ছবি: সুমন শেখ
তারা মনে করেন, খুব গভীরভাবে চিন্তা করে, কঠিন বাক্য সাজিয়ে একটা চিরায়ত সাহিত্য রচনা করতে হবে। কিন্তু আসলে তো ব্যাপারটা তা নয়।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণে শিশুদের অটোগ্রাফ দিতে দিতে বাংলানিউজকে এমনটাই বলছিলেন এসময়ের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল।
এসময় তিনি বলেন, শিশু সাহিত্য লিখতে গেলে সবার আগে নিজের শৈশবের কথাই চিন্তা করতে হবে। শিশুদের জন্য সাহিত্য রচনায় জটিল বাক্যবিন্যাসে গুরুগম্ভীর ভাবনার প্রকাশ ঘটানোর পরিবর্তে শিশুর চারপাশের ঘটনাবলীকে সহজ-সরল ভাষায় উপস্থাপন করতে হবে।
শনিবার মেলায় ঘোষণা করা হয়েছিলো শিশুপ্রহর। শিশু প্রহর পেরিয়ে গেলে বিকেলে শিশু চত্বরে দেখা মেলে এ লেখকের। এসময় তিনি ঘুরে ঘুরে মেলায় প্রকাশিত বিভিন্ন নতুন বই দেখেন।
এদিন শিশুপ্রহর থাকলেও বিকেলে ছিল সব ধরণের মানুষের ভিড়। বইপ্রেমিরা বইও কিনেছেন তুলনামূলক বেশি। এমনটাই জানিয়েছেন বিভিন্ন প্রকাশনীর কর্ণধারেরা। তারা আশা করছেন, মেলার জমজমাট অবস্থা আসতে আর খুব বেশি সময় লাগবে না।
এদিকে বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'রবি গুহ॥ মুনীর চৌধুরী॥ সরদার ফজলুল করিম' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মফিদুল হক এবং অধ্যাপক এম এম আকাশ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল, অজয় দাশগুপ্ত, পিয়াস মজিদ ও অলকানন্দা গুহ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক সানজীদা খাতুন।
'রবি গুহ ও মুনীর চৌধুরী: সেই সময়' শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে মফিদুল হক বলেন, বাংলার ইতিহাসে ১৯৪৫ থেকে ১৯৫০ কালপর্বে যে তীব্র আলোড়ন, আকুল স্বপ্ন, সেই সঙ্গে স্বপ্নভঙ্গের যে সময়টি আমরা দেখি সেই সময়ের তিন ব্যক্তিত্ব রবি গুহ, সরদার ফজলুল করিম এবং মুনীর চৌধুরী। তাদের জীবন, কর্ম ও চিন্তায় আমরা দেখি অসাধারণ সাযুজ্য। মুনীর চৌধুরী তার সৃষ্টিশীলতা নিয়ে নিরন্তর অবদান রেখে গেছেন বাঙালি মানস পরিপুষ্ট করে তোলার জাতীয় কর্ম সম্পাদনে।
অন্যদিকে, দেশভাগের পর বাংলাদেশ ত্যাগ করে রবি গুহ পশ্চিমবাংলার ভিন্নতর পরিবেশে ভিন্নভাবে সক্রিয় হয়েছেন উদ্বাস্তুদের জীবনে শিক্ষা ও বাঁচার অধিকার নিশ্চিত করতে।
'প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে'-শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে এম এম আকাশ বলেন, সরদার ফজলুল করিম বিশ্বাস করতেন বিপ্লব একটি চলমান প্রক্রিয়া। আর এ বিপ্লবের ধারাবাহিকতাতেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। এমনকি আজকের বাংলাদেশে নারীদের চলাফেরার যে স্বাধীনতা এটাও কম বড়ো বিপ্লব নয়। মানবতাবাদী এই জ্ঞানতাপস নিজের জন্য কিছুই করেননি, বরং নিজের সমস্ত জ্ঞান ও মেধা ছড়িয়ে দিয়েছেন মানবকল্যাণে। দর্শনের মতো দুর্বোধ্য বিষয়কে সহজ-সরল ভাষায় সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভাঙনের পরও তিনি সাম্যবাদের পক্ষে ইতিবাচক ও আশাবাদী ধারণা পোষণ করতেন। তরুণ সমাজতান্ত্রিকদের উৎসাহ দিতেন।
আলোচকরা বলেন, রবি গুহ, মুনীর চৌধুরী ও সরদার ফজলুল করিম বামপন্থি চিন্তাধারাকে ছাত্রদের মধ্যে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। তারা প্রগতিশীল চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ছিলেন এবং অসাম্প্রদায়িক, সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, তার প্রেরণা হয়ে আছেন বাংলার এ তিন বিরল নক্ষত্র।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সনজীদা খাতুন বলেন, আমাদের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে মানবিকতা বোধ জাগ্রত করা একান্ত প্রয়োজন। রবি গুহ, মুনীর চৌধুরী ও সরদার ফজলুল করিম ছিলেন উচ্চতর মানবিকতা-বোধসম্পন্ন মানুষ। তাদের জীবনাদর্শ আমাদের সামনে চলার প্রেরণা হয়ে থাকবে।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতি, শফি মণ্ডল, রনজিত দাস বাউল, পাগলা বাবলু ও মো. আনোয়ার হোসেন। এসময় তাদের সঙ্গে যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ পাল (তবলা), মো. হাসান আলী (বাঁশি), আশুতোষ শীল দোতারা) এবং মো. হাসান মিয়া (ঢোল)।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১১তম দিন। এদিন মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘রুশ বিপ্লবের শতবার্ষিকী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন ডা. সারওয়ার আলী, সৈয়দ আজিজুল হক এবং ইমতিয়ার শামীম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক পবিত্র সরকার। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৮
এইচএমএস/এসআই