মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমির বহেরা তলায় লিটল ম্যাগ চত্বরে এমন হতাশার কথাই শুনিয়েছেন প্রকাশকরা। তাদের মতে, লিটল ম্যাগে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অনেক প্রকাশক ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে লিটল ম্যাগ ‘স্বপ্নিল’ এর প্রকাশক সাঈফুল সাঈফ বলেন, ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে যে খরচ হয়েছে, তা বিক্রিতে উঠে আসছে না। বিজ্ঞাপন নেই, নিজের পয়সা খরচ করে লিটল ম্যাগ প্রকাশ করতে হয়। তারপর আসে মানসম্মত লেখার প্রসঙ্গটি। প্রতিষ্ঠিত লেখকরা মোটা অঙ্কের রয়্যালিটি দাবি করেন। আমরা তো সে অবস্থায় নেই, আর এটা নিয়ে ব্যবসায়িক চিন্তাও করিনি কখনও। কিন্তু এবার ভাবছি প্রকাশনা যদি করি তবে তা ব্যবসায়িকভাবেই করবো।
মেলা প্রাঙ্গণের বেহাল দশাকেও অনেকে দুষছেন লিটল ম্যাগের আবেদন হারানোর জন্য। বইমেলায় লিটল ম্যাগ চত্বরের বেহাল দশা প্রসঙ্গে ‘কবি’র সম্পাদক আনোয়ার কামাল বলেন, লিটল ম্যাগ চত্বরে এমন কিছু প্রকাশনাকে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে, যাদের আসলে নিজস্ব কোনো লিটল ম্যাগ নেই। নামকাওয়াস্তে এসব প্রকাশনীতে মানহীন বই দেখে পাঠক ফিরে যাচ্ছেন।
লিটল ম্যাগে মানসম্মত লেখা থাকলেও তার গ্রাহক কমে যাওয়ায় এই বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন ‘করাতকল’র প্রকাশক কামরুল হুদা পথিক। তার মতে, লিটল ম্যাগ প্রকাশনা অনেকটা দ্রোহের মতো। আমরা সেই দ্রোহটা করে যাচ্ছি। কিন্তু লিটল ম্যাগের গ্রাহক কমছে। লিটল ম্যাগের লেখাগুলো গ্রাহকরা গ্রহণ করতে পারছে না। অনেক সময় নিম্নমানের লেখাও প্রকাশ করতে হয়। তবে সম্প্রতি বছরগুলোতে বেশ ক’জন উঠতি লেখকের জন্য ‘বড় প্ল্যাটফর্ম’ হয়েছে এই ছোট কাগজ। বেশ কয়েকজন তরুণ লেখক ভীষণ ভালো লিখছেন। লিটল ম্যাগে তাদের সাহিত্যমান ভালো হচ্ছে বলে পরে বড় প্রকাশনী থেকেও তাদের বইও বের হচ্ছে।
স্থান পরিবর্তন করলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে মনে করেন ‘ক্ষ্যাপা’র সম্পাদক পাভেল রহমান। তিনি বলেন, যারা লিটলম্যাগ করে, তারা অধিকাংশই চাচ্ছেন লিটলম্যাগটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করা হোক। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বর্তমানে যেখানে ‘লেখক বলছি’ মঞ্চটা আছে, তার পাশে এ চত্বরটা করা যেতে পারে। লিটল ম্যাগাজিন ছিল লেখক পাঠকের একটা আড্ডার জায়গা। ওদিকে গেলে সে বিষয়টা আবার ফিরে আসবে।
তবে এসবের মধ্যে একটু ভিন্ন কথা বললেন ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘মারমেইড’ সম্পাদক তৌহিদ ইমাম। তার মতে, অনেকেই নিজের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্য হিসেবে কাজ করেন লিটল ম্যাগে। দেশের প্রথম শ্রেণির কিছু লিটলম্যাগ অনেক ভালো কাজ করলেও সেগুলোর রেফারেন্স দিয়েই অনেকে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি বা অন্যান্য বড় বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। কিন্তু তারপরও প্রকাশনাগুলো এখন বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ তাদের কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি।
আর যশোর থেকে প্রকাশিত ‘জংশন’ এর সম্পাদক নাভিল মানদার জানান, যথাযথ বিনিয়োগের অভাবে মফস্বল থেকে একসময় হারিয়ে যাবে লিটল ম্যাগ। লিটল ম্যাগে তরুণ সাহিত্যিকদের বিকাশের সম্ভাবনা থাকলেও বাজেট এখন অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজেট নেই বলে প্রকাশনাও অনিয়মিত হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
এইচএমএস/আরআর