ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

ছুটির দিনে প্রাণোচ্ছ্বল বইমেলা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২২
ছুটির দিনে প্রাণোচ্ছ্বল বইমেলা ছবি: শাকিল আহমেদ 

ঢাকা: ছুটির দিন মানে বইমেলার অন্যরকম একদিন। নগরের কর্মব্যস্ত মানুষ ছুটির দিনে একটু অবসর পেয়ে ছুটে যান প্রাণের বইমেলায়।

ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি আর সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পাশাপাশি ঘুরে ঘুরে কিনেন পছন্দের লেখকদের বই।

শুক্রবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সকাল ১১টায় মেলার দ্বার খোলার সঙ্গে সঙ্গেই পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে মেলায় হাজির হন রাজধানীবাসীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। বিকেল গড়াতেই প্রাণের মেলা হয়ে ওঠে মানুষের মেলা। বইপ্রেমীদের সবর পদচারণায় বইমেলা জুড়ে দেখা যায় প্রাণোচ্ছ্বাস।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকালে মেলার দ্বার খোলার পর থেকেই আসতে শুরু করে শিশু-কিশোরের দল। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অমর ২১শে বইমেলার মূল আকর্ষণ ছিল শিশু চত্বর। বাবা-মায়ের হাত ধরে আসা শিশুদের পদচারণায় মেলার শিশু চত্বর যেন পরিণত হয়েছে কচি-কাঁচার মেলায়। শিশু চত্বরে সিসিমপুরের হালুম, ইকরি, শিকু ও টুনটুনির পরিবেশনা শিশুদের আনন্দে যুক্ত করেছে আলাদা মাত্রা। শিশুদের হই-হুল্লোড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যস্ততাও থাকে বইয়ের শিশু চত্বরের স্টলগুলোতেও। অভিভাবকদের হাত ধরে এক স্টল থেকে আরেক স্টলে ঘুরে বই কিনতেও দেখা গেছে শিশুদের। ভূতের গল্প, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, রূপকথা, ঠাকুমার ঝুলিসহ আঁকার বইয়ের প্রতি শিশুদের আকর্ষণ বেশি বলে জানিয়েছেন বইয়ের স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধিরা। আলাদাভাবে শিশুদের নজরে আছে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক পপআপ বইগুলোও।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মা শারমিন আক্তারের হাত ধরে মেলায় এসেছিল লিটল গার্লস স্কুলের শিক্ষার্থী নুসরাত ইসলাম। নুসরাত বলে, ছোটবেলা থেকেই মা কিংবা বাবার সঙ্গে মেলায় আসি। সিসিমপুরের সঙ্গে খেলতে খুব আনন্দ লাগে। মা কয়েকটি বইও কিনে দিয়েছেন।

ছোটদের মেলা প্রকাশক ফয়সাল বলেন, ‘অন্য শুক্রবারগুলোর তুলনায় আজ সকালে পাঠক বেশি। বলতে গেলে সকাল থেকেই মেলা জমে উঠেছে। বিকেলে ভিড় আরও বাড়বে। ’

এদিকে বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই বাড়তে থাকে বড়দের উপস্থিতি। বিকেলে বইপ্রেমীদের ভিড়ে মেলায় ঠাঁই পাওয়াই যাচ্ছিল না। মেলায় উপস্থিতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেচাকেনা বাড়াই খুশি প্রকাশকরাও।

স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে মেলায় এসেছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শামসুল ইসলাম। তিনি বলেন, ইচ্ছে থাকলেও কর্মদিবসে মেলায় আসা যায় না। তাই ছুটির দিনে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় এসেছি। মেলায় এলে অন্যরকম ভালোলাগা অনুভব হয়। অনেকগুলো বই কিনেছি। আরও কিনব।

একাধিক প্রকাশকরা জানান, অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় এবার শুরু থেকেই মেলার উপস্থিতির পাশাপাশি বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। বাকি দিনগুলোতেও বেচাকেনা আরও বাড়বে। আমরা আশা করছি ইতিহাসের সেরা মেলা হবে এবার।

শুক্রবার বইমেলায় নতুন বই এসেছে ২২০টি। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে অনন্যা থেকে এসেছে ইমদাদুল হক মিলনের কিশোরগল্প ‘রমাকান্ত কামারের মজার কাণ্ড’ ও মুনতাসীর মামুনের বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বই ‘বঙ্গবন্ধুর জীবন: মুক্তির অভিযাত্রা (৫ম খন্ড)’, সময় প্রকাশন থেকে মোস্তাফা জব্বারের গবেষণা ‘বাংলা ভাষার ডিজিটাল যাত্রা’, ও দিলীপ চক্রবর্তীর বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘সক্রেটিস থেকে কার্ল মার্কস মহাত্মা গান্ধী থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান: তাদের স্মরণীয় বিচার কথা’, চন্দ্রছাপ থেকে আনোয়ারা সৈয়দ হকের উপন্যাস ‘ঘুম’, প্রত্যয় প্রকাশন থেকে সেলিনা হোসেনের উপন্যাস ‘ঝর্নাধারার সঙ্গীত’, ঐতিহ্য থেকে পিয়াস মজিদের কাব্যগ্রন্থ ‘এইসব মকারি’, অশোক দাশ গুপ্তের গল্প ‘নাম জানা নেই’ ও মঈন মুনতাসীরের কাব্যগ্রন্থ ‘ফিরে এসো সুবর্ণরেখা’, দেশজ প্রকাশন থেকে আল মাহমুদের ছড়া ‘মিলের খেলা’, বিদ্যাপ্রকাশ থেকে তাজুল মোহাম্মদের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই ‘মুক্তির এ বারতা আনলে যারা’, কাব্যকথা থেকে আসাদ চৌধুরীর গল্প ‘গল্প থেকে গল্প’, পাঠক সমাবেশ থেকে মোজাফ্ফর হোসেনের প্রবন্ধ ‘প্রবন্ধ সংগ্রহ’।

বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ: গাজীউল হক ও সিকান্দার আবু জাফর’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাসির আহমেদ।  

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আমিনুর রহমান সুলতান, আলফ্রেড খোকন এবং তারেক রেজা। সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মাসুদুজ্জামান এবং আসাদ আহমেদ। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী অনন্যা সাহা এবং রত্না সিনহা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল রাখাল কিশোর ঠাকুরের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ত্রিবেণী গণসাংস্কৃতিক সংস্থা’ এবং রুবিনা আজাদের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘উদয় দিগঙ্গন’-এর পরিবেশনা। এছাড়াও লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের বই নিয়ে আলোচনা করেন আবদুস সেলিম এবং বিধান রিবেরু।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২২
এইচএমএস/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।