কোথাও গেলে মুজতবা আলী সেখানকার তিনটি বিষয় খেয়াল রাখতে বলেছেন। প্রথমেই নতুন কোনো এলাকায় গেলে সেখানের বাজারে ঢুঁ মারতে হবে।
দর্শন যার এমন, সেই মুজতবা আলীর লেখা মানেই তো বিরাট অভিজ্ঞতার পথ দিয়ে হাঁটা। পাতার পরতে পরতে রস।
ভ্রমণকাহিনির মূল উপাদানই বিস্তর অভিজ্ঞতাকে রস দিয়ে ঘটনার সঙ্গে স্থানের বর্ণনা একাকার করে দেওয়া। পাঠক নতুন জায়গার সঙ্গে পরিচিত হতে হতে তথ্যটাও জানতে চায়। সেজন্য ভ্রমণকাহিনি পড়তে পছন্দ করেন না, এমন পাঠক নেই বললে ভুলই হবে।
চলছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বাংলা একাডেমি আয়োজিত এ মেলায় পাঠকরা গল্প, উপন্যাসের সঙ্গে সঙ্গে ভ্রমণকাহিনি খুঁজে বেড়াচ্ছেন এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। অনেককেই দেখা গেছে স্টলে এসে নতুন ভ্রমণকাহিনি চাচ্ছেন। যা কিছু বই বেরিয়েছে, বিক্রি হচ্ছে ভালো।
প্রকাশনা সংস্থাগুলো বলছেন, ভ্রমণকাহিনির প্রতি ব্যাপক ঝোঁক পাঠকদের। কিন্তু সেখানে কেবল বিভিন্ন স্থান দর্শনের বর্ণনা নির্ভরতা দেখা যাচ্ছে। নবীন লেখকদের বই বেশি বেরুচ্ছে। আর তাদের পড়ার অভ্যাস কম হওয়ার কারণেই এমনটি হচ্ছে। তবে এখনো অনেকের বই বেশ ভালোমানের।
ভ্রমণকাহিনি পড়া যেহেতু নতুন নতুন কৃষ্টি, কালচার কিংবা জায়গায় সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়, মূলত সেজন্যই আগ্রহ বেশি।
নাজিয়া শারমিন আন্না নামে এক শিক্ষার্থী জানান, বইপড়া তার নেশা। আর ভ্রমণ করা তার শখ। তাই মেলায় এসেই নতুন নতুন ভ্রমণকাহিনি সংগ্রহ করেন। এবারও বেশকিছু বই তিনি নিয়েছেন। তবে এসব বইয়ে মজা কম। পড়ে কেবল তথ্য পাওয়া যায়। কাহিনি বা নাটকীয়তা নেই।
ইয়াকুব আলী নামে এক পাঠক বলেন, ভ্রমণকাহিনি বেশ ভালো লাগে। তবে নবীন লেখকদের বইয়ে তেমন সাহিত্যরস নেই।
বাংলা একাডেমি তথ্যকেন্দ্র থেকে জানা যায়, এ পর্যন্ত ভ্রমণকাহিনির উপর ৬০টির মতো বই এসেছে। যার বেশিরভাগ এনেছেন নবীনরা।
এদিকে নবীনদের অনেকের বইও ভালো চলছে। আবার উপস্থাপনাও খারাপ বলা যাবে না, মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবার মেলায় নতুনদের মধ্যে নিজামুল হক বিপুলের 'কুয়াকাটা থেকে মারাকাশ', তুষার কাব্যের 'মেঘঝর্ণার মেঘালয়' বই দু'টি ভালো চলছে। এছাড়া ফরিদ আহমেদের 'তুষার রাজ্য কাশ্মীর ও ভুটান', ইফতেখারুল ইসলামের 'ছবির শহর' ভালো চলছে।
তবে এর মধ্যে কুয়াটাকা থেকে মারাকাশ বইটি বেস্ট সেলারের তালিকায় স্থান নিতে পারে বলে মনে করছে প্রকাশনা সংস্থা বেহুলা বাংলা।
প্রকাশনাটির ম্যানেজার বাংলানিউজকে বলেন, সৈয়দ মুজতবা আলীর ধারে কাছে কেউ নেই এখন। নবীনরা প্রচুর লিখছে, পাঠকের আগ্রহও বেশ। তবে বেশিরভাগ বই তেমন সুখপাঠ্য নয়।
বাংলাদেশ সময়: ০০১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮
ইইউডি/এএ