তিনি বলেছেন, বাজেটে যে বড় প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলো যদি স্বল্পমেয়াদে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে অবশ্যই এটি একটি ভালো বাজেট। আংশিকভাবে বলা যায় এটা শিল্প ও ব্যবসা-অনুকূল বাজেট।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে সংসদে বাজেট উত্থাপনের পর মতিঝিলে এফবিসিসিআই কার্যালয়ে পর্যালোচনা ও তাৎক্ষণিক পর্যবেক্ষণে শফিকুল ইসলাম মহিউদ্দিন এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাজেটে যে অসঙ্গতি আছে সেগুলো আমরা বলেছি। এটা প্রস্তাবিত বাজেট। চূড়ান্ত বাজেটের আগে আমাদের প্রস্তাবগুলো প্রতিফলিত হবে বলে আশা করছি।
এসময় তিনি বেশ কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাবগুলো হলো—নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো; বিদ্যুৎ-জ্বালানি, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) ব্যবস্থা কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া; ক্ষুদ্র ও গ্রামীণ উদ্যোগ, কুটির শিল্প ও প্রান্তিক খাতের বিকাশে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সীমাবদ্ধতার প্রতি লক্ষ্য রেখে করমুক্ত টার্নওভার ৩৬ লাখ থেকে ৫০ লাখ করতে হবে।
মহিউদ্দিন বলেন, বাজেটে হ্রাসকৃত হারে ভ্যাটের পরিবর্তে সিঙ্গেল রেট ১৫ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে এসএমই খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাজেট বাস্তবায়নে বছরের শুরু থেকেই সুষ্ঠু মনিটরিং জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং তদারকির মান নিশ্চিত করতে হবে। না হলে এই বাজেট বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাজেটের ওপর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে এফবিসিসিআই’র পর্যবেক্ষণ তুলে ধরছি। পরবর্তীতে বাজেট ডকুমেন্টস, অর্থ বিল পর্যালোচনা এবং এফবিসিসিআই’র বাজেট এক্সপার্ট ও ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে আগামী ৩ জুন আমাদের প্রাথমিক মতামত তুলে ধরবো।
তিনি বলেন, নতুন বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা, যা জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারের ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে। অভ্যন্তরীণ ঋণ ব্যবস্থা থেকে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা (ব্যাংক ব্যবস্থা ২৮ হাজার ২০৩ এবং জাতীয় সঞ্চয় প্রকল্প থেকে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা) নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যাংক খাতের ওপর এমন নির্ভরশীলতা উৎপাদনশীল খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তাছাড়া, বাজেট বাস্তবায়নে অর্থায়ন ও অর্থ ব্যয় সঠিকভাবে করতে না পারায় প্রতিবছরই বাজেট সংশোধন করতে হয়। এতে অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটের লক্ষমাত্রার (২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা) তুলনায় ১৮ দশমিক ৬৩ বেশি। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ন্ত্রিত করের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, যা গত বছরের লক্ষ্যমাত্রার (২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা) তুলনায় ২২ দশমিক ০৭ শতাংশ বেশি।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে শুধুমাত্র ভ্যাট খাতেই রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা, যা চলতি বছরে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা (৭২ হাজার ৭৬৪ কোটি) তুলনায় ২৫ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি। এছাড়া আয়কর খাতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৫ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের (৭১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা) তুলনায় ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। আর আমদানি শুল্ক খাতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ২৩ কোটি টাকা, যা চলতি বছরের (২২ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা) তুলনায় ৩৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি।
বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে ৩ লাখ ২৫ হাজার করতে পুনরায় আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৭
এএম/এইচএ/