ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশান সিস্টেমস বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদা বিথী। বান্ধবীদের নিয়ে এসেছেন গ্রন্থমেলায়।
অন্বেষা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী হাসিবুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, মেলায় উপন্যাসের চাহিদাই বেশি। আমাদের প্রকাশনা থেকে বের হওয়া পলাশ আহমেদের শূন্যতা ও কিঙ্কর আহসানের বিবিয়ানা বইটি বেশি চলছে।
সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) অমর একুশে গ্রন্থমেলার ছিল ১৮তম দিন। রোববার ফাগুনের প্রথম বৃষ্টিতে লোকসমাগম কম হলেও এদিন ছিল সব বয়সী বইপ্রেমীদের ভিড়। ঘুরে ঘুরে কিনেছেন প্রিয় লেখকের বই, নিয়েছেন অটোগ্রাফ। প্রকাশকরাও জানালেন বিক্রিও বেড়েছে। তাম্রলিপি প্রকাশনীর আরিফ হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে মেলায় লোক কম হয়েছিল। যার কারণে বিক্রি কম হয়েছে।
এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১৩৯টি। তার মধ্যে গল্পের বই ২৫টি, উপন্যাস ১৯টি, প্রবন্ধ ৫, কবিতা ৪৭, গবেষণা ২, ছড়া ১, শিশুসাহিত্য ৫, জীবনী ৩, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ১টি, নাটক ১, বিজ্ঞান ৪, ভ্রমণ ১, ইতিহাস ৩, স্বাস্থ্য ১, রম্য/ধাঁধা ৩, ধর্মীয় ২, অনুবাদ ১, সায়েন্স ফিকশন ১ এবং অন্যান্য ১৪টি।
বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় কবি বেলাল চৌধুরী: শ্রদ্ধাঞ্জলি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি পিয়াস মজিদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি জাহিদুল হক, দিলারা হাফিজ এবং তারিক সুজাত। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কবি রবিউল হুসাইন।
প্রাবন্ধিক বলেন, বেলাল চৌধুরীর কবিতা অনুধাবন করতে হলে তার নাক্ষত্রিক জীবনের পরিচয় লাভও জরুরি; যিনি অতি অল্প বয়সে প্রগতিশীল রাজনীতি ও সাহিত্যধারার সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্রমশ এক বিশাল শিল্পজগতের ক্ষুধা অনুভব করেছেন তার অন্তর্গত সত্তায়। ফলে পঁচিশ বছর বয়সে কলকাতা গমন করে অতি সহজেই সেখানকার সাহিত্য-সাংস্কৃতিক প্রতিবেশের অনিবার্য চরিত্র হয়ে উঠেছেন।
‘কবিতাচর্চা, কৃত্তিবাস পত্রিকা সম্পাদনা এবং আরও নানাবিধ কিংবদন্তির জন্ম দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরেও তিনি নিজ সত্তার বিচিত্রমাত্রিক প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তার কবিতায় আমরা খুঁজে পাই স্বগতোক্তির মধ্য দিয়ে সমকালীন সমাজের নিপুণ ময়নাতদন্ত। কবিতাকে তার আদিম ভৌতসত্তায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি কাজ করে গেছেন নিরন্তর। এছাড়া তার অসাধারণ গদ্যগুচ্ছ ও অনুবাদকর্ম আমাদের সাহিত্যে এক স্বর্ণাভ সংযোজন হয়ে রয়েছে।
আলোচকরা বলেন, বেলাল চৌধুরী সামগ্রিকভাবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একজন অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব, যিনি তার কবিতা ও জীবনকে করে তুলেছেন অদ্বৈত। তিনি বাংলা ভাষায় লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের একজন পুরোধা অনুবাদক। সাংগঠনিক দক্ষতায় ও উদারহৃদয় মানসে তিনি ঋদ্ধ করেছেন ঢাকা ও কলকাতার সাহিত্যভুবনকে।
সভাপতির বক্তব্যে রবিউল হুসাইন বলেন, বেলাল চৌধুরী একজন কিংবদন্তির নাম। কবিতা, গদ্যচর্চা, সম্পাদনা, সাংগঠনিক দক্ষতা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য-সংস্কৃতিভুবনে তিনি পরিণত হয়েছেন একজন অনিবার্য নক্ষত্রে। তার জীবনের মতোই বিচিত্র-বর্ণিল-ব্যতিক্রম তার কবিতা ও সামগ্রিক শিল্পশস্য।
এছাড়া বাংলা একাডেমির ড. মুহম্মদ এনামুল হক ভবনের দ্বিতীয় তলায় শিশু-কিশোর চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত শিশু-কিশোরদের পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিগুলো নিয়ে আয়োজিত এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। প্রদর্শনী চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন মেলা চলার সময়।
মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের ছড়াসাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সুজন বড়ুয়া। আলোচনায় অংশ নেবেন আলম তালুকদার, আসলাম সানী, লুৎফর রহমান রিটন, আমীরুল ইসলাম এবং আনজীর লিটন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯
এসকেবি/এএ