সাহিত্য আমাদের চেতনার বিকাশ ঘটায়। নতুন দিগন্তের উন্মোচন করে ইতিহাস।
বাংলা একাডেমির তথ্যমতে এবারের গ্রন্থমেলার ২৩তম দিন পর্যন্ত প্রকাশ পেয়েছে ৯৩টি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই। এগুলোর মধ্যে স্কাই পাবলিশার্স এনেছে হাবিবুর রহমান খানের ‘বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ’, আলোঘর প্রকাশনা এনেছে সৈয়দ নুরুল আলমের ‘এক কিশোর মুক্তিযোদ্ধা’, আহমেদ রিয়াজের ‘একাত্তরের কমলপ্রভা’, মুনতাসীর মামুনের ‘জয়বাংলা যেভাবে ছিনতাই হয়ে যায়’, এম এ মোমেনের ‘একাত্তরের ইন্দিরা ও প্রিয়দর্শিনী গান্ধী’, আগামী এনেছে মেজর জেনারেল কে এম সাইফুল্লাহর ‘১৯৭১: মাই ডাইরি’, হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘মুক্তিযুদ্ধ’, আলী মো. আবু নাঈম ও ফাহিমা কানিজ লাভা সম্পাদিত ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’, রফিকুল ইসলামের ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ’, আব্দুর রউফ চৌধুরীর ‘বীরের এ রক্তস্রোতে মাতার এ অশ্রুধারা’, আসাদুজ্জামানের ‘মুক্তিসংগ্রাম সমগ্র’, ও ‘মুক্তিযুদ্ধ সমগ্র’, মো. মোজাম্মেল হকের ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সংগ্রাম বন্দী জীবন’, মিলটন রহমানের ‘মুক্তিযুদ্ধের গল্প’, জলতরঙ্গ এনেছে সোলায়মান শিপনের ‘জেনোসাইড’।
এছাড়া শ্রাবণ প্রকাশনী এনেছে অমল সাহার ‘মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’, বটেশ্বর বর্ণন এনেছে মিজান সরকারের ‘কুষ্টিয়ার মুক্তিযুদ্ধ: আঞ্চলিক তথ্য’, ও জিয়াউল হকের ‘শত মুক্তিযোদ্ধার বিজয়গাথা’, নালন্দা এনেছে মানিক মোহাম্মদের ‘পাকিস্তান পাপাচারের বিষবৃক্ষ’, ও সোহেল মল্লিক সম্পাদিত ‘মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত ৫০ কিশোর গল্প’, অধ্যয়ন এনেছে রাদিন চৌধুরীর ‘মুক্তিযুদ্ধের সহজ পাঠ’, তাম্রলিপি এনেছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘রাজাকার ইজ্জত আলীর জীবনের একদিন’ ও তাহমিনা বেগমের ‘কিশোরীর যুদ্ধদিনের স্মৃতি’, প্রথমা প্রকাশন এনেছে রওশন আরা খানমের ‘শহীদ বদি ও আমার স্মৃতিতে একাত্তর’, ও মুহাম্মদ লুৎফুল হক সম্পাদিত ‘যুদ্ধগাথা ১৯৭১: ২৬টি বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের বয়ান’, বেহুলা বাংলা থেকে ইমাম মেহেদীর ‘মুক্তিযুদ্ধে কুষ্টিয়ার নারী’ ও ‘১৯৭১ ডাঁশার চাষী ক্লাব যুদ্ধ’ উল্লেখযোগ্য। গল্প, উপন্যাসের পাশাপাশি তরুন প্রজন্মের পাঠকদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বইও বেশ সমাদৃত হচ্ছে বলে।
নিয়মিত লেখকদের পাশাপাশি এক্ষেত্রে আগ্রহ প্রকাশ করছেন তরুণ লেখকরাও। তেমনি একজন তরুণ লেখক ইমাম মেহেদী। এবারের গ্রন্থমেলায় বেহুলা বাংলা থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক দু’টি বই।
কথা হলে তিনি জানান, ইতিহাসের প্রতি আগ্রহ থেকেই তরুণ লেখকরা মুক্তিযুদ্ধের প্রতি ঝুঁকছেন। আর তারা মূলত তৃণমূল পর্যায়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে, মাঠ বিশ্লেষণ করে, বিশিষ্ট লেখকদের তথ্যগুলোর সঙ্গে তার সামঞ্জস্যতা খুঁজে, দীর্ঘদিন গবেষণা করে তবেই একটি লেখা পাঠকদের জন্য তুলে ধরছেন।
কথাসাহিত্যিক ও মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক খান বলেন, যে কোনো দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পুরোপুরি প্রকাশ পেতে অনেক বছর লেগে যায়। আমাদের দেশে লেখক ও গবেষকের সংখ্যা কম নয়। প্রতিবছরই মুক্তিযুদ্ধের ওপর অসংখ্য বই প্রকাশ পাচ্ছে। এই সংখ্যাটা আরও বড় হবে বলেই আশা রাখছি।
আর কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলামের মতে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের উপর এতো বই প্রকাশ পেয়েছে, অন্য কোনো দেশে এতো বই প্রকাশের নজির নেই।
গল্প, কবিতা, উপন্যাসের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের কাটতিও বেশ ভালো বলে জানালেন বিভিন্ন প্রকাশক। তাদের এবং পাঠকদের মতে, জাতি হিসেবে সমৃদ্ধ হতে হলে অবশ্যই দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জানা জরুরি। তবে তাকে সব সময় একঘেঁয়ে না করে ইতিহাস ঠিক রেখে উপস্থাপনে আসতে পারে পরিবর্তন। বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্ম, যারা ভবিষ্যৎ উন্নত বাংলাদেশের কারিগর হবে, তাদের জন্য তা আরও বেশি জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ২১১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৯
এইচএমএস/এএ