আগামী বাজেটে কী ধরনের কর সংস্কার এলে তা মোবাইল খাত ও এই সেবার জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে এমটব এমন কিছু প্রস্তাব সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে উত্থাপন করেছে। মোবাইলের বৈশ্বিক সংস্থা জিএসএমএ বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে জিডিপিতে মোবাইল শিল্পের অবদান ৭ শতাংশ।
দেশের মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এমটব) এনবিআরকে পাঁচ দফা বিবেচনা করার অনুরোধ করেছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সিম ট্যাক্স নির্মূল
বর্তমানে সিম প্রতি ২০০ টাকা হারে কর নির্মূল করা দরকার, কারণ তা নিম্নআয়ের মানুষদের এই সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা বলে মনে করা হয়। অপারেটররা এই অর্থ ভর্তুকি হিসেবে দেয়।
করপোরেট ট্যাক্স যৌক্তিককরণ
মোবাইল শিল্পের জন্য বর্তমান করপোরেট কর ৪৫ শতাংশ; যা ভারতে ২২ শতাংশ, পাকিস্তান এবং নেপালে ৩০ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ২৮ শতাংশ, এবং আফগানিস্তানে ২০ শতাংশ। এমটব করপোরেট ট্যাক্সকে দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো যৌক্তিক হারে ৩০ শতাংশ করার অনুরোধ করেছে।
ন্যূনতম টার্নওভার/করপোরেট ট্যাক্স নির্মূল
ন্যূনতম টার্নওভার করের বিধান আয়করের নীতি বিরুদ্ধ। মোবাইল অপারেটরগুলো লোকসান করলে বা মুনাফা উপার্জনের ২ শতাংশের চেয়ে কম অর্জিত হলে ২ শতাংশ হারে এই কর দিতে হয়। শেয়ারহোল্ডারদের ইক্যুইটি থেকে তাদের এই কর প্রদান করতে হয়। এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে ন্যূনতম টার্নওভার কর অপসারণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বিটিআরসিসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর জন্য ভ্যাট ছাড়
২০১২ সালের নতুন ভ্যাট ও এসডি আইনে সরকারি ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর জন্য ভ্যাট ছাড় সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশিকা নেই; এই সংস্থাগুলো ভ্যাট নীতি অনুসরণ করছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো তাদের নিবন্ধন ছাড়াই ভ্যাট দাবি বা সংগ্রহ করছে, আবার কোনো ভ্যাট চালান দিচ্ছে না। এটা ভ্যাট আইনের নীতিবিরুদ্ধ। এমটব সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে ভ্যাট ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে যা এনবিআর এবং অপারেটর উভয় পক্ষের সম্ভাব্য বিরোধ ও জটিলতা নিরসন করবে।
দ্বৈত কর পরিহার
দেশের মোবাইল সেবাদাতারা তাদের মোট আয়ের ৫.৫ শতাংশ রাজস্বের অংশ হিসেবে এবং ১ শতাংশ সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলে (এসওএফ) বিটিআরসিকে প্রদান করে। প্রাথমিক পর্যায়ে, রাজস্বের জন্য ভ্যাট প্রদান করা হয় যার অংশ বিটিআরসিকে দেওয়া হয়। বিটিআরসিকে দেওয়া একই রাজস্বের জন্য যখন আবার ভ্যাট প্রদান করা হয় তখন তা দ্বৈত কর হয়ে যায়। এমটব রাজস্বের হার প্রদানের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর পরিহারের প্রস্তাব করেছে।
পাঁচ দফার বিষয়ে এমটব সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে পুরো দেশ এক নজিরবিহীন সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে; মোবাইল শিল্প খাতও এর বাইরে নয়। এই পরিস্থিতিতে মোবাইল শিল্প সব ধরনের যোগাযোগ, ব্যবসা, বিনোদন ইত্যাদির মেরুদন্ডে পরিণত হয়েছে। আমরা অন্যান্য সময়ের মতো এই কঠিন সময়েও যথাযথভাবে সেবা দান করে যাচ্ছি। তবে যেহেতু এই খাতটি ইতিমধ্যেই করসহ নানা ধরনের সমস্যায় ভূগছে, তাই এখনই সময় এসব দূর করে এই খাতকে উৎসাহিত করা যেন ভবিষ্যতে আমরা জাতিকে আরও বেশি সেবা দিতে পারি।
এমটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব.) বলেন, বিগত সময়ে মোবাইল সেবাদাতাদের লাইসেন্স নানাভাবে বিভাজন করে তাদের ব্যবসা সঙ্কুচিত করে ফেলা হয়েছে। অপারেটরদের ব্যবসার সঙ্কোচন সরকারের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির সুযোগকেও সীমিত করেছে। অন্যদিকে ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন অনুযায়ী উৎসে ভ্যাট ছাড়ের নীতি ফিরিয়ে আনা হলেও সরকারের আয় বাড়ানো সম্ভব। ৪-জি প্রযুক্তির হ্যান্ডসেটের দাম বেশি হওয়ায় দেশে ৪-জির ব্যবহার খুব ধীর গতিতে এগুচ্ছে। এক্ষেত্রে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া দরকার।
ফরহাদ আরও বলেন, করোনা ভাইরাসের পরিণতি কী হবে তা এখনও অনুমান করা কঠিন। তবে রেগুলেটরি, কর এবং ভ্যাট সম্পর্কিত সমস্যাগুলো অবিলম্বে সমাধান করা না গেলে খুব শিগগির মোবাইল সেবা বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে অপারেটরদের রাজস্ব আয়ে ইতোমধ্যেই নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমরা সরকারকে আমাদের প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছি, যেন এই শিল্প তার পূর্ণ সক্ষমতা দিয়ে দেশকে সহায়তা করতে পারে ও জিডিপিতে আরও বেশি অবদান রাখতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০২০
এমআইএইচ/এইচএডি