ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

করোনাকালে রেকর্ড ঘাটতির বাজেট

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৩৮ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২০
করোনাকালে রেকর্ড ঘাটতির বাজেট

ঢাকা: মহামারি করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলা ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে রেকর্ড পরিমাণ ঘাটতি নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি হতে পারে টাকার প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ছয় শতাংশ। এদিকে, চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছিল এক লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। আর জিডিপি পাঁচ শতাংশ।

বাজেটে স্বাস্থ্য অবকাঠামো উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি উৎপাদনে ভর্তুকি, নগদ সহায়তা ও প্রণোদনা বাড়ানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, চলতি বিনিয়োগ, উৎপাদনমুখী বিনিয়োগ, পদ্মাসেতুসহ ১০ মেগা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে, প্রস্তাবিত বাজেটকে বিশাল ঘাটতির আবার ‘গতানুগতিক’ ও ‘বাস্তব অবস্থার প্রতিফলন হয়নি’ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকেল সোয় ৩টার দিকে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সংসদ অধিবেশনে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য এ বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী।

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে জতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এক বিশেষ বৈঠকে প্রস্তাবিত বাজেটের অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর এতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অনুমোদন দিয়ে স্বাক্ষর করেন। করোনা ভাইরাস সংকটময় পরিস্থিতি এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তায় রেখে এবারের বাজেটের শিরোনাম ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ: ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’।

এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র গবেষক অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলছেন, অনুমিত এ বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে যেটা কাজ করেছে, সেটা বাস্তব অবস্থার প্রতিফলন করে না। কারণ সম্পদ আহরণ থেকে সম্পদ ব্যয়ের যেসব প্রস্তাব আমরা দেখেছি, তাতে গতানুগতিক ধারা লক্ষ্য করা গেছে। কোভিড-১৯ এ এই চলমান অভিঘাত আমরা স্বাস্থ্যখাতে, সামাজিকখাতে দেখছি। আমরা একটা মানবিক ঝুঁকি হিসেবে দেখছি, অর্থনৈতিক ঝুঁকি তো আছেই। এই ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য বাজেটে যে ধরনের কাঠামো থাকা দরকার, আমাদের মনে হয়েছে, সেটা পরিপালন করা হয়নি।

বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে যে জরুরি এবং অপ্রত্যাশিত খরচ দেখা দিয়েছে, তা মেটাতে এবং অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা পুনরুদ্ধারের প্রত্যাশায় আগামী বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ছয় শতাংশ।

প্রস্তাবিত বাজেটের মোট ব্যয়:
প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের মোট ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এজন্য বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় বাবদ খরচ ধরা হয়েছে তিন লাখ ৬২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় রাখা হচ্ছে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। সরবরাহ ও সেবা বাবদ ব্যয়ে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ রাখা হচ্ছে ৬৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। সরকারি প্রণোদনা, ভর্তুকি ও অনুদান বাবদ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ থাকছে দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা।

রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা:
প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে এনবিআরের মাধ্যমে সংগৃহীত লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত করগুলো থেকে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ব্যতিত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এদিকে, চলতি সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয় তিন লাখ ৫০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এবার এ লক্ষ্যমাত্রাও বেড়েছে বিশাল আকারে।

জিডিপি আকার:
প্রস্তাবিত নতুন বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে আট দশমিক দুই শতাংশ। এদিকে, চলতি বাজেটে (সংশোধিত) জিডিপির আকার ২৮ লাখ পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

বাজেট ঘাটতি:
তুলনামূলক রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় বাড়বে বাজেট ঘাটতিও। প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি হতে পারে প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। নতুন বাজেটে ঘাটতির (অনুদানসহ) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এবং অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে এক লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। যা জিডিপির ছয় শতাংশ। বৈদেশিক অনুদান ধরা হচ্ছে চার হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এদিকে চলতি বাজেটে যা রয়েছে তিন হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছিল এক লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে বাজেটের মোট ঘাটতি বাড়ছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

সাধারণত বাজেটের ঘাটতি পূরণ করা হয় ঋণের মাধ্যমে। সে হিসেবে আগামী বছর ঘাটতি বাজেট পূরণে অধিক মাত্রায় ঋণ নির্ভর হচ্ছে সরকার। ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকার অভ্যন্তরীণ খাত থেকে এক লাখ নয় হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে। এরমধ্যে ব্যাংকিংখাত থেকে সরকার ঋণ নেবে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য ঋণ নেওয়া হবে আরও পাঁচ হাজার কোটি টাকার। তবে চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিংখাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে এটি বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৪২১ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া চলতি বাজেটে (সংশোধিত) সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হয়েছিল ১৪ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। এদিকে, অভ্যন্তরীণ ছাড়াও আগামী বছরে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬ হাজার চার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৫২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।

এডিপি আকার:
 প্রস্তাবিত অর্থবছরের জন্য দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ। এডিপির জন্য অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বহিঃসম্পদ থেকে ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকার জোগান দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন এডিপিতে মোট প্রকল্পের সংখ্যা এক হাজার ৫৮৪টি। মহামারির এই সময়ে স্বাস্থ্যখাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির আকার ছিল দুই লাখ দুই হাজার ৭২১ কোটি টাকা। তবে গত মার্চে তা সংশোধন করে এক লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছিল।

