ভাষা আন্দোলনের প্রভাবে একদিকে যেমন সাহিত্য, সংগীত, চিত্রকলাসহ সৃষ্টিশীলতার প্রতিটি ক্ষেত্রে গুণগত ও পরিমাণগত পরিবর্তন এসেছে, তেমনি বিকশিত হয়েছে বাঙালি জাতির চেতনারও। মাতৃভাষাকে রক্ত দিয়ে রক্ষা করার মতো গর্ব শুধু বাঙালিদেরই আছে।
আর এজন্যই হয়তো ভাষার জন্য বাঙালির দরদ একটু বেশি। এই ভাষা নিজেদের করে নিতে ঢাকার পিচঢালা রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। এই আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এক গভীর প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে চিরকাল।
পরবর্তী সময়ে ভাষা আন্দেলনের পথ ধরেই নিজেদের আত্মপরিচয় শক্ত করার জন্য অর্জিত হয়েছে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। কিন্তু এসব ইতিহাসের পুরোটা বইয়ের মধ্যে পাওয়া যায় না। অনেক লেখক গবেষক চেষ্টা করেছেন এই ইতিহাসকে বইয়ের পাতায় রূপ দিতে। তবুও নিজের চোখে নিদর্শনগুলো দেখা আর বইয়ে পড়ে শেখার মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে বলে মনে করেন সন্তানদের নিয়ে ভাষা আন্দোলন জাদুঘরে ঘুরতে আসা এবিএম আমিনুল্লাহ নুরি। নিজের তিন ছেলে আর একমাত্র মেয়েকে নিয়ে তিনি এসেছেন বাংলা ভাষার ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে। ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের আনীত সংশোধনী প্রস্তাব এবং এ নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক সম্পর্কে সন্তানদের বলছেন এই সরকারি কর্মকর্তা।
আমিনুল্লাহ নুরি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ভাষার ইতিহাস যে কতোটা গর্বের সেটা বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে হবে। কিন্তু আপনি বইয়ের মধ্যে এই ইতিহাস সব পাবেন না। যেমন ধরুন ১৯৫২ সালে আমাদের দেশে ৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষ ছিলো, যাদের মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখের মুখের ভাষা ছিলো বাংলা। তবু তারা আমাদের ওপর উর্দুকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলো। এসব ইতিহাস সবাইকে জানতে হবে। এজন্য সকালে আমার সন্তানদের নিয়ে প্রথমে শহীদ মিনার, তারপর বাংলা একাডেমি, এখন আছি ভাষা আন্দোলন জাদুঘরে। এখান থেকে যাবো বইমেলায়।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ভাষার ইতিহাস জানতে এসবের একটাও বাদ দিলে হবে না। এক সময়ের এই বর্ধমান হাউজ এখন জাদুঘর। এখানে কী হতো এসব জানতে আপনাকে এই জাদুঘরেই আসতে হবে। বই পড়ে হবে না।
অমর একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজের দোতলার এ ভাষা আন্দোলন জাদুঘরে প্রতিদিন এমন হাজারো দর্শনার্থী আসেন ইতিহাসের নিদর্শনে চোখ বোলাতে। তবে বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দর্শক উপস্থিতি অন্যদিনের তুলনায় একটু বেশিই ছিলো।
২০১০ সালে ১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন জাদুঘর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন থেকেই দেশের অনন্য এই জাদুঘরে ভাষা আন্দোলনের ঐতিহাসিক আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, স্মারকপত্র, ব্যঙ্গচিত্র, চিঠি, প্রচারপত্র, পাণ্ডুলিপি, পুস্তক-পুস্তিকার প্রচ্ছদ এবং ভাষা শহীদদের স্মারকবস্তু সংরক্ষণ করা হয়েছে।
আজিমপুর থেকে বাবার সঙ্গে ভাষা আন্দোলন জাদুঘরে এসেছে শহীদ শেখ রাসেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মাহফুজ।
সে বাংলানিউজকে বলে, বইয়ে পড়েছি আমজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদ রফিক, শফিউরের কবর রয়েছে। আর এখানে কিছু ভাষা সংগ্রামের নিদর্শন রয়েছে। তাই বাবার সঙ্গে আজকে নিজের চোখে দেখার জন্য এসেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮
এসআইজে/এইচএ/