ঢাকা, বুধবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২ রবিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

কল্প, বিজ্ঞান ও থ্রিলারের মিশেলে যে বই | মোহাম্মদ শুভ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৮
কল্প, বিজ্ঞান ও থ্রিলারের মিশেলে যে বই | মোহাম্মদ শুভ বিয়ন্ড দ্য ম্যানমেইড ইউনিভার্স

মনে করুন, আপনি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী একজন মানুষ। অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় অদ্ভুত সব রহস্যে ঘেরা এক দ্বীপে গেলেন, যার জন্মই হয়েছে রাতারাতি। রহস্যের উৎস খুঁজতে খুঁজতে একটি ওয়ার্মহোলের ভেতরদিয়ে চলে গেলেন, পৃথিবী থেকে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরের নতুন কোনো পৃথিবীতে। আর সেখানে গিয়েই জানতে পারলেন, আমাদের পৃথিবী ধ্বংস হতে সময় আছে মাত্র ২৪ ঘণ্টা। তখন কী করবেন আপনি? কীভাবে রক্ষা করবেন প্রিয় পৃথিবীকে? 

এমনই এক কঠিন প্রশ্নের দিকে ঠেলে দেয় তরুণ লেখক তাসরুজ্জামান বাবুর কল্পবৈজ্ঞানিক থ্রিলার ‘বিয়ন্ড দ্য ম্যানমেইড ইউনিভার্স’।  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় তরুণ ক্যাম্পাস থেকে ট্যুরে গেছে অদ্ভুত সব রহস্যে ঘেরা একটি দ্বীপে।

যার উত্থান হয়েছে রাতারাতি। সেই সময় দ্বীপটি নিয়ে নানা রকম ভয়ংকর এবং আজগুবি কথাবার্তা চলতে থাকে। সেসব তথ্য গবেষণা করতে এসেছিলেন আমেরিকার দু’জন প্রবাসী বাঙালি প্রফেসর। দ্বীপে প্রবেশের পরে আর তাদের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ট্যুরে গিয়ে ছয়বন্ধু রহস্যের উৎস খুঁজতে খুঁজতে একটি ওয়ার্মহোলের ভেতর দিয়ে চলে যায় পৃথিবী থেকে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরের থিয়ান গ্রহে। সেখানে গিয়েই জানতে পারে, আমাদের পৃথিবী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। কী করবে অঙ্কুররা এখন?

এই বইয়ের সবচেয়ে অভিনব ব্যাপারটি হলো, গল্পের প্লট। প্রথাগত সায়েন্স ফিকশনের মতো নিছক গল্পের সাথে মিশ্রিত এক চিমটি ‘অপবিজ্ঞান’ নয়। কিছুটা গল্প, কিছুটা বিশুদ্ধ বিজ্ঞান, আর বাকিটা লেখকের কল্পনাশক্তি। এমন হাইপোথিসিসধর্মী সায়েন্স ফিকশন বাংলা ভাষায় এই প্রথম পড়ার অভিজ্ঞতা হলো। বর্তমানে সায়েন্স ফিকশনের একটা গৎবাঁধা ধারা দাঁড়িয়ে গেছে, সেই ধারার মধ্যে একই ধরনের বিষয়বস্তুর চর্বিত চর্বণে সায়েন্স ফিকশন লেখা হচ্ছে। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর এগুলো হাস্যকর ও ছেলেভোলানো মনে হয়। সেই ভিত্তিতে বিবেচনা করলে লেখকের এই বইটি পড়ে রীতিমতো চমকে উঠতে হয়। এককথায় নবীন-প্রবীণ সবারই উপযোগী একটি বই। বইটির বর্ণণাভঙ্গিতেও অসাধারণত্বের ছাপ। টুকরো টুকরো বাক্য, যেনো দাঁড়িপাল্লায় ওজন করা। একই তালে বয়ে গেছে পুরো কাহিনী জুড়ে। সরল-সিধা ভাষার বর্ণনায় এক ধরনের মুগ্ধতা ঘিরে আছে। যেকোনো বইয়ে পাঠকের প্রথম বিবেচনা থাকে, লেখকের লেখনশৈলী পাঠককে এক পৃষ্ঠা থেকে অন্য পৃষ্ঠায়টেনে নেয়। এক্ষেত্রে প্রতি পৃষ্ঠাতে একটি কথাই বারবার মনে হয়েছে, কী হবে এবার? 

বাংলা সাহিত্যে সায়েন্স ফিকশন নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট তেমন হয় না। লেখক এই জনরাটির নাম দিয়েছেন, কল্পবৈজ্ঞানিক থ্রিলার। অর্থাৎ সায়েন্স ফিকশনের সাথে থ্রিল মিশ্রণ করে লেখক নতুন একটা এক্সপেরিমেন্ট চালাতে চেয়েছেন। এক্ষেত্রে তাকে অনেকাংশেই সফল বলা যায়। যদিও সায়েন্স ফিকশন আর থ্রিলের অনুপাতটা সমান ছিলো না। তবু একক রচনার মধ্যে কল্পবিজ্ঞান, থ্রিলার, অ্যাডভেঞ্চার, সাসপেন্স, হরর ইত্যাদির সমন্বিত স্বাদ দেওয়ার চেষ্টাকে স্বাগত জানাতেই হয়।  

সবশেষে লেখক এক চিমটি ‘ম্যাজিক রিয়েলিজম’ মিশিয়ে এটিকে একটি আধুনিক সাহিত্যকর্মের আদল দিতে প্রয়াস পেয়েছেন। কাহিনীর শেষে লেখক যে বার্তা পোঁছে দিতে চেয়েছেন তাও খুব আবেদনময়ী।  

বিজ্ঞানের অতি দুরহ কিছু বিষয়কে লেখক এতো সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করেছেন যা বোঝার জন্য বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার প্রয়োজন নেই। সার্বিক বিবেচনায় বলব, বাংলাদেশের কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যে আরও একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখকের আগমন-ধ্বনি শোনা যায়।

বই: বিয়ন্ড দ্য ম্যানমেইড ইউনিভার্স
লেখক: তাসরুজ্জামান বাবু
ঘরানা: কল্পবৈজ্ঞানিক থ্রিলার
প্রকাশনী: সময় প্রকাশন
মুদ্রিত মূল্য: ২০০ টাকা
প্রথম প্রকাশ: বইমেলা২০১৮
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ১১২

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৮
এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।