ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

‘প্রতিবন্ধীদের চাহিদার তুলনায় বাজেট খুবই অপ্রতুল’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৩
‘প্রতিবন্ধীদের চাহিদার তুলনায় বাজেট খুবই অপ্রতুল’ ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে প্রতিবন্ধীদের জন্য মোট ৩ হাজার ৭১০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যা তাদের চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে মনে করছে এ জনগোষ্ঠীর মানুষদের নিয়ে কাজ করা ১১টি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)।

রোববার (৪ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের মওলানা অকরম খাঁ হলে 'জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থান' শীর্ষক বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়া সভায় এ কথা জানান এনজিওগুলোর কর্মকর্তারা।

প্রতিক্রিয়া জানানো বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো হলো- অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন, ডিজঅ্যাবল্ড চাইল্ড ফাউন্ডেশন, প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় পরিষদ, জাতীয় তৃণমূল প্রতিবন্ধী সংস্থা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, গ্লোবাল এফেয়ার্স কানাডা, সীতাকুন্ড ফেডারেশন, এসডিএসএল, টার্নিং পয়েন্ট ফাউন্ডেশন, মামা ক্যাশ ও উইমেন উইথ ডিজঅ্যাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন।

সভায় অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা বলেন, প্রতিবন্ধিতা খাতে মোট বরাদ্দ ৩ হাজার ৭১০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। যা সামাজিক নিরাপত্তা খাতের মাত্র ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং মোট বাজেটের ০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। চাহিদার তুলনায় এ বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল।

তিনি বলেন, বাজেটে বেশ কয়েকটি ভাতা বৃদ্ধি পেলেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাসিক ভাতা অপরিবর্তিত (৮৫০ টাকা) রয়েছে। যা বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জীবন যাত্রার ব্যয় বিবেচনায় খুবই সামান্য। গত পাঁচ বছর ধরে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির সংখ্যাও অপরিবর্তিত রয়েছে (এক লাখ), যা যৌক্তিক নয়।

আলবার্ট মোল্লা আরও বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বাজেট বরাদ্দ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কেন্দ্রিক। সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের ১১৫টি খাতের মধ্যে ১০টিতে প্রতিবন্ধিতা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যার ৮টি সমাজকল্যাণ, ১টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ১টি যৌথভাবে মহিলা ও শিশু এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ধারণায় মন্ত্রণালয় ভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ খুবই প্রয়োজন।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়ন ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাজেটে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, স্মার্ট সোসাইটি বিনির্মাণে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য 'কাউকে পেছনে ফেলে নয়' এ অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এবং সবার অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার কথা অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেছেন। কিন্তু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে তার প্রতিফলন এ বাজেটে নেই। বাজেটে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ, জাতীয় আইন, নীতিমালা, গ্লোবাল ডিজএবিলিটি সামিট ২০২২ এ দেওয়া সরকারের প্রতিশ্রুতি ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিফলন নেই।

প্রতিক্রিয়া সভায় প্রতিবন্ধীদের দক্ষতা উন্নয়ন ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ১১টি দাবি তুলে ধরেন ডাব্লিউডিডিএফ এর নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টি।

দাবিগুলো হলো-

১। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাসিক ভাতা জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল এবং অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জীবনযাত্রার ব্যয় সূচকের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা।

২। অতি গুরুতর মাত্রার প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য কেয়ারগিভারের জন্য ভাতা কার্যক্রম চালু করা;

৩। কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রকল্প গ্রহণ করা। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ এবং প্রশিক্ষণ শেষে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে সরকারের উদ্যোগ গ্রহণ। সরকারি চাকরিতে কোটা বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এবং বেসরকারি নিয়োগকর্তাদের উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন ধাপে কর রেয়াতের সুবিধা রাখা।

