স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা আবিদা খলিল দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন বিমান বাংলাদেশের মেডিকেল অফিসার হিসেবে। শুধু বই ভালোবেসে বয়সের বাঁধা তুচ্ছ করে ছুটে এসেছেন বাংলা একাডেমির এই প্রাণের মেলায়।
রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১১তম দিনে এ বছর প্রথমবারের মতো বই কিনতে এসেছেন তারা। গ্রন্থমেলায় ভিড় থাকায় টিএসসি থেকে সুইচ ফাউন্ডেশনের সদস্যদের হুইল চেয়ারে করে রওয়ানা দেন এই গ্রন্থপ্রেমীরা। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্টল থেকে কিনেছেন নিজেদের পছন্দের বই। সবাই মুক্তিযুদ্ধ, উপন্যাস, প্রবন্ধ ও নাতি-নাতনীদের জন্য গল্পসহ কিনেছেন কিশোর উপন্যাস।
গ্রন্থমেলায় বইপ্রেমীদের চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী ইটের রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়ে হুইলচেয়ার নিয়ে চলাচল করতে সমস্যা হলে মাঝে মধ্যে হেঁটেই পার হতে দেখা গেছে। বয়সের কারণে হেঁটে চলাচল করতে কষ্ট হলেও নেমে পথ চলতে কোনো কষ্ট হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তারা।
বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে এটুকু কষ্ট হাসিমুখে মেনে নিয়ে মেলা ঘুরেছেন এই বইপ্রেমীরা।
বেশি বয়সেও বইমেলায় আসার বিষয়ে জানতে চাইলে ৮১ বছর বয়সী সাঈদা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমি এখনো তরুণ। এখনো প্রতিদিন এক মাইল করে হাঁটি। হুইল চেয়ার পাওয়ায় মেলায় বই কিনতে সুবিধা হলো।
তিন বান্ধবীর আরেকজন ফাতেমা হক ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। কর্মজীবন সর্ম্পকে জিজ্ঞেস করলে বলতে চাননি। মেলার প্রতি টান সর্ম্পকে জানতে চাইলে বাংলানিউজের খাতায় নিজ হাতে মন্তব্য লিখে দিলেন। লিখলেন, বইয়ের মেলা প্রাণের মেলা, বই পড়ি ভালোবেসে।
নতুন কেনা সাত-আটটি বইয়ের মধ্যে দু’য়েকটি বই বাসায় রয়েছে বলে জানান তিনি। নতুন বইয়ের প্রতি ভালোলাগার কথা বলে প্রাচীন রোমের প্রাবন্ধিক মার্কাস টুলিয়াস সিসারোর ‘বই ছাড়া একটি কক্ষ আত্মা ছাড়া দেহের মতো’ উক্তিটি স্মরণ করিয়ে দিলেন।
এই তিন বান্ধবী ছাড়াও বিকেলে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের স্টলের সামনে হুইলচেয়ারে বসে বই কিনতে দেখা গেলো ৬৬ বছর বয়সী মুহাম্মদ হাবিব উল্লাহকে। এই বইপ্রেমী কর্মরত ছিলেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগে।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ছাত্র জীবনে বই পড়ার যেমন অভ্যাস ছিল, এখনো সেই অভ্যাস আছে। অগ্নিপুরুষ, তাজউদ্দীন আহমদ: নেতা ও পিতা, পদ্মা নদীর মাঝিসহ নিয়েছেন একগাদা বই।
এই বইপ্রেমীদের মেলা ঘুরতে সহায়তা করেছেন সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, ২০১১ সাল থেকে এই ফাউন্ডেশন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে আসছে। বইমেলায় স্বেচ্ছাশ্রম এই কাজেরই অংশ। আমরা বয়স্ক, ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ও শিশুদের মেলা ঘুরতে সহযোগিতা করতে পেরে গর্বিত।
সব ধরনের বই পেতে পারেন অনলাইনেও, ভিজিট করুন https://www.rokomari.com/book
বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৮
এসকেবি/এএ