ভাষাসংগ্রামী-লেখকদের পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে ভাষা আন্দোলন নিয়ে নতুন অনেক লেখক লিখছেন। ফলে বিভিন্ন নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে ভাষা আন্দোলনের।
এ প্রসঙ্গে ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক বাংলানিউজকে বলেন, ভাষা আন্দোলন নিয়ে অনেকেই কাজ করছেন। এটাকে সাধুবাদ জানাই। তবে নতুনদের কারও কারও বইয়ে তথ্যগত কিছু ভ্রান্তি পাওয়া যাচ্ছে। আমি বলবো- ভাষা আন্দোলনের মতো সংবেদনশীল একটি বিষয়ে লেখার আগে শুধু তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করলেই হবে না। সেগুলো সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে তারপর লিখতে হবে। ভাষাসংগ্রামীদের মধ্যে বেশিরভাগই যেহেতু এখন আর জীবিত নেই, সেহেতু যারা এখনও বেঁচে আছেন, তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য নিয়ে মিলিয়ে দেখতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বইমেলায় একুশের নতুন বই খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়েছে বেশ। মেলার প্রায় ৮০ শতাংশ স্টল ঘুরে ভাষা আন্দোলনের ওপর গোটা বিশেক নতুন বইয়ের নাম পাওয়া গেছে। প্রকাশকদের দাবি- ভাষা আন্দোলন নিয়ে পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় না। তাই বই প্রকাশ করতে পারছেন না তারা।
ভাষা আন্দোলনের বই কম হওয়ার বিষয়ে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ভাষা আন্দোলনের ওপর পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় না বলে এ বিষয়ের ওপর বই কম প্রকাশ হয়। যারা কাজ করছেন, তারা প্রায় সবাই ভাষাসংগ্রামী। পরবর্তী প্রজন্ম কাজ কম করছে। কিন্তু কাজ হওয়াটা দরকার এবং জরুরি।
তবে এসব বইয়ের প্রতি তরুণদের আগ্রহ আছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, বইমেলার নতুন প্রকাশিত বই বিষয়ক বাংলা একাডেমির বিভিন্ন ক্যাটাগরি থাকলেও ভাষা নিয়ে বইয়ের কোনো আলাদা বিভাগ নেই তাদের। এ জন্য জানা সম্ভব হয়নি নতুন বইয়ের নির্দিষ্ট সংখ্যা। বই খুব কম হওয়ায় তা ‘অন্যান্য’ বইয়ের বিভাগে যুক্ত হয় বলে জানিয়েছে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপ বিভাগ কর্তৃপক্ষ। তবে এ বিষয়ে বই কম প্রকাশ হলেও আগামীতে আলাদাভাবে তালিকা করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
ভাষা আন্দোলন নিয়ে এবারের মেলায় নতুন যেসব বইয়ের তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলো হলো- কথাপ্রকাশ থেকে ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিকের দু’টি বই ‘ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি ও কিছু কথা’ ও ‘ভাষা আন্দোলনের গল্প শোন’ এবং প্রথমা থেকে এসেছে তার ‘ভাষা আন্দোলন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া’। পাঞ্জেরী থেকে এসেছে মাহবুবুল হকের ‘গল্পে গল্পে ভাষা আন্দোলন’। আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে মোনায়েম সরকার সম্পাদিত ‘একুশের নির্বাচিত প্রবন্ধ’ এবং এম আবদুল আলীমের তিনটি বই ‘সিরাজগঞ্জে ভাষা আন্দোলন’, ‘পাবনায় ভাষা আন্দোলন’ এবং ‘ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগ-কতিপয় দলিল’। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে সুফিয়া বেগমের ‘ভাষা সংগ্রামী নারীরা’। অধ্যয়ন থেকে এসেছে রাদিন চৌধুরীর ‘ভাষা আন্দোলনের সহজ পাঠ’। বটেশ্বর বর্ণন এনেছে সুমাইয়া খানমের ‘ভাষা-আন্দোলন ও বাংলাদেশের কথাসাহিত্য’। এশিয়া পাবলিকেশন্স এনেছে ইসমাইল হোসেন বকুলের ‘রক্তের কারাগারে বন্দী ৮ই ফাল্গুন; ভাষা আন্দোলন ও রক্তঝরা একুশ’ এবং ড. গুলশান আরার ‘ভাষা আন্দোলনের কথা’। অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে গোলাম কুদ্দুছের ‘ভাষা আন্দোলন সহজ পাঠ’। সূচিপত্র থেকে প্রকাশিত হয়েছে ড. আরিফুর রহমানের ‘ভাষা আন্দোলন ও বাঙালির আত্মপরিচয়’। গৌরব থেকে প্রকাশিত হয়েছে ভাষা আন্দোলন গবেষক এম আর মাহবুবের তিনটি বই- ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কেমন করে হলো’, ‘একুশের নেপথ্য কথা’ ও ‘ভাষাসংগ্রাম কী ঘটেছিল’।
তবে বইয়ের সংখ্যা কম হলেও যেগুলো আছে, সেগুলো থেকেই নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস জানতে হবে বলে মনে করছেন বিশিষ্ট জনেরা। একইসঙ্গে জোর দিতে হবে গবেষণার ওপরে।
এ প্রসঙ্গে আহমদ রফিক তারুণ্যের উদ্দেশে বলেন, নিজের কৃষ্টি-কালচার জানতে হলে, দেশের ঐতিহ্যকে জানতে হলে ও শেকড়ের খোঁজ পেতে হলে ভাষা আন্দোলন নিয়ে তরুণ প্রজন্মকে অনেক বেশি পড়াশোনা করতে হবে। বইয়ের সংখ্যা যেহেতু কম, তাই যেগুলো আছে, সেগুলো থেকেই জানতে হবে ইতিহাস।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
এইচএমএস/টিএ