শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। এবারের বইমেলায় অংশ নিয়েছে ৪৯৯টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান।
মেলা উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লম্বা সময় ধরে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। স্টলগুলোতে গিয়ে পাতা উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে বিভিন্ন বই দেখেন, বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। বইমেলা প্রাঙ্গণে বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরে প্রদর্শিত ছবিও দেখেন তিনি।
মেলা উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী এবারের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত চার কবি-সাহিত্যিকের হাতে সম্মাননা তুলে দেন।
এবার কবিতায় কাজী রোজী, কথাসাহিত্যে মোহিত কামাল, প্রবন্ধ ও গবেষণায় সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে আফসান চৌধুরী বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তানি আমলের গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলো নিয়ে সংকলিত ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ডের মোড়ক উন্মোচনও করেন প্রধানমন্ত্রী। বইটির মোট ১৪ খণ্ড প্রকাশিত হবে। গত সেপ্টেম্বরেই গণভবনে প্রথম খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বইমেলা শুধু কেনাবেচা নয়, বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা, লেখক-পাঠক-বইপ্রেমীদের মিলনমেলা।
বইমেলার প্রতি নিজের ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আগে যখন ক্ষমতায় ছিলাম না- তখন বইমেলায় আসতাম, ঘুরে বেড়াতাম। এখন বলতে গেলে এক ধরনের বন্দিজীবনই যাপন করতে হয়।
তিনি বলেন, এখন আসার সুযোগ হয় না। আসতে গেলে অন্যের অসুবিধা হয়। অন্যের অসুবিধা, নিরাপত্তার কারণে যে অসুবিধা হবে সেটা বিবেচনা করে আসার ইচ্ছেটাও হয় না। অন্যেরা কষ্ট পাবে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কী- সবসময় মনটা পড়ে থাকে এই বইমেলায়। বইয়ের চাহিদা কখনো শেষ হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান যুগ ডিজিটাল যুগ, এটা ঠিক যে এখন ছেলেমেয়েরা হাতের মধ্যে একটা যন্ত্র- এখন মোবাইল ফোনেই সব পাওয়া যায়। আবার কেউ ছোট ছোট ডিভাইস ব্যবহার করেন।
তিনি বলেন, এই হাতের মধ্যে একটা যন্ত্র নিয়ে পড়ার মধ্যে সেই শান্তিটা পাওয়া যায় না। নতুন বইয়ের মলাট খুলে বইয়ের পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে পড়ার যে আনন্দ, তা সবসময় আমরা পেতে চাই। আর এজন্য বইয়ের চাহিদা কিন্তু কখনো শেষ হবে না।
ডিজিটাল লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যতই যান্ত্রিকভাবেই বই পড়ি না কেন, মলাটবন্দি বই পড়ার যে আনন্দ, সেটা অনুভব হয় না। তারপরও আমি বলবো অনলাইনে থাকলে সারাবিশ্বের কাছে খুব দ্রুত বই পৌঁছানো যায়। কাজেই ডিজিটাল লাইব্রেরি হওয়া এটা একান্তভাবে প্রয়োজন।
সরকার দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবে, বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে চলবে, দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে উন্নত সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ দেশ আমাদের বাংলাদেশ, সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।
বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বাবু, ভারতীয় কবি শঙ্খ ঘোষ (মঞ্চে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থতার কারণে কথা বলেননি কবি শঙ্খ ঘোষ। তার লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার), মিশরীয় লেখক-গবেষক মোহসেন আল আরিশি।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশের সৃজনশীল প্রকাশকদের সংগঠন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ।
স্বাগত বক্তৃতা দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৯
এমইউএম/এইচএ/