মানুষের জীবন রক্ষা আর জীবিকার নিশ্চয়তা দিতে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ: ভবিষ্যত পথ পরিক্রমা’ শিরোনামে ২০২০-২১ অর্থবছরে আসছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১৩.২ শতাংশ বেশি।
প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটের ঘাটতির চেয়ে ৩৬ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬শ’ ৮ কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে মোট ব্যয়ের দুই তৃতীয়াংশই ধরা হয়েছে অনুন্নয়ন ব্যয় বা সরকারী কর্মচারীদের বেতন-ভাতায়। এর পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৮ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে সরকারী কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় খরচ হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার ২৮০ কোটি টাকা।
এছাড়া অভ্যন্তরীণ ঋণ পরিশোধে ব্যয় হবে ৫৮ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা ও বৈদেশিক ঋণের সুদবাবদ ব্যয় হবে ৫ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকা। ঋণ পরিশোধে ব্যয় বাড়বে ৬ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা।
এদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ব্যয় করা হবে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এডিপি বহির্ভূত প্রকল্পের উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭২২ কোটি ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচিতে যাবে ২ হাজার ৬ শ’ ৫৪ কোটি টাকা। অন্যান্য উন্নয়ন খাতের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৬ শ’ ২৪ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমি মনে করি এটি একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে বাজেট। করোনা ভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজেট।
প্রস্তাবিত বাজটে দেখা গেছে, ব্যয়ের চার ভাগের মধ্যে তিনভাগ অর্থই সরকার আয় করতে চায়। প্রধান খাত হিসেবে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। কর ব্যতীত আয় ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব বোর্ড ছাড়াও কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে আরও ১৫ হাজার কোটি টাকা।
বরাবরের মতো এবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হচ্ছে। এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আদায়ে কতটা সফল হবে, জানতে চাইলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আগামী অর্থবছরে রাজস্ব বোর্ডকে খুব বেশি বড় লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া যাবে না। তা বাস্তবসম্মত হবে না। কোনো কর ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে না। উল্টো আরও কিছু জায়গায় ছাড় দিতে হবে।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। যা মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ৬ শতাংশের সমান এবং চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৩৫ হাজার ৯৩০ কোটি টাকা বেশি।
ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা ও অন্যান্য খাতের সহায়তা ধরা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জা এবি আজিজুল ইসলাম বলেন, সরকার যদি ব্যাংকিং খাত থেকে খুব বেশি পরিমান ঋণ নেয়, তাহলে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আরও কমে যাবে। ফলে বিনিয়োগ কমে যাবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ব্যহত হবে।
২০২০-২১ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮.২ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫.৪ শতাংশ।
১০ জুন শুরু হওয়া জাতীয় সংসদের অধিবেশনে ১১ জুন ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সভাপতিত্ব করবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২০
এসই/এইচজে