সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঝিঙে ফুল স্টলের সামনে লালচে ইট বিছানো পথ ধরে হাঁটতেই কানে আসে, ‘আম্মা, বই কিনবা’! ব্যস্ততা কারণে উপেক্ষা করতে গিয়েও থেমে যাই। দেখলাম, হাত ও বুকে জড়িয়ে বই ফেরি করে করছেন সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা।
প্রথমে দেখাতে মনে হচ্ছিল কোনো স্টলের কর্মী। কিন্তু তার উল্টোটা। বুকে জড়ানো বইগুলোর লেখক তিনি নিজেই! আকন্দ সামসুন নাহার নামে এ লেখক বছরের পর বছর ভালোবেসে লিখে যাচ্ছেন। নিজ টাকায় প্রকাশিত বইগুলো মানুষের দ্বারে পৌঁছাতে দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
এগিয়ে গেলে গলায় আইডি ঝোলালো দেখে বললেন, ‘আপনি সাংবাদিক’। হ্যাঁ-সূচক প্রত্যুত্তরে, ‘আমি লিখি, এখন পযর্ন্ত ২০টি বই বের হয়েছে। এবারও দু’টি বই আসছে। আমাকে নিয়ে লিখবা?-বলে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।
বয়সের ভারে হাটাও যার কষ্ট; সেই লেখিকা খরচ উঠাতে নিজেই বই ফেরির দায়িত্ব নিয়েছেন। তার প্রাণশক্তি দেখে যে কেউ বিস্মিত হবে। এ লেখিকার কাছে ‘মেলায় ফেরি করে বই বিক্রির নিষেধাজ্ঞা’-মনে করাতেই বিরক্ত ভাবাবেগ নিয়ে বলেন, ‘তোমার কোনো সমস্যা?’
ভাব জমানোর চেষ্টায় বেরিয়ে আসে সৌখিন এক লেখকসত্ত্বা। আকন্দ সামসুন নাহার প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনটি বিষয়ে মাস্টার্স করেছেন। ভারতের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি নেন। সরকারি কলেজে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। ন্যাশনাল ক্যারিকুলাম বোর্ডেও ছিলেন। বর্তমানে পড়াচ্ছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তিনি বাংলানিউজকে জানান, দু‘বছর ধরে বইমেলায় ফেরি করে বই বিক্রি করেন। প্রথম প্রকাশিত হয় ছড়ার বই ‘নীলের ছড়া’। একাধারে বের হয়েছে ২০টি বই। দু’টি বই প্রকাশের অপেক্ষায়। এবারের মেলায় ‘ফিনফিনে ভুত’, বাতিঘর’ বই দুইটি এসেছে।
আকন্দ সামসুন নাহার লিখতে ভালোবাসেন। বইয়ে প্রতিটি ‘অক্ষর’ তার কাছে সন্তানের মতো। মনের তাগিদের লেখার পরও ইচ্ছা পোষণ করে ‘আমার বইও পাঠকও আপন করুক’। তবে পিএইচডি ডিগ্রিধারী এ লেখিকার বই নামধারী রঙ বেরঙের স্টলে ঠাঁই পায়নি। তাই, নিজেই পাঠকের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন। সত্তরে এসেও অফুরন্ত প্রাণশক্তির নারী মনে করেন, ‘একদিন পাঠক তাকে চিনবে, তার বই পড়বে’।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮
এমসি/ওএইচ/