ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

ছাপা বইয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত নয়

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২০
ছাপা বইয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত নয়

ঢাকা: বাবার পছন্দ ঘুমানোর আগে দু’পৃষ্ঠা বই পড়া। পড়তে ভালোবাসেন মেয়েও। তবে ডিজিটাল প্রজন্মের মানুষ হিসেবে পড়ার জন্য মোবাইল স্ক্রিনই যেন তার বেশি পছন্দ। যখন যেখানে খুশি মোবাইল বের করে পড়ে নেওয়া যায় বিশ্বের যে কোনো বই। তারপরও নতুন বইয়ের মিষ্টি ঘ্রাণ তাক আন্দোলিত করে। এতে নাকি মাদকতা আছে। তাইতো বাবার সঙ্গে বইমেলায় ঘুরতে গিয়ে কিনে নেন নিজের পছন্দের বইও।

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কথা হয় বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ধানমন্ডিবাসী মতিয়ার রহমান আর তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে আফসানা আফরিন দিশার সঙ্গে। প্রশ্ন তোলা হয়, ডিজিটাল ফরমেটের বইয়ের যুগে ছাপা বইয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকার কিনা? 

মতিয়ার রহমান ছাপা বইয়ের পক্ষ নিয়ে বলেন, গভীর মনোযোগ দিয়ে আপনি যখন একটি বই পড়ার জন্য হাতে নেবেন, তার স্পর্শে আপনার মস্তিষ্ক, কল্পনাজগত ও আবেগগুলোর অনেক বেশি জীবন্ত হয়ে উঠবে।

সক্রিয় হয়ে উঠবে আপনার ইন্দ্রিয়গুলো। নতুন বা পুরনো বইয়ের ঘ্রাণ আপনাকে টেনে নেবে গভীর থেকে গভীরে। ছাপা বই মনোযোগ আরও গভীর করে তোলে। আমাদের দেশের প্রকাশনাগুলো এখনও তো সব বই ডিজিটাল ফরমেটে আনেনি বা আনতে পারেনি, ফলে সব মিলিয়ে ছাপা বইয়ের ব্যাপারে সবারই একটা ভালো লাগা আর নির্ভরশীলতা আছে।

অন্যদিকে ই-বুক বা ডিজিটাল বইয়ের পক্ষ নিয়ে মতিয়ার রহমানের মেয়ে আফসানা আফরিন দিশা বলেন, ডিজিটাল বইয়ের সুবিধা হলো সহজলভ্যতা। ইন্টারনেট সার্চ করে খুব সহজেই বিশ্বের যে কোনো বই মুহূর্তেই সংগ্রহ করা যায়। তবে এটা ঠিক যে, ছাপা বইয়ের ঘ্রাণ সুন্দর, একতা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। কেমন যেন একটা মাদকতা!

একুশ শতকের দুনিয়ায় সবার হাতে হাতে স্মার্ট মোবাইল, নোটপ্যাড, ফহরে ঘরে কম্পিউটার, ল্যাপটপ। সব মিলিয়ে সত্যি প্রশ্ন জাগে এই প্রেক্ষাপটে ছাপা বইয়ের ভবিষ্যৎটা কি হুমকির মুখে? অনেকেরই ধারণা প্রযুক্তির অবিশ্বাস্য উন্নতির ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে ছাপা বইয়ের ভবিষ্যৎ। আবার অনেকেরই ধারণা ই-বুকের যুগেও বিশ্বব্যাপী ছাপা বইয়ের প্রতি মানুষের আকর্ষণ কমেনি। ফলে ই-বুক ছাপা বইকে বাজার থেকে উধাও করবে, এমন মনে করার কোনো কারণ নেই।  

মেলার স্টল ঘুরে বই দেখছেন বইপ্রেমীরা।  ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল

একই অভিমত জানান মেলায় অংশ নেওয়া সাহিত্যদেশ প্রকাশনার প্রকাশক মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ই-বুক মুদ্রিত বইয়ের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে বলে আপাতত মনে করছি না। আর অদূর ভবিষ্যতে যদি এমনটাই হয়, তবে সে ক্ষেত্রেও প্রকাশকরাই তো সে সব বই প্রকাশ করবে এবং একটি বিনিময়ের মাধ্যমেই বইগুলো সংগ্রহ করতে হবে।

তরুণ শিশু সাহিত্যিক রণজিৎ সরকার ছাপা বইয়ের পক্ষ নিয়ে বলেন, মুদ্রিত বইয়ের চাহিদা সবসময়ই থাকবে। ই-বুকের দিকে কিছু তরুণ পাঠকের দৃষ্টি থাকলেও মুদ্রিত বই কখনো বিলুপ্ত হবে না। কাজের সূত্রে বা রেফারেন্স হিসেবে কোনো বই ব্যবহার করতে হলেও পাঠককে মুদ্রিত বইয়ের কাছেই ফিরতে হবে।

রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) মেলার উদ্বোধনী অনুশ্তহানেও এরকমই বলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।

আনিসুজ্জামান বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলার পরিসর, বই বিক্রির পরিমাণ, প্রকাশকের সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। বাংলা একাডেমির বাইরেও প্রকাশকরা একক বা যৌথভাবে নানা সময়ে বইমেলার আয়োজন করে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলা শহরে বইমেলার নানা রকম আয়োজন দেখা যায়। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে বইয়ের সমাদর বিন্দু মাত্র কমেনি। ই-বুক মুদ্রিত বইকে বাজার থেকে উধাও করবে এরকম মনে করার কোন কারণ নেই বলেই আমি মনে করি। বইমেলার মেলার ব্যাপারে জনমানুষের বিপুল আগ্রহই প্রমাণ করে মুদ্রিত বইয়ের ভবিষ্যৎ মোটেও অনিশ্চিত নয়।

এদিকে সোমবার বইমেলার দ্বিতীয় দিনেই দেখা যায় মেলা বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। অনেকেই এসেছেন মেলায়, কিনছেন পছন্দের বই। সন্ধ্যার পর ভিড় আরও বাড়তে থাকে, অনেকেই নতুন বইয়ের গন্ধে ছুটে আসোতে থাকেন বইমেলায়। অন্যদিকে ব্যাগভর্তি বই নিয়েও বাড়ি ফিরতে দেখা যায় অনেককে।

আরও পড়ুন>>> একুশে বইমেলা: মলাট উল্টে কাটছে সময় 

বাংলাদেশ সময়: ২১২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২০
এইচএমএস/এইচজে 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।