অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এবার দৃষ্টিহীনদের ব্রেইল পদ্ধতির ৬৯টি বই নিয়ে হাজির হয়েছেন তিনি। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা’ নং স্টল ৮৩-৮৪।
ঢাকার বাইরে থেকে বইমেলায় ব্রেইল পদ্ধতির বই পড়তে আসছেন দৃষ্টিহীনরা। ১৯৭২ সাল থেকে বইমেলা শুরু হলেও দৃষ্টিহীনদের জন্য ছিল না কোনো বই।
চার বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারান সারওয়াত হোসেন বুশরা। বর্তমানে তিনি স্পর্শ ব্রেইল বইয়ের সহযোগিতায় রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ালেখা করছেন।
বুশরা বাংলানিউজকে বলেন, স্পর্শ ব্রেইল আমাদের বিনামূল্যে বই দেয়। ক্লাসরুমের বাইরে ব্রেইলে প্রকাশিত বইগুলোর মাধ্যমে আমরা দেশ, দেশের মানুষ ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পারি। ছড়া, কবিতা, গল্প, উপন্যাসসহ অন্যান্য বই পড়ার জন্য অন্যের সহযোগিতা নিতে হতো। কিন্তু ব্রেইল পদ্ধতির বই প্রকাশিত হবার কারণে নিজেই পড়তে পারি কারো সাহায্য ছাড়াই। বইমেলায় আগত অপর দৃষ্টিহীন সাদিয়া আফরিন তৃষ্ণা বর্তমানে পড়লেখা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে। স্পর্শ ব্রেইলে বই পড়ার অভিজ্ঞতার বিষয়ে তিনি বলেন, বইমেলায় অনেক ভালো লাগছে। নিজের হাতে বই পড়ার মতো আনন্দ আর নেই। ব্রেইল পদ্ধতিতে বইগুলো ছাপানোর কারণে দেশ সম্পর্কে ভালোভাবে জেনেছি। আর যেহেতু সব বই বিনামূল্যে তাই চাইলে নিয়ে যেতে পারি।
স্পর্শ ব্রেইলের প্রকশনা স্টলের ভলান্টিয়ার ও টার্কিশ হোপ স্কুলের শিক্ষিকা সামিরা সাদিক বলেন, মেলায় ব্রেইল পদ্ধতির বইগুলো বিশেষ করে দৃষ্টিহীনদের জন্যই তৈরি। তবে এ বইগুলো তৈরিতে খরচ অনেক বেশি হয়। তবুও আমরা নিজ উদ্যোগেই এগিয়ে যাচ্ছি বন্ধু-বান্ধবের সহযোগিতা নিয়ে।
স্পর্শ ব্রেইলের প্রধান উদ্যোক্তা নাজিয়া জাবীন বাংলানিউজকে জানান, বইমেলায় শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরে থেকেও অনেক দৃষ্টিহীনরা আসছেন ব্রেইলে প্রকাশিত বই দেখা ও পড়ার জন্য। এমনকি এ স্টলে চাইলে দৃষ্টিহীনরা কাজও করতে পারেন। এখানে ওরা একে অপরের সঙ্গে পরিচিতও হতে পারবে। আমরা নিজ উদ্যোগে কাজ করে যাচ্ছি। সব বই বিনামূল্যে দৃষ্টিহীনদের দিচ্ছি। কারণ দৃষ্টিহীনদের অনেকের বই কেনার সামর্থ্য নাও থাকতে পারে। ব্রেইল পদ্ধতির বই প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতি পৃষ্ঠায় আমাদের খরচ হয় দশ টাকা।
বই প্রকাশের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে জাবীন আরও বলেন, পৃষ্ঠপোষকতা পেলে স্পর্শ ব্রেইল অনেক দূর এগিয়ে যাবে। এ বছর আমরা ইংরেজিতেও বই প্রকাশ করেছি। আগামীতে আমরা আরও বড় পরিসরে কাজ করতে চাই। সবার প্রতি আমার আহ্বান থাকবে আসুন দৃষ্টিহীনদের প্রতিবন্ধী না বলে দৃষ্টিজয়ী নামে আক্ষায়িত করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৯
ডিএসএস/আরআইএস/