তিনি বলেছেন, ‘এক লাখ টাকার উপর যাদের আছে আমার মনে হয় তারা যথেষ্ট সম্পদশালী। সুতরাং তা থেকে ৮০০ টাকার ব্যয় ভারটি তারা বহন করতে পারবেন।
শুক্রবার (০২ জুন) বিকেলে রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে আগেই কথা হয়েছে। বড়লোকের ডেফিনেশন হওয়া মুশকিল। ব্যাংকে যাদের একলাখ টাকার বেশি থাকবে শুধু তাদের উপর এটা আরোপ করেছি। ’
২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার বেশি লেনদেন করা হলে তার উপর বিদ্যমান আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা করা হয়েছে।
নতুন বাজেটে আবগারি শুল্কমুক্ত লেনদেন সীমা ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে একলাখ টাকা পর্যন্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও ১০ লাখ থেকে এককোটি টাকা পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি পর্যন্ত ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি থেকে তদুর্ধ্ব ১৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, ‘ভিক্ষুকের সংখ্যা দেশে কমেছে। কিছু লোক আছে যাদের বৃত্তিটাই হচ্ছে ভিক্ষা। যা কোনোদিন নিমূর্ল করা যাবে না। এটা চলতেই থাকবে। ’
১ জুন থেকে চুলায় ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে মুহিত বলেন, ‘গ্যাসের দাম আমি কিছুই বাড়াইনি। যা ছিল তাই আছে। আমি বলেছিলাম গ্যাসের দাম ২০১৮ সালে বাড়বে। যখন আমাদের আমদানি করা গ্যাসের উপর নির্ভর করতে হবে। আমি শুধু সাবধান করে দিয়েছি সে ব্যাপারে। ’
চালের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘চালের দাম বেড়েছে সিলেটের ৭ জেলায় দুর্যোগের কারণে। আমার ধারণা এ দামটা থাকবে না। কারণ আমাদের যথেষ্ট মজুদ আছে। ’
মুহিত বলেন, ভ্যাট ১৫ শতাংশ কার্যকর করা হলেও পণ্যের দাম বাড়বে না। কারণ, মানুষের নিত্যপণ্যের যোগান দেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। আর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ৪ শতাংশ ভ্যাটে লেনদেনসীমা ৩০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩৬ লাখ এবং সর্বোচ্চ ৮০ লাখ থেকে দেড়কোটি টাকা করা হয়েছে। সুতরাং মাঝারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে এর প্রভাব পড়বে না। তাই দামও বাড়বে না।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক রেট ও সঞ্চয়পত্রের সুদহারের ব্যবধান কমাতে এখন থেকে প্রতিবছর একবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার রিভিউ হবে। এ বছরেরটি আগামী দু’মাসের মধ্যে নির্ধারণ করা হবে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রণোদনা দেওয়া হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কমিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, ‘স্বস্তির বাজেটে অস্বস্তিকর কোনো কিছু নেই। বাস্তবায়ন দক্ষতা না থাকলে ৯১ হাজার কোটি টাকা থেকে শুরু করে ৩ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হতো না। ’
বেসরকারি বিনিয়োগ কমে যাওয়া প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, দেশের ৮০ ভাগ বিনিয়োগ বেসরকারি খাতের। সরকারি বিনিয়োগ মাত্র ২০ শতাংশ। দেশের ভবিষ্যত ভাগ্য নির্ধারণ করবে বেসরকারি খাত।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক খাতে জালিয়াতি, চুরি পৃথিবীর সব দেশেই হয়। আমাদের দেশেও দু’একটি ব্যাংকে হতে চলেছিল। আমরা সেটা কমাতে পেরেছি। যেসব ব্যাংকে সমস্যা আছে বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা সমাধানে কাজ করছে।
মুহিত বলেন, আমরা বৈদেশিক সাহায্যের যথাযথ ব্যবহার করতে পারছি না। এক প্রশ্নের জবাবে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশে তেলের দাম কমানোর বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী ছাড়াও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
উপস্থিত ছিলেন অর্থবিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, অর্থনৈতিক সর্ম্পক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আজম ও পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. জিয়াউল ইসলাম প্রমুখ।
আরো উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, মুখ্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছাড়াও ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪০ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০১৭
এসই/জেডএস