ঢাকা, শনিবার, ৬ পৌষ ১৪৩১, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

ব্রেইলে সাহিত্য: ‘স্পর্শ আমাদের স্পর্শ করেছে’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
ব্রেইলে সাহিত্য: ‘স্পর্শ আমাদের স্পর্শ করেছে’ ব্রেইল বইয়ে গল্প পাঠ রূপমের ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইয়ের ওপর হাত বুলিয়ে বুলিয়ে টানা পড়ে যাচ্ছে রূপম। পড়ার সাথে মুখেও কিছু অভিব্যক্তি ফুটে উঠছে তার। কণ্ঠের ওঠানামা কিংবা পরিবর্তনে বোঝা যাচ্ছে রূপম বিষয়টি বুঝেই পড়ছে। এর অর্থ পুরোপুরি অনুধাবন করছে। 

এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে সে। জানে একটি অ্যাডভেঞ্চারের গল্প কিভাবে পড়তে হয়।

আর সে গল্প যদি হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে।  

তবে যে বইটি থেকে রূপম পড়ছিলো তার জমিন ধবধবে সাদা। সেখানে নেই কোনও কালির অক্ষর। কেবল হাত বুলিয়ে বুলিয়ে পড়ে যাওয়া।  

ওটি একটি ব্রেইল বই। বইয়ের নাম ‘শোভনের ৭১’।

  

রূপম দৃষ্টি প্রতিবন্দ্বী। তার দুচোখ পৃথিবীর রূপ দেখতে পায়না। বইমেলার আলো ঝলমল চারিদিক, আর নানা রঙ-বর্ণের বইগুলো তার দেখার সুযোগ নেই। তবে সাদা রঙের বইয়ে ছিদ্র করে করে লেখা বইগুলোই তার মাঝে আলো ছড়ায়।  

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) পরীক্ষা ছিলো রূপমের। পরীক্ষা শেষ করে সরাসরি চলে এসেছে বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে গ্রন্থ মেলায়।

মেলার ‘স্পর্শ’ নামের স্টলটি রূপমদের। বইমেলায় দৃষ্টিপ্রতিবন্দ্বীদের জন্য এই স্টল। সুতরাং এটা তাদেরই স্টল, বললো রূপম।  

স্টলটি অন্যসব স্টল থেকেই আলাদা। নেই বরং বেরংয়ের মলাটে হরেক নামের শত লেখকের বই। তবে রাতেও স্টলটি বেশ জৌলুস ছড়াচ্ছিলো। খুব সুন্দর পরিপাটি সেজে… সুন্দর দেখতে ছেলে-মেয়েরা স্টলটিতে দাঁড়িয়ে। কেউ ভেতরে। অধিকাংশই বাইরে। রাতেও তাদের অনেকেরই চোখে সানগ্লাস। বুঝতে বাকি থাকার কথা নয় এরা চোখ ঢাকতেই এই রঙিন চশমা পড়েছে। এরই মধ্যে কেউ কেউ খোশগল্প… কেউ বেশ আড্ডা জমিয়ে দিয়েছে। আবার কেউ হৈ-হট্টগোলের মধ্যেই নিবিড়ভাবে হাতের আঙ্গুল বুলিয়ে বুলিয়ে পড়ে যাচ্ছিলো বই।  

স্পর্শ এবার এনেছে কয়েকটি নতুন বই। কায়সার চৌধুরীর ‘শোভনের ৭১’ ছাড়াও রয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘দলের নাম ব্ল্যাক ভ্রাগন, ঈশপের গল্প সমগ্র, ৮০ দিনে বিশ্বভ্রমণ, গলদামামার গোয়েন্দাগিরি। ব্রেস্ট ক্যানসার নিয়ে একটি স্বাস্থ্যবিষয়ক বইও এবার ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করেছে স্পর্শ।  

“মানুষ দৃষ্টিহীন বলেই অন্ধ নয়-মানুষ মূলত প্রজ্ঞাহীন বলেই অন্ধ” এই শ্লোগান সামনে রেখে ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করে স্পর্শ ব্রেইল। এর প্রতিষ্ঠাতা নাজিয়া জাবীন।  

প্রতিষ্ঠানটি আগেই এনেছে বেগম রোকেয়া: আত্মজীবনী, লুই ব্রেইল: জীবনী, হেলেন কেলার: জীবনী, কাজী নজরুল ইসলাম: জীবনী, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কবিতার সংকলন- ৭১ দেখব বলে, সেলিনা হোসেনের আমার স্কুল, সৈয়দ শামসুল হকের চালতা লেবু, হুমায়ূন আহমেদের বোতল ভূত, মুহম্মদ জাফর ইকবালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মফিদুল হকের সে কোন রবীন্দ্রনাথ, লুৎফর রহমান রিটনের ছড়ায় ভুবন ভরিয়ে দেব। নাজিয়া জাবীন নিজেও লিখছেন ব্রেইল বই। তার লেখা ‘গল্পে গল্পে শেখা’ ‘বিনির সাথে পুতুল বিয়ে’ এগুলোও রয়েছে স্পর্শের স্টলে।  

‘স্পর্শ আমাদের স্পর্শ করেছে, বললো রূপম।
 
দেশে অন্ধদের শিক্ষার জন্য ব্রেইল পদ্ধতির বই থাকলেও সেগুলো তাদের পাঠ্যপুস্তক। স্পর্শই এনেছে এ ধরনের বই। যা দৃষ্টি প্রতিবন্ধ্বীদের সাহিত্যপাঠেরও সুযোগ করে দিয়েছে।

বাংলাদেশ সময় ১৪৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৭
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।