প্রকাশিত গ্রন্থের অধিকাংশই কবিতার বই। প্রবন্ধ নিবন্ধ ও গবেষণামূলক গ্রন্থের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে খুবই কম।
তরুণ লেখকদের বইও নজর কাড়ছে মেলায় আগত বইপ্রেমীদের। খুঁজে খুঁজে নতুন ভিন্ন রকমের বই খুঁজছেন সবাই। তবে এর বিপরীতে পাওয়া গেছে ভিন্ন চিত্র।
বইয়ের ব্যবসা কমে যাওয়া, বিতর্কিত বিষয়বস্তু, লেখার মান তুলনামূলক কম থাকা ও মুদ্রণের খরচ না ওঠাসহ নানান অজুহাতে তরুণ লেখকদের বই তেমন একটা প্রকাশ করতে আগ্রহী নন প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনা সংস্থার প্রকাশকরা। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে দেশ-বিদেশের অন্য ভাষার বই অনুবাদ করে বাংলায় প্রকাশে বেশি আগ্রহী প্রকাশকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক লেখক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার বই ছাপার খরচ আমার নিজেরই দিতে হয়েছে। বেশকিছু প্রকাশকের কাছে ধরনা দিয়েছিলাম, লাভ হয়নি। অগত্যা নিজেই উদ্যোগী হয়ে বই প্রকাশ করেছি, কিন্তু এসব তো বলা যায় না। নতুন লেখকের বই প্রকাশ করতে গেলে নানান অজুহাতে ফিরিয়ে দেন প্রকাশকরা।
আরেক লেখক মুস্তাফিজুর রহমান সকালের কাছে প্রথম বই প্রকাশের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব নিয়ে কথা বলতে চাই না ভাই। প্রথম বই প্রকাশের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে, নামী প্রকাশনায় নিজের টাকা দিয়ে বই প্রকাশ করতে হয়েছে। সম্মানীর কথা বাদই দিলাম। প্রতিষ্ঠিত প্রকাশকরা শুধু কাটতি ভালো এবং সুপরিচিত লেখকের বই ছাপাতে চান। নতুনদের চেনেন না, জায়গাও দিতে চান না।
তরুণ উদীয়মান লেখকদের বই প্রকাশের নানান বাধার কথা স্বীকার করে শ্রাবণ প্রকাশনীর প্রকাশ রবীন আহসান বাংলানিজউকে বলেন, প্রচলিত যেসব বই বিক্রি হয় না, পাঠকপ্রিয়তা নেই সেসব বই প্রকাশ আমরা করতে চাই না। গত বইমেলায় প্রায় চার হাজার বই বেরিয়েছে, এবারও বের হবে। এর মধ্যে কতজন সত্যিকারেই লেখক সে ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে। অধিকাংশই টেলিভিশনে ইন্টারভিউ দিতে, মেলায় সেলফি তুলতে আর লেখক হিসেবে পরিচিতি পাবার আশায় বই প্রকাশ করতে চান।
তরুণ লেখকদের বই প্রকাশে অনীহা কেন জানতে চাইলে প্রকাশক রবীন আহসান বলেন, বিষয় বৈচিত্র্য আছে তেমন বই আমরা ছাপি। নতুন বই মানেই নতুন লেখক নয়। নতুন লেখক হতেও সময় লাগে। ৪-৫ বছর লেখালেখির পর, পরিচিতির পর বই লেখেন। কিন্তু কোথাও কিছু লিখতে পারে না। এমনকি বাংলাও ঠিকঠাক লিখতে পারে না এসে বলে, আমরা নতুন, আমাদের বই ছাপান। এই বইমেলায় ধরেন চার হাজার প্রকাশিত বইয়ের ৩৫০০ লেখকই লেখক না, শুধুমাত্র নিজেদের পরিচিতির জন্য লেখক বলে পরিচয় দেন। ৮০/৯০ এর দশকে নতুন লেখকদের বই ২৭-২৮ বছর বয়সে বের হয়ে যেত যারা আজকের খ্যাতনামা লেখক, নানান পুরস্কার পান। আমি বলবো ভালো বই লিখলে প্রকাশকের অভাব নেই। ঢাকা শহরে প্রকাশক আছে ৬০০ কিন্তু লেখক নেই ২০০।
নতুন লেখকদের বই প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে ঐতিহ্য প্রকাশনীর নির্বাহী আমজাদ হোসেন কাজল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সবসময় নতুনদের সুযোগ দিয়ে থাকি। আমাদের নিজস্ব পর্যালোচনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাণ্ডুলিপি নির্বাচিত করে ছাপি। নতুনদের সুযোগ না দিলে তারা বড় লেখক হয়ে উঠবে কীভাবে? মাত্র তো শুরু, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি নতুন লেখকদের জায়গা দিতে।
নতুন ভালো লেখক বের না হয়ে আসার পেছনের কারণ জানতে চাইলে মাওলা ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ মাহমুদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি নব্য লেখকদের বই ছাপাতে। রিভিউ কিমিটির মাধ্যমে বই নির্বাচন করেই প্রকাশ করি, নতুন বা পুরাতন লেখক আমাদের কাছে বিষয় না। আমাদের এবারের প্রকাশিত ৮০টি বইয়ের মধ্যে ৭-৮টি বই একেবারেই নতুন লেখকদের।
এবারের বইমেলায় প্রথমবার অংশ নেওয়া চট্টগ্রামের চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনের প্রকাশক মঈন ফারুককে নতুন বই প্রকাশে তার প্রকাশনীর অবস্থান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের সব বই-ই নতুন। লেখক লিখবেন নিশ্চিন্তে, তাকে কোনো কিছু নিয়ে ভাবতে দিতে আমি চাই না। নতুন লেখকরা কবিতা দিয়েই শুরু করেন তাই আমরা কবিতার বই প্রকাশ করেছি। তার লেখা প্রকাশের সকল দায় আমাদের।
ফেসবুক গ্রুপ থেকে প্রকাশনায় আসা পেন্সিল প্রকাশনীর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বদরুল আলম চৌধুরী বুলবুল নতুনদের লেখা প্রকাশ নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমরা নতুনদের নিয়েই কাজ করি। সামনে আমরা নিজেদের উদ্যোগেই বইমেলায় আয়োজন করতে চাই। নতুন লেখদের ভাবনাচিন্তা অসাধারণ। নতুনদের হাতেই আগামীর সাহিত্য, আমাদের শুধু প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে মানের দিকটি খেয়াল রাখলেই ভালো কিছু হবে বলে বলে মনে করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৯
ডিএসএস/এমজেএফ