আনিসুজ্জামান সোহেলের প্রচ্ছদে ‘বিরহসমগ্র’ প্রকাশ করেছে ‘মাওলা ব্রাদার্স’। বইটির দাম রাখা হচ্ছে ৩০০ টাকা।
‘বিরহসমগ্র’র বিষয়ে মুস্তাফিজ শফি বলেন, আমার যে ছয়টি কবিতার বই আছে, সেগুলো থেকে সবগুলো বিরহের কবিতা নিয়ে এ বই। প্রায় আড়াইশ' কবিতা আছে বইটিতে। এক সময় আমার মনে হয় যে, আমার লেখা বেশিরভাগ কবিতাই বিরহের। বিরহকে আমি আসলে উদযাপন করি। আমি মনে করি, পৃথিবীর এবং বাংলা সাহিত্যের যতো কালজয়ী কবিতা আছে, তার মধ্যে বিরহের কবিতাই বেশি। একজন কবি যে প্রেমকে সন্ধান করে বেড়ায়, সেটা বেশিরভাগ সময়ই তার কাছে অধরা থেকে যায়। কবি হয়তো নিজেই জানে না সে কী চাইছে। কবিতা যেমন অধরা মাধুরী, আমার কাছে প্রেমও সে রকমই। আমি তুমুল প্রেমের মধ্যে আছি, তারপরও মনে হয়, আমার মন হয়তো অন্যকিছু একটা চাইছে। এটা অন্তর্নিহিত ফিলোসফিক্যাল একটা বিষয় যে, মানুষ বেশিরভাগ সময় একটা বিরহের মধ্যে থাকে। এটাই আমার কবিতায় উঠে এসেছে। আমার যারা পাঠক আছেন এ বইয়ে তারা আমার সবগুলো বিরহের কবিতা একসঙ্গে পাচ্ছেন। বইটা কয়েক দিন হলো মেলায় এসেছে এবং এটি পাঠকদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করেছে।
‘ব্যক্তিগত রোদ ও অন্যান্য’ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বেশিরভাগ কবিতাই গদ্য ফরম্যাটের এবং একটু দীর্ঘ। কিন্তু এই বইয়ের কবিতাগুলো একেবারে ছোট ছোট। এ বইয়ে তিনটি সিরিজ কবিতা আছে- ব্যক্তিগত রোদ, এইসব বিষণ্ণতা ও ইজেলের পাশে। এর মধ্যে ব্যক্তিগত রোদ ও এইসব বিষণ্ণতা সিরিজে প্রতিটা দুই লাইনের কবিতা। একটাতে মনে হয় পঞ্চাশটার বেশি কবিতা আছে, আরেকটাতে ২০টি। ইজেলের পাশে যে সিরিজটি সেটার কবিতাগুলোও তিন, সর্বোচ্চ চার লাইনের। মধ্যবিত্ত আমাদের যে ছোট ছোট আবেগ, ছোট ছোট যে আনন্দ-বেদনা থাকে, সেগুলোর প্রকাশ ঘটেছে এসব কবিতায়।
‘কবির বিষণ্ণ বান্ধবীরা’ গ্রন্থ সম্পর্কে মুস্তাফিজ শফি বলেন, ‘কবির বিষণ্ণ বান্ধবীরা’ বেরিয়েছিল ৩৯টি কবিতা নিয়ে। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ১৩টি কবিতা। আর আগের বইটিতে কিছু ভুল ছিল সেগুলোও পরিমার্জন করা হয়েছে। এজন্য আমি বলছি যে, এটি পরিমার্জিত এবং পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ।
‘ভূতকল্যাণ সমিতি’ উপন্যাসের বিষয়ে এ লেখক বলেন, আমি ভূত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। এ পর্যন্ত ভূত নিয়ে চারটা শিশুতোষ বই বেরিয়েছে আমার। আমি কিন্তু ভূতে বিশ্বাসী লোক নই। আমার মনে হয় এটা দৃষ্টিভ্রম, অপটিক্যাল ইল্যুশন যাকে বলে। কিন্তু ভূত তো কল্পনায় আছে। এমনকি বিশ্ববিখ্যাত শিশুসাহিত্য হ্যারি পটার, সেটাও কিন্তু ভৌতিক কাহিনি। আমরা যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি পড়ি, সেটাও কিন্তু কলকব্জার ভূত। আমি এটাই বলি। আমাদের কল্পনায় যে ভূত আছে সেই ভূতটাকে আমি ধারণ করেছি ভালো ভূত হিসেবে। ভূতের গল্পের যে প্রথাগত ফর্ম আছে সেখানে না গিয়ে, আমি যেটা করেছি যে, আমার গল্পের ভূত মানবিকতা শিক্ষা দেবে বাচ্চাদের। তারা যেন আরেকটু মানবিক হয়। এ উপন্যাসে ভূতদের একটা সমিতি আছে, যারা নানা রকম মানবিক কাজ করে বেড়ায়- কেউ বিপদে পড়লে তাকে বাঁচায়, কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে তাকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করে, ভয়ংকর অপরাধী কেউ আছে তাকে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করে- এরকম। এভাবে ইতিবাচক গল্পের আড়ালে শিশুদের মানবিক শিক্ষা দিতে এ কাজগুলো করছি। এমন কাজ সামনে আরও করবো বলে আশা রাখি।
মুস্তাফিজ শফির প্রকাশিত অন্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- উপন্যাস: ঈশ্বরের সন্তানেরা (কথাপ্রকাশ, ২০১৭), জিন্দা লাশ অথবা রমেশ ডোম (কথাপ্রকাশ, ২০১৮); গল্পগ্রন্থ: মাধবী কিংবা বনলতার শেষ বোঝাপড়া (অন্যপ্রকাশ, ২০১৮), কবিতাগ্রন্থ: পড় তোমার প্রেমিকার নামে (ঐতিহ্য, ২০১০), দহনের রাত (ভাষাচিত্র, ২০১৩), মধ্যবিত্ত কবিতাগুচ্ছ (প্রকৃতি, ২০১৩), মায়া মেঘ নির্জনতা (অন্যপ্রকাশ, ২০১৭); শিশুতোষ: মাথা কাটা বাহিনী (গল্প), ভূতের সঙ্গে পদ্য (ছড়া), মায়াবী সেই ভূতকন্যা (গল্প, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স), রাজনীতি: চে (উৎস, ২০১১); সাংবাদিকতা: নির্বাচিত অনুসন্ধান (রয়েল); ভ্রমণ: বিলেতের বাঙাল (শুদ্ধস্বর); সম্পাদনা: একাত্তরের বিজয়িনী (শুদ্ধস্বর)।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
এইচএ/