রঙ গায়ে মেখে পাশ্চিম আকাশে অস্ত যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। গরমের মৃদুস্পর্শ জানান দিচ্ছে ফাগুন আসতে আর বেশি দেড়ি নেই।

দুপুর বেলার সূর্যের তীর্যক রশ্মি অনেককেই বসিয়ে দিয়েছে গাছের ছায়ায়।

মেলার পঞ্চম দিনেও কী এক মোহনীয় টানে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণটাই প্রথমে বেছে নেওয়া। আর্চওয়ে পার হয়ে নজরুল মঞ্চের পাশ দিয়ে বর্ধমান হাউসের সিঁড়ির কাছে পৌঁছাতেই চোখে পড়লো দুই বন্ধু কোলাকুলি করছেন। এক সময় একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন তারা, এখন আলাদা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। দীর্ঘ দিন দেখা-সাক্ষাৎ নেই।

মেলার পঞ্চম দিন পূর্ব যোগাযোগ ছাড়াই একাডেমি প্রাঙ্গণে এসে দেখা দুই বন্ধুর। আর পায় কে! বর্ধমান হাউসের সিঁড়ির সামনে কোলা-কুলি পর্ব শেষ করে বাংলা একাডেমির নতুন ভবন ঘেঁষা পুকুর পাড়ের সিঁড়িতে গিয়ে বসলেন। মেতে উঠলেন গল্প ও আড্ডায়।

বলছিলাম মিনহাজ আবেদীন সোহেল ও তার বন্ধু সৈকত সিকদার পান্নার কথা। দু’জনই এক সময় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে চাকরি করতেন। এখন একজন ব্যাংকে আরেকজন একটি বিদেশি এনজিও-তে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা এই দুই বন্ধুকে দীর্ঘ দিন পর একখানে করেছে।

বাংলানিউজকে মিনহাজ আবেদীন সোহেল বলেন, কোনো রকম যোগাযোগ ছাড়াই মেলায় এসে বন্ধুকে পেয়ে দারুন সময় কাটলো। আজকের জন্য কেনা-কাটা মুখ্য নয়। কাজ শেষে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। মন চাইলো একটু ঢুঁ মেরে যেতে, ঢুকে পড়লাম। পেয়ে গেলাম বন্ধুকে।

বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাম গাছের নিচে দেখা মিললো আরো চারজনের। সাথী ইসলাম, জেসমিন আখতার, সঞ্জয় ও পিয়াস বড়ুয়া।

ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এই চার বন্ধুও মেলায় এসেছেন স্রেফ আড্ডা দিতে। বই কেনা বা দেখার বালাই নেই। মাঘের উষ্ণ বিকেলটা মেলায় কাটানোর জন্যই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসা।
 
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খোসগল্পে মাতোয়ারা এই চার বন্ধুর সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। তারা বলেন, বইমেলা তো কেবল বই বিক্রি আর কেনার জন্য নয়। এটা প্রাণের মেলবন্ধনের জায়গা। তাই প্রায় প্রতিদিনই মেলায় আসি আড্ডা দিতে। শেষের দিকে কিছু বই কিনবো।

শুধু সাধারণ মানুষ নয়, অমর একুশে গ্রন্থমেলা তো লেখক, শিল্পী, কবি সাহিত্যিকদের জন্য আড্ডাস্থল। মেলার পঞ্চম দিন বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আড্ডা দিতে আসেন প্রখ্যাত ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, কবি রেজাউদ্দীন স্ট্যালিনসহ বেশ ক’জন প্রথিতযশা লেখক, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক।

মূলত, মেলার পঞ্চম দিন ছিলো আড্ডা, গল্প আর ঘোরাঘুরির। তবে ঢাকার বাইরে থেকে যারা মেলায় আসছেন এবং এ বছর আর আসা হবে না, তারা ঠিকই বই কিনে ফিরেছেন।

নরসিংদী থেকে মেলায় আসা তোয়েবুর রহমান নিজের এবং সন্তানদের জন্য এক ব্যাগ বই কিনেছেন। নিজের জন্য গল্প-প্রবন্ধ আর নবম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ের জন্য কিনেছেন সায়েন্স ফিকশন। শিশু সন্তানের জন্য কিনেছেন ‘রঙিন ঠাকুরমার ঝুলি’।

তোয়েবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকায় এসেছিলাম অন্য কাজে। আসার আগে মেয়ে বলেছে মেলা থেকে বই কিনতে। তার জন্য কিনলে ছোট জনের জন্যও কিনতে হবে। নিজের জন্যও কিনে নিয়ে যাচ্ছি।

মেলার পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, মনে হচ্ছে সব ঠিক আছে। তবে সাজসজ্জা একটু কম হয়েছে অন্য বারের তুলনায়।

অমর একুশে গ্রন্থমেলার পঞ্চম দিন নতুন বই এসেছে ২৭টি। মোড়ক উন্মোচন হয়েছে ৭টি বইয়ের। রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে মেলা শেষ হয় রাত সাড়ে ৮ টায়।

এদিন বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে আহসান হাবীবের জন্ম শতবার্ষিকী নিয়ে আলোচনা হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি তুষার দাস। আলোচনায় অংশ নেন ড. অনুপ হোসেন ও ড. তারেক রেজা। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক জুলফিকার মতিন।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সালমা আকবর, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, লাইসা আহমেদ লিসা ও অনিমা রায়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৭
এজেড/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।