ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

ওদের আলোয় ‘প্রহর’ হলো আলোকিত

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭
ওদের আলোয় ‘প্রহর’ হলো আলোকিত  বাব-মা’র হাত ধরে বই মেলায় শিশ‍ুরা, ছবি: দীপু মালাকার

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: সবগুলো হাত, সব ক’টা পা যেন স্বর্গ কারিগরের নিপুণ হাতে তৈরি! নিজ হাতে গড়া! মুখগুলো যেন সূর্যমূখী ফুলের পাপড়ি! আর চোখগুলো যেন বহুকালের মায়ায় ঠাসা, ক্লান্তি দূর করার নিরাপদ আশ্রয়!

টিএসসি থেকে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে প্রবেশ দ্বার পযর্ন্ত যে দীর্ঘ লাইন, সেখানেই দেখা ওই হাত, ওই পা, ওই মুখ, ওই মায়াভড়া চোখগুলো। ওদের কারো হাত বাবার হাতে বন্দি, কারো মায়ের হাতে, কারো হাত মামা-খালা, ফুপি-চাচ্চুর মুঠিতে আটকা।


 
যারা আরো সৌভাগ্যবান, তাদের হাত নানা অথবা দাদার মুঠিতে বন্দি! কেউ বা নানু অথবা দাদুর পরম স্নেহের শিকলে বাধা। এতো মানুষের ভিড়, এতো কোলাহল, এতো নতুন মুখ-সব কিছুর মধ্যেই ওরা যেন খুঁজছে পরম আনন্দ, বাধভাঙা সুখ!
 
শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টায় মেলার প্রবেশ দ্বার খোলার পনের/বিশ মিনিট আগে দুই পাশেই দীর্ঘ সারি। এরই একটা সারিতে বাবার হাত ধরে মেলায় ঢোকার অপেক্ষায় ছো্ট্ট শিশু জাফর ইবনে সাদিকের।
 বাব-মা’র হাত ধরে বই মেলায় শিশ‍ুরা, ছবি: দীপু মালাকার
কেরাণীগঞ্জ থেকে বাবা মো. সাদিকুর রহমানের সঙ্গে মেলায় আসা সাড়ে ৬ বছর বয়সী জাফর ইবনে সাদিক তো ব্যাপক খুশি। তার আর তড় সইছে না। সে দ্রুত মেলায় ঢুকতে চায়। বাবার হাত ধরে টানছে আর বার বার বলছে, চল না মেলায় যাই। দাঁড়িয়ে আছো কেন?
 
কিছুটা বিরক্ত সাদিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, একটু আগে গেট খুললে কী হয়? ছোট ছোট বাচ্চাসহ এতগুলো মানুষকে দাঁড় করিয়ে রাখার কোনো মানে হয়। অন্য কোনো জায়গায় নিয়মের বালাই নেই। সব নিয়ম এখানে।
 বাব-মা’র হাত ধরে বই মেলায় শিশ‍ুরা
সারাফি ইসলাম অর্পা। সেও মেলায় এসছে বাবা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। দোয়েল চত্বর থেকে মেলার দিকে একটু এগোনোর পর তাকেও লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে। কিন্তু লাইন তো শেষ হচ্ছে না। তাই বার বার বাবাকে তাড়া দিচ্ছে সে।
 
কী বই কিন বা? ক্লাস ওয়ানে পড়ুয়া অর্পার দ্রুত উত্তর- ছড়ার বই কিনবো, গল্পের বই কিনবো, কার্টুন কিনবো। লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে কর্মরত অর্পার বাবা সাইফুল ইসলামের পছন্দ জনপ্রিয় ধারার কথা সাহিত্য। তিনি কিনবেন হুমায়ুন আহমেদ, আনিসুল হকের উপন্যাস। তার পছন্দের তালিকায় নাসরিন জাহানও আছেন।
 বাব-মা’র হাত ধরে বই মেলায় শিশ‍ুরা, ছবি: দীপু মালাকার
চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রাইসা মজিদ, ছোট বোন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী রাইয়া মজিদ মেলায় এসছে বাবা মাসুম বিন মজিদের সঙ্গে। প্রবেশদ্বার খোলার পর নিয়ন্ত্রিত গতিতে তারা এগোচ্ছিলো মেলার দিকে। ওদের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কথা বলতে বলতে এগিয়ে যাওয়া।
 
কী বই কিনবে? গল্প এবং ছড়ার বই। শুধু কি বই কিনবে, আনন্দ করবে না? হ্যাঁ, আনন্দ করব। সিসিমপুর যাবো। মজা করবো। বাবা মাসুম বিন মজিদ জানান, মেলায় আসার আগেই তারা লক্ষ্য ঠিক করে এসছে। বই কেনা এবং সিসিমপুর যাওয়া আপাতত লক্ষ্য তাদের।
 
মেলায় ঢোকার মুখে আরো কথা হয় সাড়ে চার বছর বয়সী জারিন তাসনিম বিভাসনা, পাঁচ বছর বয়সী রোদেলা সিথি সেনসহ অসংখ্য নুতন কুড়ির সঙ্গে। যারা ফুল হয়ে ফোটার অপেক্ষায়! নতুন এই কুড়িগুলোই শুক্রবার ছুটির দিন দুপুর একটা পর্যন্ত অমর একুশে গ্রন্থমেলায় সুভাস ছড়াবে।
 
অমর একুশে গ্রন্থমেলার দশম দিন শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) এবারের মেলার তৃতীয় শিশু প্রহর। ২৮ দিনব্যাপী মেলার দশম দিনে শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি।
 
একাডেমি প্রাঙ্গনের পুকুর পাড়ে, বর্ধমান হাউস ও ড. এনামুল হক ভবনের সামনের অংশে পাটের কার্পেট বিছিয়ে ছোট ছোট শিশুদের ছবি আঁকতে দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৫ শতাধিক শিশু অংশ নিয়েছে এই প্রতিযোগিতায়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭
এজেড/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।