৪। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলন ও যোগাযোগ সহজ করতে প্রতিবন্ধিতার ধরন ও চাহিদা মোতাবেক মানসম্পন্ন সহায়ক উপকরণ যেমন- হুইলচেয়ার, ট্রাই-সাইকেল, বিশেষায়িত স্কুটার, ওয়াকার, সাদাহুড়ি (ম্যানুয়াল ও ডিজিটাল), ক্র্যাচ, হিয়ারিং এইড, বহনযোগ্য র‍্যাম্প, ম্যাগনিফায়িং গ্লাস, প্রসথেটিক-অর্থোটিক (কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও অঙ্গসহায়ক উপকরণ), স্পীচ টু টেক্সট, টেক্সট টু স্পীচ, এক্সেসিবল মোবাইল অ্যাপস, ব্রেইল প্রিন্টার, কী-বোর্ড, হেড পয়েন্টার, জয়স্টিক, লার্জ প্রিন্ট ম্যাটেরিয়াল, স্ক্রীন রিডিং সফটওয়ার ইত্যাদি আমদানির উপর শুল্কমুক্ত সুবিধা এবং দরিদ্র প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিনামূল্যে সরবরাহ করার জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখা। এছাড়াও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঞ্চয়পত্র, এফডিআর, ডিপিএস এর উপর সকল প্রকার ভ্যাট-ট্যাক্স ও সার চার্জ প্রত্যাহার করা।

৫। সব প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার আওতায় আনতে ও ঝড়ে পড়া রোধ করতে শতভাগ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে শিক্ষা উপবৃত্তির আওতায় আনা। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্যেও আলাদা উপবৃত্তি চালু করা। শিক্ষা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামো ও তথ্যগত প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করাসহ শিক্ষা সহায়ক উপকরণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপযোগী করা যেমন- ব্রেইল বই, এক্সেসিবল ই-বুক ইত্যাদি, একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কারিকুলামে ইশারা ভাষা ও ব্রেইল পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করা এবং পাঠদান ও মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপযোগী করতে বাজেট বরাদ্দ রাখা।

৬। শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের জন্য বাংলা ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপনে বাজেটে বরাদ্দ রাখা।

৭। সরকারি ও বেসরকারি সবক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অবকাঠামোগত ও তথ্যগত প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা। প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য উপযোগী পাওয়ার র‍্যাম্প বা ম্যানুয়াল র‍্যাম্পযুক্ত বাস আমদানি এবং তৈরি, প্রবেশগম্য আশ্রয় কেন্দ্র ও গৃহহীনদের আবাসন, সাইনেজ ব্যবহার, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল, যাতায়াত ব্যবস্থা ইত্যাদি প্রবেশগম্য করা। স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করতে সকল ওয়েবসাইট, সরকারি ই-সার্ভিস, ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্র ইত্যাদির অবকাঠামোগত ও তথ্যগত প্রবেশগম্যতার জন্য বাজেট বরাদ্দ করা।

৮। সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপযোগী ও প্রবেশগম্য করা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষায়িত স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা।

৯। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য মন্ত্রণালয় ভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ রাখা।

১০। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, সহিংসতা ও নির্যাতন হ্রাসকল্পে তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাপক সচেতনতা কার্যক্রম গ্রহণে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনগুলোর জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখা।

১১। সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের দক্ষতা উন্নয়ন, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান কার্যক্রমের বরাদ্দকৃত বাজেট থেকে একটি অংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানে ব্যয় করা, নারীদের দক্ষতা উন্নয়ন, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নে সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে যে কর্মসূচী রয়েছে তার প্রত্যেকটিকে উপকারভোগী নির্বাচনে প্রতিবন্ধী নারীদের অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা প্রদান করা।

অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মহুয়া পালের সভাপতিত্বে প্রতিক্রিয়া সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ডিজঅ্যাবল্ড চাইল্ড ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাসরিন জাহানা ও সুইড বাংলাদেশের মহাসচিব মো. মাহবুবুল মনির।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২১ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০২৩
এসসি/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।