ঢাকা: আগামী বছরের অমর একুশে গ্রন্থমেলা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিতে যাচ্ছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। তবে প্রতিষ্ঠানটির এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারেননি প্রকাশকরা।
প্রকাশকদের সঙ্গে আলোচনা না করে বইমেলা স্থগিত করার সিদ্ধান্তকে স্বেচ্ছাচারিতা বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আয়োজিত হয়েছিল বইমেলা। মেলা শেষ হওয়ার পর দেশেও হানা দেয় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। বর্তমানে এই বৈশ্বিক মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। প্রতিদিন বাড়ছে সংক্রমিত রোগী ও প্রাণহানির সংখ্যা।
এই পরিস্থিতির মধ্যে অমর একুশে গ্রন্থমেলা নিয়ে বরবরই ছিল অনিশ্চয়তা। মেলা মানেই লোকসমাগম। শেষ পর্যন্ত সেই আশঙ্কা সত্য করে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি বইমেলা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শুক্রবার (১১ ডিসেম্বর) রাতে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে করোনাভাইরাসের কারণে আগামী অমর একুশে গ্রন্থমেলা স্থগিত করা হয়েছে। আপাতত ভার্চ্যুয়ালি মেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাংলা একাডেমির এমন সিদ্ধান্তের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। বাংলা একাডেমিকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন অনেকেই।
এ ব্যাপারে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ফিজিক্যালি অমর একুশে গ্রন্থমেলা আয়োজন করা সম্ভব নয়। এ কারণে আমরা মেলা পিছিয়ে দেওয়ার জন্য রোববার (১৩ ডিসেম্বর) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবর একটি চিঠি পাঠাব। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, আমরা মেলা ফিজিক্যালি না করে ভার্চ্যুয়ালি করব।
তিনি বলেন, যেহেতু ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের মাস, সেহেতু আমাদের কিছু আনুষ্ঠানিকতা থাকবেই। সেই সব আয়োজন ভার্চ্যুয়ালিই করা হবে। সেই সাথে ভার্চ্যুয়ালি একটি বইমেলার আয়োজন করার চিন্তা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা ফিজিক্যালি মেলা আয়োজন করব।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, মেলা পরিচালনার জন্য একটি কমিটি রয়েছে, যে কমিটির আমিও একজন সদস্য। সেই কমিটির বৈঠকেই মেলার বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত হয়। এই কমিটির বৈঠক না করে বইমেলা স্থগিত করার সিদ্ধান্তটি স্বেচ্ছাচারিতা।
তিনি বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর মেলায় অংশগ্রহণের জন্য প্রকাশকদের কাছ থেকে টাকা জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। অনেক প্রকাশক টাকা জমা দিয়েছেন এবং আগামী বইমেলায় অংশ নেওয়ার জন্য টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এই ক্ষতিপূরণ কে দেবে? আমরা কোনভাবেই বাংলা একাডেমির এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারছি না।
প্রকাশকদের সঙ্গে কথা না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি প্রথমে সিদ্ধান্ত নেবে। তারপর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় অর্থাৎ সরকারের সঙ্গে আলাপ করা হবে। তারপরই প্রকাশকদের সঙ্গে আলাপ করা হবে। আমার মতে, এই মুহূর্তে ফিজিক্যালি মেলা আয়োজন করার পরিস্থিতি নেই। সেজন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক ও অনন্যা প্রকাশনীর কর্ণধার মনিরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বাংলা একাডেমির এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা একমত নই। বাংলা একাডেমি আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা তাদের এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি জানাই।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়। লন্ডন ও নিউইয়র্কেও ভার্চ্যুয়ালি বাংলাদেশ বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলোতেও সাফল্য আসেনি। সুতরাং ভার্চ্যুয়ালি মেলার সিদ্ধান্তটি সঠিক নয়।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২০
ডিএন/এমজেএফ