প্রতিবছর মেলাকে ঘিরে মাসব্যাপী লেখক, প্রকাশক, পাঠকের পদচারণায় মুখরিত হয় গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ। এবারো তার ব্যতিক্রম নয়, উপরন্তু ছুটির দিন হওয়ায় অন্য যেকোনবারের তুলনায় প্রথম দিনই দর্শনার্থী, বইপ্রেমী সর্বস্তরের লোকজনের ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়।
শুক্রবার (০১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রেকর্ডবার মেলার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় সর্বসাধারণের জন্য। এরপরই বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে লোকজন সারিবদ্ধভাবে প্রবেশ করেন। বিভিন্ন স্টলে ঘুরে বই দেখছেন, কেউ ক্যাটালগ সংগ্রহ করে পছন্দের লেখকদের বইয়ের খোঁজ করছেন। নিজেদের সাধ্যের মধ্যে হলে বই কিনে ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার সমৃদ্ধ করছেন। ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বাংলানিউজকে বলেন, ছুটির দিন হওয়ায় অন্যান্যবারের চেয়ে লোকজনের উপস্থিতি বেশি। বিক্রিও মোটামুটি হচ্ছে। সময় বাড়লে এর পরিমাণ আরো বাড়বে।
মেলার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, এবারের বইমেলাকে ঘিরে প্রত্যাশা অনেক বেশি। পরিসর বেড়েছে মেলার। লোকজন নির্ভয়ে এসে বই কিনবে। বিশেষ করে স্থপতি এনামুল করিমের নকশা সুন্দর হয়েছে। বাহ্যিকভাবেও পরিপাটি। সকালে পানি ছিটানো হলে ধুলো নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং পরিবেশ সুন্দর হবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ছাত্রলীগের প্রকাশনা স্টল মাতৃভূমি, যুবলীগের যুবজাগরণ, বাংলা একাডেমির স্টল, প্রথমা, তাম্রলিপি, কথাপ্রকাশসহ খ্যাতনাম প্রকাশনা স্টলগুলোতে ভিড় ছিল বেশি। ক্লাসিক্যাল লেখকদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ বেশি থাকলেও এর পাশাপাশি নতুন লেখকদের বই সংগ্রহ করছেন বইপ্রেমীরা। এছাড়া বয়সভেদে বিভিন্নজন কিনছেন বিভিন্ন রকমের বই। বাংলা প্রকাশ থেকে ‘জ্যামিতির মজার জগৎ’ বই নিয়েছেন তানভীর চৌধুরী। মেয়ে তানিজনাকে তুলে দিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, মেয়েটার গণিতের প্রতি ঝোঁক বেশি। যার কারণে এই বইটি পছন্দ হয়েছে।
অন্যদিকে প্রথমবারের মতো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে লেক-কে সংযুক্ত করায় দর্শনার্থীদের একটি বড় অংশ ছিল উদ্যানকেন্দ্রীক। লেকের পাশে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের ছাত্র আল-আমিনের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আজকে কেনার দিন না, ঘোরার দিন। ভাষার মাস উপলক্ষে বইয়ের বিশাল সমারোহ দেখতে আসা।
মেলায় অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে ‘ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ স্মারকগ্রন্থ’ নামে সম্পাদনা গ্রন্থ বের হয়েছে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির। এম আর মাহবুবের সঙ্গে যৌথভাবে সম্পাদিত এ গ্রন্থ কেনা বইপ্রেমীদের অটোগ্রাফ দিতে দেখা যায় মন্ত্রীকে।
বাংলা একাডেমি অংশে অধিকাংশ স্টল নির্মাণের কাজ শেষ করেছে। তবে পুরোপুরি সাজানোর কাজ শেষ হয়নি। লেখককুঞ্জ, লিটল ম্যাগ চত্বরে কাজ পড়ে রয়েছে। উদ্যান অংশে কয়েকটি স্টল পুরোপুরি বন্ধ দেথা যায়। এখনো সম্পূর্ণ স্টল সাজাতে পারেনি অন্যপ্রকাশ। প্যাভিলিয়নটির একটি অংশ ঢাকা রয়েছে। বিক্রয়কর্মীরা বই সাজিয়ে রাখতে ব্যস্ত। প্রকাশনাটির বিক্রয়কর্মী অভিজিৎ বাংলানিউজকে বলেন, উদ্বোধন অনুষ্ঠানের কারণে আমরা আগে প্রবেশ করতে পারিনি। যার কারণে এখনো সব বই প্রদর্শনীতে দিতে পারিনি। আশা করছি আজকেই সব প্রস্তুতি শেষ হবে।
অবসর প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী সজীব বলেন, লোক সমাগমী অনেক ভালো। তবে প্রথম দিন হওয়ায় এখনো স্টল সাজাতে পারিনি। আশা করছি কালকের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যাবে।
মেলার পর্যবেক্ষণ নিয়ে কথা সাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, মেলা এখনো গোছানো হয়নি। নতুন বইয়ের ঘ্রাণের সঙ্গে ধুলোও আছে। আমি আশা করবো কালকের মধ্যে সব প্রস্তুত হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৯
এসকেবি/জেডএস