ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির প্রাধান্যে কর ব্যবস্থা ব্যাহত

রহমান মাসুদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৮
অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির প্রাধান্যে কর ব্যবস্থা ব্যাহত অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির খাতের ছবিটি গুগল থেকে নেওয়া

ঢাকা: জাতীয় অর্থনীতিতে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির প্রাধান্য, অপর্যাপ্ত, দুর্বল হিসাব, রেকর্ড কিপিং সংস্কৃতি ও দক্ষ আয়কর ব্যবস্থাপনাকে ব্যাহত করছে বলে মনে করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে সরকারের জমা দেওয়া এক সুপারিশে এ তথ্য উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক সংস্থাটি।

দুদক বলছে, বাংলাদেশের রাজস্ব আহরণের সবচেয়ে বড় উৎস হতে পারে আয়কর। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের আয়কর রাজস্ব ও জিডিপি অনুপাত এখনও কাঙ্খিত মাত্রায় পৌঁছাতে পারেনি।

দুর্নীতি-অনিয়মের পাশাপাশি এর মূলে রয়েছে আয়কর আইন, বিধি ও পদ্ধতির দুর্বোধ্যতা, জটিলতা, তার সঙ্গে একই খাত বা বিভিন্ন খাতে বিদ্যমান অব্যাহতি, নিম্ন করহার, উচ্চ কর হার, সারচার্জ, উৎস কর ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের কর ব্যবস্থা।  
 
আয়কর বিভাগে কার্যকর, স্বচ্ছ, সমন্বিত ও জবাবদিহিমূলক পরিদর্শন, পরিবীক্ষণ, আধুনিক অডিট ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ভিত্তিক প্রশাসন, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার অভাব রয়েছে বলে মনে করে দুদক। রয়েছে অভিযোগ, বিরোধ নিষ্পত্তির কার্যকর ব্যবস্থা ও পদ্ধতি অনুশীলন না করার চর্চাও।  

সংস্থাটি মনে করে, আয়কর বিভাগের সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীনস্ত কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা দফতর যেমন- আরজেএসসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি ক্রয় সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহ, মহা হিসাব নিয়ন্ত্রকের দফতর, ভূমি দফতর, বিআরটিএ, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক তথ্য আদান-প্রদান, যোগাযোগ, সমন্বয়, সহযোগিতার অভাব, অপ্রতুলতা আয়কর ফাঁকির সুযোগ সৃষ্টি করে, যা প্রকারান্তরে দুর্নীতি ঘটায়। জাতীয় অর্থনীতিতে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির এ প্রাধান্য, অপর্যাপ্ত ও দুর্বল হিসাব, রেকর্ড কিপিং সংস্কৃতিও দক্ষ আয়কর ব্যবস্থাপনাকে ব্যাহত করছে।  
 
এ থেকে উত্তরণে কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশও করেছে দুদক। সংস্থাটি মনে করে, আয়কর আদায় সংক্রান্ত কার্যক্রম দ্রুত ও দুর্নীতিমুক্ত করার উদ্দেশে আয়কর নথি ব্যবস্থপনার জন্য ডিজিটালাইজেশন জরুরি।  
 
এ করদাতাদের দাখিল করা আয়কর বিবরণীসমূহ সংরক্ষণের জন্য সমন্বিত সফটওয়্যার ইনস্টল করার মাধ্যমে সব আয়কর দাতার একটি রিয়েল-টাইম শেয়ারিং কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার তৈরি করা যেতে পারে, যেখান থেকে প্রতিটি আয়কর দাতা তাদের বছর-ভিত্তিক আয়কর রিটার্নের তথ্যাদি তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পারবেন এবং প্রয়োজনে তা সংশোধন করতে পারবে বলে মনে করে দুদক।

দাখিলকরা আয়কর রিটার্ন গ্রহণ করে নির্দিষ্ট রেজিস্টারে রিটার্নের মোট পৃষ্ঠা উল্লেখ করে তা এন্ট্রি করার পাশাপাশি নির্দিষ্ট সফটওয়ারে এন্ট্রি করা যেতে পারে। এতে আয়কর দাতাদের হয়রানির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে। পাশাপাশি আয়কর কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ কর্তৃক তথ্য গোপনে সহায়তার মাধ্যমে দুর্নীতি বা অনিয়মের সুযোগ হ্রাস পাবে। এসব উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে স্থাপিত অন লাইন ট্যাক্স রিটার্ন সিস্টেম এর পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার দ্রুত নিশ্চিত করার ও পরামর্শ দিয়েছে তারা।
 
অন্যদিকে কর আদায়ের ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তন (টিডিএস-ট্যাক্স ডিডাক্টট এট সোর্স) এবং অন্যান্য কর (এপোর্ট বেইজড) আদায়ের জন্য পৃথক বাজেট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করার পরামর্শ দিয়েছে তারা। টিডিএস আদায় সংক্রান্ত কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালন হচ্ছে কি-না তা তদারকির জন্য পৃথক সেল গঠনেরও পরামর্শ দুদকের।
 
দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, আয়কর বিভাগের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে আয়কর প্রদানকারী কোনো ব্যক্তি/ প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক বা কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আয়কর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে আইন, বিধি ও নিয়মবর্হিভূতভাবে আয়কর প্রদানকারী কোনো ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক হিসেবে কাজ করতে না পারে এজন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরামর্শ দুদকের। এজন্য বিদ্যমান মানব সম্পদের যথাযথ উন্নয়ন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব সংস্থাটির।
 
আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ অনুযায়ী কর নির্ধারণ কিংবা অডিটের জন্য নথি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর কর্মকর্তাদের কোনো ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক আদেশের মাধ্যমে শুধু তদারকির দায়িত্ব দেওয়া আছে। তা সত্ত্বেও আইন-বহির্ভূতভাবে আয়কর কর্মকর্তারা তদারকির ক্ষমতা ব্যবহার করে করদাতাদের আয়কর রিটার্ন নিজেদের কাছে এনে অনুমোদনের নামে কর প্রদানকারীদের হয়রানি করেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে। যুগ্ম কর কমিশনার বা কর কমিশনার কর্তৃক আইন-বহির্ভূত এ অনুমোদন প্রক্রিয়া বাতিলের ও পরামর্শ দুদকের।
 
এছড়াও আয়কর বিভাগের জন্য মোট ১১ দফা সুপারিশ সরকারের কাছে তুলে ধরেছে সংস্থাটি। কমিশন ২০১৭ সালে ২৫টি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে ২৫টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করে।  

প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে যথাক্রমে: তিতাস গ্যাস; বাংলাদেশ রেলওয়ে; সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ; বাংলাদেশ বিমান; কাস্টমস, ভ্যাট অ্যান্ড এক্সাইজ; আয়কর বিভাগ; ঢাকা ওয়াসা; মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর; সড়ক ও জনপথ অধিদফতর; বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ; সাব রেজিস্ট্রারের অফিসসহ রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্স; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশন; গণপূর্ত অধিদপ্তর; মহা-হিসাব নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়; সমুদ্র এবং স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষসমূহ; ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর; জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকা এর ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) ও রাজস্ব (এসএ) শাখা; পরিবেশ অধিদফতর; বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই); রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক); ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর; স্বাস্থ্য অধিদফতর, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষা অধিদফতর। এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে পরামর্শ বা সুপারিশ করা হয়েছে সরকারের কাছে। আয়কর বিভাগের বিষয়ে করা সুপারিশও তার অংশ।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৮
আরএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।