ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

ভালো কাজের প্রত্যয়ে শিশুপ্রহরে মুখরতা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৮
ভালো কাজের প্রত্যয়ে শিশুপ্রহরে মুখরতা বইয়ে মগ্ন এক শিশু/ছবি: সুমন শেখ

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: ঘড়ির কাঁটায় ১১টা বাজতে তখনো আধাঘণ্টা বাকি। অথচ বইমেলায় প্রবেশের জন্য মূল প্রবেশপথ থেকে লম্বা লাইন ছাড়িয়ে গেছে টিএসসি মোড়। সে লাইনে বাবা-মায়ের হাত ধরে অগণিত শিশু। শিক্ষকদের সঙ্গে এসেছে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীও। তারা লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই একসঙ্গে আওয়াজ তোলে- 'ভালো কাজে হারবো না, লেখাপড়া ছাড়বো না'!

শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে এমন ভালো কাজ করা আর লেখাপড়ার ব্রত নিয়েই অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রবেশ করে হাজারো শিশু-কিশোর। মেলার আয়োজন অনুযায়ী এদিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশু প্রহর।

যে প্রহরে গ্রন্থমেলা মুখরিত হয় হাজারো শিশুর পদচারণায়।

কথা হয় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক আজহার আহমেদের সঙ্গে। বিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষার্থী নিয়ে মেলায় এসেছেন তিনি এবং তার সহকর্মীরা। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, শিশুরা সবসময় সুন্দর পছন্দ করে। তাদের কাছে যা সুন্দর, তাই সত্য। সে যেভাবে দেখে, সেভাবেই নিজেকে গড়ে তুলতে প্রস্তুত হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে বইমেলার মতো সত্য ও সুন্দরের বৃহৎ জগৎ অন্য কোথাও তো পাওয়া যাবে না।  

দু’জন শিক্ষার্থীকে ইশারায় দেখিয়ে তিনি বলেন, ওই যে একজনকে দেখে আরেকজন বই কিনলো, এটা অনেক বড় ব্যাপার। এখন অ্যাপসের দুনিয়ায় শিশুরা যেখানে স্কুলের বইয়ের বাইরে কিছু পড়তেই চায় না, সেখানে শিশুরা এখান থেকে দেখে দেখে হলেও বইয়ের প্রতি আকর্ষিত হবে। জ্ঞানলাভের প্রতি তাদের আলাদা একটা ভালোবাসা জন্ম নেবে।

বইমেলায় ঢোকার দীর্ঘ লাইনদ্বার খোলার পর থেকেই মেলায় ভিড় করেছে খুদে পাঠকেরা। আনন্দ-হাসি গানে মুখর করেছে সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণ। পুরো মেলাজুড়েই শিশুদের জন্য রয়েছে আলাদা চত্বর। এছাড়াও তাদের জন্য রয়েছে নানা আয়োজন। শিশু চত্বরের বাইরের স্টলগুলোতেও রয়েছে বিভিন্ন শিশুতোষ বই। আর সেগুলোর সঙ্গে সন্তানদের পরিচয় করিয়ে দিতে একপ্রকার উন্মুখ হয়েই ছিলেন অভিভাবকেরা।

কানাডা থেকে মাত্র ক’দিন হলো দেশে ফিরেছেন রুবায়েত রহমান। শুক্রবারই চার বছরের মেয়ে মেহেরিন রুবায়েতকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন মেলায়। বললেন, প্রবাসে থাকা মেয়েকে বাংলা শেখায় উৎসাহ দিতেই এখানে নিয়ে আসা। প্রবাসে আমার মেয়েটা বাংলা বলতে পারলেও বাংলা বর্ণমালা একেবারেই শিখতে চায় না। ওকে বইমেলায় নিয়ে এসেছি। দেখুক বাংলা বর্ণমালার জন্য কত শিশু এসেছে। নানা রং-বেরঙের ফুল-পাখি আঁকা ছবি দেখে সে বায়না করছে নতুন বইয়ের। ওর জন্য প্রবাদ-প্রবচনের বই কিনেছি। এসব দেখে মেয়েটা যদি বাংলা শেখে!

শুধু ভাষা নয়, একে অপরের সঙ্গে বন্ধুত্ব আর সহমর্মিতাও এখান থেকই শিখবে বলে আশা করছেন গুণীজনেরা। শিশুপ্রহর প্রসঙ্গে কথা হয় উন্মাদ সম্পাদক-রম্য লেখক-কার্টুনিস্ট আহসান হাবীবের সঙ্গে। তিনি বলেন, শিশুরা এখান থেকে সবকিছুই শিখতে পারবে। তারা যেমন বইয়ের প্রতি ও জ্ঞানলাভের প্রতি আগ্রহী হবে, অনেকে একসঙ্গে পাশাপাশি থাকায় শিখবে বন্ধুত্ব আর সহমর্মিতাও।

শিশুদের বই সম্পর্কে তিনি বলেন, শিশুদের কাছে তো সব ধরনের বই ভালোলাগবে। তবে সব তো আর একসঙ্গে পড়া সম্ভব নয়। তাই অভিভাবকদের কিছু বই বেছে দিতে হবে। এক্ষেত্রে শিশুদের পছন্দকেও প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

এদিকে সকালে শিশুদের অন্যতম আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল সিসিমপুরের বন্ধুরা। হালুম, ইকরি, টুকটুকি, শিকুকে দেখতে তারা ভিড় জমায় শিশু চত্বরের সিসিমপুর মঞ্চে। এসময় সিসিমপুরের বন্ধুরাও বন্ধুত্ব করেছে তাদের সঙ্গে।

বইমেলায় ঢোকার দীর্ঘ লাইনবইয়ের প্রতি শিশুদের আগ্রহ নিয়ে শিশুপ্রহরে স্থাপিত স্টলগুলোর বিক্রেতা ও প্রকাশকরা জানান, গতবারের মেলার চেয়ে এবারের বইমেলার অনেক বেশি বই বিক্রি হচ্ছে। আর শিশুপ্রহরের এ সময়গুলোতে বিক্রি আরো বেড়ে যায়। শিশুরা নান্দনিক সব বইগুলোর প্রতি আগ্রহী বলেও জানান তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৮
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।