ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বাজেট

দৃষ্টি বাজেটে

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ চান বিনিয়োগকারীরা

এস এম এ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৬ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৩
কালো টাকা সাদা করার সুযোগ চান বিনিয়োগকারীরা

ঢাকা: আস্থা সংকট ও মন্দা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে দেশের পুঁজিবাজার। তলানিতে থাকা পুঁজিবাজারে লেনদেনের গতি ফিরেছে।

গত দুই দিনে দেশের পুঁজিবাজারে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। সূচকের অবস্থানও ইতিবাচক রয়েছে। শুধু তাই নয়, ফ্লোরে আটকে থাকা কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারও লেনদেনে ফিরেছে।  

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিরলস চেষ্টায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সংকট দূর ও বাজারে লেনদেনের গতি বাড়ছে। বাজারের এই গতি ধরে রাখতে আগামী বাজেটে বিনা শর্তে কালো টাকা বিনিয়োগসহ বিশেষ প্রণোদনা চান বিনিয়োগকারীসহ সংশ্লিষ্টরা।  

বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন। পুঁজিবাজার নিয়ে বাজেটে কী ঘোষণা আসছে, তা বিনিয়োগকারীদের ভাবিয়ে তুলেছে। দেশের অর্থনীতির অন্য সব খাতের মতো পুঁজিবাজারও জাতীয় বাজেটের একটি অংশে পরিণত হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে জাতীয় বাজেটের একটি বড় অংশজুড়ে ছিল পুঁজিবাজার।

কেমন বাজেট হচ্ছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকছে, বাজেট পুঁজিবাজার-বান্ধব হচ্ছে কি না, এ নিয়ে ভাবনার কমতি নেই। তবে সরকারের মেয়াদের শেষ এবং নির্বাচনী বছর হওয়ায় বৈশ্বিক মন্দায় ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের কথা মাথায় রেখে বাজেটে বিশেষ সুবিধার কথা দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।  

তাদের মতে, বাজারে লেনদেনের চাঙাভাব ধরে রাখতে পুঁজিবাজারের জন্য বিশেষ তহবিলের প্রয়োজন রয়েছে। এই তহবিল আইসিবির মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে বাজারে তারল্য বাড়াবে এবং বাজারে গতিশীলতা ধরে রাখবে বলেও মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবদুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের কাছে আমরা বিশেষ সুবিধা দাবি করছি। বিশেষ করে, আমরা চাই সরকার ১০ হাজার কোটি টাকার একটি ফান্ড দেবে, যাতে বিনিয়োগকারীরা সহজ শর্তে ঋণ নিতে পারে।

তিনি বলেন, সরকার এই রকম ফান্ড আইসিবিকে বরাদ্দ দিতে পারে, যাতে  আইসিবির মাধ্যমে মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারদের কাছ থেকে বিনিয়োগকারীরা ৫ শতাংশ সুদে সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ পান।

তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ১৫ শতাংশ করা এবং লভ্যাংশের ওপর থেকে দ্বৈত কর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এখন সময়ের দাবি। শুধু তাই নয় অপ্রদর্শিত অর্থ ১০ শতাংশ কর দিয়ে করে বিনা শর্তে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। এতে পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়বে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজিবাজার অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

কাজী আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমরা বাজেটে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ১৫ শতাংশ করার দাবি জানাচ্ছি। এতে করে ভালো ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে।

বাজেটকে পুঁজিবাজার বান্ধব করতে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ডিএসই বলেছে আগামী বাজেট পুঁজিবাজার বান্ধব করতে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির কর হার কমিয়ে তালিকা-বহির্ভূত কোম্পানির করহারের ব্যবধান ১২ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করতে। বর্তমানে এই কর হারের ব্যবধান সাড়ে ৭ শতাংশ।  

বর্তমানে ব্যাংক-বিমা, টেলিকম ও তামাক খাতের কোম্পানি ছাড়া তালিকাভুক্ত অন্য কোম্পানিগুলোকে ২০ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। ডিএসই এই করহার ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে। এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্ত স্বল্প মূলধনী কোম্পানির তালিকাভুক্তির সময় থেকে ৫ বছর পর্যন্ত কর হার কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে। ডিএসইর প্রস্তাবনায় সুকুকসহ সব ধরনের বন্ডের মুনাফা বা সুদ আয়ে কর অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বাজারের গতি বাড়বে বলেও মনে করছে সংস্থাটি।

অন্যদিকে বিশেষ কর প্রদানের মাধ্যমে বৈধভাবে উপার্জিত অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া কথা বলেছে দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।

আগামী বাজেট পুঁজিবাজার বান্ধব হবে বলে প্রত্যাশা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। বাজার ধসের পর বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অপ্রর্দশিত অর্থের বিনিয়োগ প্রয়োজন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আতাউল্লা নাইম বাংলানিউজকে বলেন, আসন্ন বাজেট পুঁজিবাজার বান্ধব হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি। আমাদের প্রত্যাশা বাজেটে বি না প্রশ্নে কালো টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দিলে তারল্য সংকট বহুলাংশে কাটবে, অর্থনীতির মুলধারায় এই অর্থ যুক্ত হবে। শুধু তাই নয়, আগামী বাজেটে আমরা পুঁজিবাজারের দ্বৈত করারোপ প্রত্যাহার করারও দাবি জানিয়েছি।

মা সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী সাজিদ বলেন, আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারী যারা বাজারে নিয়মিত আসি, তাদের আশা বাজার যাতে ভালো হয়। বাজার ভালো হলে বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন। তাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা উচিত। পুঁজিবাজারে অপ্রর্দশিত অর্থ বিনিয়োগের ঘোষণা এলে অনেক নতুন বিনিয়োগকারী বাজারে আসবে এবং বাজার স্থিতিশীলতার পথে এগিয়ে যাবে।

তবে বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজারে পতনের ফলে অনেক বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তাদের কথা চিন্তা করেই আগামী বাজেটে সরকারকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকারের ইতিবাচক সিদ্ধান্তে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরবে এবং বিনিয়োগকারীরা তাদের হারানো পুঁজি ফিরে পাবেন- এমনটাই প্রত্যাশা করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৯ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৩

এসএমএকে/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।