মানুষের জীবনে কিছু কিছু খুব অদ্ভুত ঘটনা ঘটে, অবাস্তব স্যুররিয়ালিস্টিক স্বপ্নগুলা বাস্তবে জীবনের ভিতর ঢুকে পড়ে। নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জীবনে এমন অনেক ঘটনার ছড়াছড়ি।
এবারের বইমেলায় হুমায়ূন আহমেদের সহধর্মিনী মেহের আফরোজ শাওনের বয়ানে লেখকের অনেক অজানা কাহিনীর সন্ধান দিয়েছেন কবি শোয়েব সর্বনাম।
শোয়েব তার বইয়ে বলছেন- “ধানমন্ডির দখিন হাওয়ার ফ্ল্যাটে একটানা চার বছর হুমায়ূন নিঃসঙ্গ কাটাইছেন। এই চার বছরে হুমায়ূন আহমেদের বেশ কয়েকবার হার্ট এটাক হয়। প্রতিবারই তার বন্ধুবান্ধবদের ফোন করতে হইছে হাসপাতালে নেয়ার জন্য।
এইরকম একদিন দুপুরে লেখালেখির কাজ শেষ কইরা উঠতে গিয়া তিনি প্রচণ্ড বুকে ব্যথা অনুভব করেন। ফোনে কোনো বন্ধুদের পাওয়া গেল না। শেষ পর্যন্ত ফোনে শাওনকে পাওয়া গেল। শাওন মাত্র ভার্সিটিতে ভর্তি হইছেন, ধানমন্ডিতেই ক্যাম্পাস। শাওনের কান্নাকাটিতে তার বাবা ছুইটা আসেন, হুমায়ূন আহমেদকে একটা বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হার্টের অবস্থা বেশ খারাপ, বেশ কয়েকটা ব্লক ধরা পড়ে। বাইপাস সার্জারির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বাইপাস সার্জারি করার প্রয়োজনে হুমায়ূন আহমেদ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেন, সঙ্গে তার মা আয়েশা ফয়েজ। একই সময়ে আয়শা ফয়েজেরও হার্টে সমস্যা ধরা পড়ে এবং একই সাথে মা ও ছেলের বাইপাস সার্জারি করা হয়।
একই সাথে বলা অবশ্য ঠিক হবে না, হুমায়ূন আহমেদ তার মায়ের আগে নিজের সার্জারির জন্য ডাক্তারদের অনুরোধ করেন। তিনি মাকে বলেন, আপনার সার্জারি আগে হইলে তো আমার সার্জারির সময় আপনি অজ্ঞান অবস্থায় থাকবেন। এইটা হইতে দেয়া যাবে না। আমার সার্জারি আগে হবে। যতক্ষণ আমার সার্জারি হবে ততক্ষণ আপনি আমার জন্য দোয়া করবেন।
পোস্ট অপারেটিভ রুমে যখন হুমায়ূনের জ্ঞান ফিরে, তখন মা ও ছেলে পাশাপাশি শুইয়া আছেন, দুইজনই নিজেদেরকে দেখতেছেন, কিন্তু কেউ কথা বলতেছেন না।
সার্জারি শেষে দেশে ফেরত আসার পর তিনি ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ উপন্যাসটা শেষ করেন। ”
হুমায়ূন আহমেদের জীবনের এমন অনেক যাদুবাস্তব গল্পের সমষ্টি ‘শাওনের বয়ানে হুমায়ূন’। বইমেলায় অবসর প্রকাশনী এনেছে বইটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৮
এমজেএফ