ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বাজেট

বড় বাজেট মানে বড় আতঙ্ক!

মেহেদী হাসান পিয়াস, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৪ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৪
বড় বাজেট মানে বড় আতঙ্ক!

ঢাকা: জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার উত্থাপন করা হয়েছে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। আগামী দিনগুলোতে এ বাজেটের প্রভাব পড়বে মানুষের আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশে।

তারপরও সাধারণ মানুষের মাঝে কোনো ভাবনাই নেই বাজেট নিয়ে।
 
বাজেট কেমন হয়েছে জানতে চাইলে বেশিরভাগ মানুষের উত্তর, তারা বাজেট বোঝেন না। অনেকে বলেছেন, বাজেট মানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া। রাজনৈতিক হালচাল কিংবা অর্থনীতির খোঁজ-খবর যারা একটু-আধটু রাখেন তাদের উত্তর হচ্ছে, বাজেটে আসলে কিছু যায় আসে না। প্রতি বছর বাজেটের পর যে অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপে এ বাজেটেও তার ব্যতিক্রম কিছু নেই।
 
বাজেট কিংবা অর্থনীতির জটিল মারপ্যাঁচ না বুঝলেও প্রায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা একটাই, একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকা। যতো বড় বাজেটই হোক না কেন, জীবন-জীবিকায় নতুন করে খরচের খড়গ নেমে আসুক, তা কেউই প্রত্যাশা করেন না।       
 
বৃহস্পতিবার বিকেলে শিক্ষা ভবনের মোড়ে কথা হয় রিক্সাচালক লাল চান মিয়ার সঙ্গে। বাজেট সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তার সোজা-সাপটা উত্তর, আমরা গরিব মানুষ, বাজেট-টাজেট বুঝি না।
 
নিম্ন আয়ের মানুষদের সবারই লাল চান মিয়ার মতোই উত্তর, তারা বাজেট বোঝেন না। তবে কেউই যে বোঝেন না তা কিন্তু নয়। হাইকোর্ট মাজারের সামনে চা, সিগারেট বিক্রেতা মো. হাফিজ কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করেই জানালেন তার বাজেট প্রতিক্রিয়া।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বাজেটের আগেও আমাদের লাভ নাই, পরেও না। আইজ কেবল বাজেট করতাসে সরকার। অথচ একমাস আগেই সিগারেটের দাম বাড়ায়া দিসে মহাজনেরা। আমরা সারাদিন কয় প্যাকেট সিগারেট বিক্রি করি? লাভ সেই আগেরটাই। অথচ তারা তো বাড়তি দামে শত শত কার্টুন বিক্রি করতাসে। আমরা বেচতে গেলে কাস্টমারের সঙ্গে প্রতিদিন বাক-বিতণ্ডা।
 
এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্লান সেন্টারে ‘স্প্লেস নেটওয়ার্কিং’ দোকানের স্বত্ত্বাধিকারী মাহবুবুর রহমান সবুজ এক বছর ধরে তথ্য প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট ব্যবসায় নেমেছেন। প্রথম অবস্থায় লাভের মুখ না দেখলেও গত কয়েক মাস ধরে ব্যবসা ভালোই চলছে। লাভ না হলেও লোকসান গুণতে হচ্ছে না।
 
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় তিনিও কিছুটা ক্ষোভ ঝাড়লেন বাংলানিউজের কাছে। তার ভাষায়, সরকার নিজেদের ডিজিটাল বলে দাবি করলেও কথা এবং কাজে মিল নেই। শুনেছি এ বাজেটে কম্পিউটার, ইন্টারনেট ছাড়াও ইলেক্ট্রেনিক দ্রব্যসামগ্রীর ওপর কর বাড়ানো হয়েছে।
 
যদি আসলেই কর বাড়ানো হয়ে থাকে তবে বিশেষ একটি শ্রেণি ছাড়া সাধারণ মানুষকে প্রযুক্তিমুখী করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া আমরা যারা স্বল্প পুঁজির ব্যবসায়ী তাদের পথে বসা ছাড়া উপায় নেই।
 
ওয়ারির বনগ্রামে থাকেন ব্যংক কর্মকর্তা (ক্যাশ) রতন কুমার দাস। তিনি বলেন, বাজেট মানেই আমাদের এই মধ্যবিত্ত শ্রেণির আতঙ্ক। গেল মার্চে এক দফা বাসা ভাড়া বাড়িয়েছে। কয়েকদিন আগে মালিক হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, বাজেট দেখে আবারো বাসাভাড়া বাড়ানো হতে পারে। তাছাড়া নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি তো এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। এভাবে ব্যয় বাড়তে থাকলে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো স্ত্রী-সন্তান নিয়ে? শুনেছি, সরকার বড় বাজেট ঘোষণা করেছে। বড় বাজেট মানে বড় আতঙ্ক!
   
কেরাণীগঞ্জের গুলজারবাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহিনুর রহমান আলামিন। গুলিস্তানে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে কথা হয় বাজেট নিয়ে। শাহিনুর আলামিন শিক্ষকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ’ এর নেতা।
 
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই শিক্ষাখাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয় সরকার। ব্যতিক্রম শুধু আমাদের দেশ। আর এদেশে শিক্ষকদের অবস্থা তার চেয়েও করুণ।
 
তিনি বলেন, বছরে আমি বেসিক বেতন পাই ষাট হাজার টাকা। সব মিলিয়ে বছরে এক লাখ টাকা আমি এ পেশা থেকে আয় করি। চিন্তা করে দেখেন, আমি যদি আর কিছুই না করি তাহলে প্রতি মাসে আট হাজার টাকা বাড়িভাড়া দিয়ে মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এ আয় দিয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব? বাজেটে কি আছে, কি নেই জানি না। তবে আমার মতো সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, জীবন-জীবিকার ব্যয় যেন না বাড়ে। তবেই আমরা খুশি।
 
বাজেট ছোট কিংবা বড় তাতে আগ্রহ নেই প্রাইভেটকার চালক শাহরিয়ারের। পরস্পর জানতে পেরেছেন কর বাড়ানো হয়েছে। বাংলানিউজের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, বড়লোকের সব জিনিসের ওপর কর বাড়ানো উচিৎ। বিশেষ করে প্রাইভেট কারের ওপর।
 
পুরানা পল্টনে আজাদ প্রোডাক্টসের গলির মুখে ফল ব্যবসায়ী শাহজালাল মনে করেন, সরকারের মধ্যেই সরকারি দল ও বিরোধী দল। সুতরাং বাজেট ভালো হলেও বলবে ভালো, খারাপ হলেও বলবে ভালো। আর সরকারের বাইরে আছে যেসব দল তাদের কাছে এ সরকার ‘অবৈধ’। তাদের কাছে তো এটা ‘অবৈধ বাজেট’।
 
মুখের কথা কেড়ে নিয়ে ঝালমুড়ি বিক্রেতা শাহ আলম বলে বসলেন, সরকারের মইদ্যে থাকলেও যা, বাইরে থাকলেও তা। হেরার (তাদের) সব দিন সমান, ঠেকাল আমাগো। বাজেট কারে কয় জানি না। আপনাদের মতো শিক্ষিত মানুষেরা যায়া (গিয়ে) তা নিয়া গবেষণা করেন। দিনের কামাই অইলেই চলে আমাগো।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট উত্থাপন করেছেন। প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা এবং ঘাটতি (অনুদান ছাড়া) ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। মূল এডিপি ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণ ৪৩ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণ ১৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের হার, বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণপ্রবাহ বাড়ার বিষয়ে আশাবাদী অর্থমন্ত্রী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ নির্ধারণ করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।