বাজেট বক্তৃতায় অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়ন আমাদের নীতি-কৌশল উল্লেখ করে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নীতিকৌশলগুলোকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করেছি। মন্ত্রণালয়গুলোতেও তাদের মধ্যমেয়াদী বাজেট কাঠামোর কর্মকৃতি ও বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে টেকসই উন্নয়নের বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়নে এমন একটা পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যেখানে শ্রমিকের দক্ষতা বৃদ্ধি ছাড়া বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা যেমন সম্ভব নয়, তেমনি প্রবৃদ্ধির উর্ধ্বগামিতা ধরে রাখাও প্রায় অসম্ভব। তাই দক্ষতা উন্নয়ন ব্যবস্থাকে কার্যকরভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কতিপয় বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ২২টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সকল দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমের সমন্বয় সাধন, সমন্বিত দক্ষতা উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন, আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ প্রবর্তনসহ সামগ্রিক কর্মদক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ রাখার প্রস্তাব করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ভ্যাট আমার কাছে শুরু থেকেই অতি উত্তম কর বলে মনে হয়। ১৯৯১ সাল থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত হয়েছে এবং এতে ভোক্তারা ও ব্যবসায়ীরা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। আমি ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশই বহাল রাখার প্রস্তাব করছি।
অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষার বিকল্প নেই। এই শিক্ষাখাতের উন্নয়নকে আমরা সব সময় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ শেখ হাসিনার বাংলাদেশ এ স্লোগানকে সামনে রেখে শিক্ষাখাতের উন্নয়নের কার্যক্রম গ্রহণ করেছি।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে নির্মাণাধীন ১১ হাজার ২১৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অতিরিক্ত ১১ হাজার ১২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৪২টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। দীর্ঘ মেয়াদী মহাপরিকল্পনার আওতায় কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পরমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প আমরা গ্রহণ করেছি।
বাস, রেল্ওয়ে নৌ-যান ও চুক্তিবদ্ধ বেসরকারি বাসে জনগণের যাতায়াত সহজ ও স্বচ্ছন্দ করতে ই-টিকেটিং প্রচলনের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
হাওর এলাকার জন্য বিশেষ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ওই এলাকার পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। সেই সঙ্গে পরিস্থিতি উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত ঋণ আদায়, স্থগিতকরণ, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের রেয়াতি হারে নতুন ঋণ প্রদান এবং পুনতফসিলিকরণের সুবিধাও প্রদান করা হয়েছে।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের সেবাদান কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বিদেশস্থ সকল বাংলাদেশের মিশনে এমআরপি কার্যক্রম এবং ৪৭টি মিশনে এমআরভি কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করেছি।
তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিতে নিয়োজিত করদাতারা বর্তমানে ০.৭০ শতাংশ হারে আয়কর দিচ্ছেন। প্রণোদনা ও কর সুবিধার আওতায় আগামী বছর আয়করের হার আরও হ্রাস করে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করছি।
আগামী তিন অর্থ বছরের মধ্যে দেশ থেকে বিড়ি উৎপাদন বন্ধ করে দেব। এ সব বিবেচনায় নিয়ে বিড়ির বিদ্যমান ট্যারিফ মূল্য বিলুপ্তির পাশাপাশি ফিল্টারবিহীন ও লিল্টারমুক্ত বিড়ির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সম্পূরক শল্কহার যথাক্রমে ৩০ শতাংশ ও ৩৫ শতাংশতে কোনো পরিবর্তন করা হবে না। তবে করসহ ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকার প্যাকেটের মূল্য হবে ১৫ টাকা এবং ফিল্টাযুক্ত ২০ শলাকার প্যাকেটের মূল্য ১৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করছি। এই মূল্য ১ জুন ২০১৭ থেকে কার্যকর হবে।
বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ এবং শিল্প শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপদ উৎপাদন পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্য সকল শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা স্থাপনের প্রয়োজনীয় পণ্যে ৫ শতাংশ এর অতিরিক্ত সকল প্রকার শুল্ক-করাদি মওকুফ সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিতে আইটি খাতে প্রয়োজনীয় শুল্ক-কর প্রণোদনা এবং নীতি সহায়তা প্রদানের জন্য মোবাইল, ল্যাপটপ, আইপ্যাড-এর স্থাণীয় সংযোজন ও উৎপাদনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ খাতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য উপকরণ আমদানিতে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শুল্ক রেয়াতি সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করছি, বলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৭
এসকে/এমজেএফ