বাড়ছে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও ঋণ:
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণখাতেও বরাদ্দ বাড়াচ্ছে সরকার। এ খাতে এবারই প্রথমবার ৫২ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। যা চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে পাঁচ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা বেশি। একইসঙ্গে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) এক দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত ছয় অর্থবছর ধরে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ছে। তবে এবার অন্যবারের তুলনায় অনেক বেশি বাড়ছে। মূলত খাদ্য ও কৃষিতে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্যই বরাদ্দটা একটু বেশি হচ্ছে। চলতি অর্থবছর এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৪৭ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে এটা চলতি বাজেটের সংশোধনীতে বাড়িয়ে ৪৮ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা করা হয়।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বাড়ছে:
করোনা ভাইরাসের কারণে  প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আর্থিক সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ বাড়িয়ে ৯৭ লাখে উন্নীত করতে চায় সরকার। এ জন্য চলতি বাজেটের তুলনায় প্রস্তাবিত বাজেটে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা বাজেটের ১৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং জিডিপির ৩ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ছিল ৮১ হাজারর ৮৬৫ কোটি টাকা।

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি বরাদ্দ:
প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনা সংকট মোকাবিলায় যেকোনো জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তায় এক হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা ও এক হাজার ১২৭ কোটি টাকার দুইটি পৃথক প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

জরিমানা ছাড়াই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ:
প্রস্তাবিত বাজেটে উৎপাদনশীল শিল্প ও আবাসনখাতে কোনো ধরনের জরিমানা ছাড়াই কালো টাকা (অপ্রদর্শিত অর্থ) বিনিয়োগের সুযোগ দিতে যাচ্ছে সরকার। ফলে যে কেউ অপ্রদর্শিত আয়ের ঘোষণা দিয়ে যেকোনো অঙ্কের অর্থ বৈধ করতে পারবেন। ‘ভলান্টারি ডিসক্লোর অব ইনকাম’ নামে পরিচিত এই নিয়মটি ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রবর্তন করা হয়। এ সুযোগ নিতে হলে প্রযোজ্য কর হার ও তার সঙ্গে ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হয়। তবে আসছে বাজেটে এই জরিমানা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। ফলে শুধু ১০ শতাংশ হারে কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ থাকতে পারে।

মাথাপিছু আয়ের সীমা:
প্রস্তাবিত বাজেটে মাথাপিছু আয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৩২৬ ডলার। সে হিসাবে প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে মাথাপিছু আয় হবে দুই লাখ ৩৬ টাকা। চলতি বাজেটে ছিল এক লাখ ৬০ হাজার ৪৪৮ টাকা।

বাড়ছে করমুক্ত আয়ের সীমা:
টানা পাঁচ বছর পর করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ছে। বর্তমানে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকা। এটি বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হবে, এমন প্রস্তাব করা হয়েছে। করোনাকালীন ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের কষ্ট লাঘবে এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

গত আট অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে করমুক্ত আয়ের সীমা ছিল দুই লাখ ২০ হাজার টাকা। এটিকে বাড়িয়ে তখন আড়াই লাখ টাকা করা হয়। এর আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরে দুই লাখ টাকা ও ২০১৩-১৪ তে ছিল দুই লাখ ২০ হাজার টাকা।

নতুন বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে যেসব খাতে:
করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ বাড়ছে স্বাস্থ্য, কৃষি, প্রতিরক্ষাসহ নয়টি খাতে। প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণখাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় করা হবে ৩২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের চার দশমিক সাত শতাংশ। অবশ্য চলতি বছরে এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ৩১ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

এরপরে রয়েছে স্বাস্থ্যখাত। প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়বে পাঁচ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। এ খাতে মোট বরাদ্দ থাকছে ২৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের পাঁচ দশমিক এক শতাংশ। চলতি বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ২৩ হাজার ৬৯২ কোটি টাকা। এছাড়া নতুন বাজেটে কৃষিখাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে দুই হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের তিন দশমিক ছয় শতাংশ। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৭ হাজার ২৩ কোটি টাকা। অন্যান্য বছরের মতো এবারও বরাদ্দ বাড়ছে প্রতিরক্ষা খাতে। নতুন বাজেটে এ খাতে ব্যয় করা হবে ৩৪ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার ১০৬ কোটি টাকা।

এদিকে, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা খাতেও বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৮ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের চার দশমিক নয় শতাংশ। এ খাতে চলতি বছরে বরাদ্দ ছিল ২৭ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা। ওই হিসাবে বরাদ্দ বাড়ছে এক হাজার ২৩১ কোটি টাকা।

বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন সরকারের। এজন্য নতুন বাজেটে জনপ্রশাসনে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে এক লাখ ৮০ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ছয় দশমিক আট শতাংশ। এ খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৪০ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ আছে এক লাখ ৪০ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা।

এছাড়া আগামী বছর শিক্ষা ও প্রযুক্তিখাতে পরিচালনা ও উন্নয়ন উভয় দিকে সরকার ৮৫ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা নিয়েছে। এটি মোট বাজেটের ১৫ শতাংশ। এ ব্যয় চলতি বছরের তুলনায় আট হাজার ৭২১ কোটি টাকা। চলতি বছরে ব্যয় করার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৭৭ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাতে মোট বরাদ্দ থাকছে ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। যা চলতি বছরে আছে ২৬ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা। সবশেষে বরাদ্দ বাড়ানোর তালিকায় আছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। এ খাতে পরিচালনা ও উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ছয় হাজার ৯১ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৬৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা। এদিকে, চলতি বছরে এ খাতে বরাদ্দ আছে ৫৮ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা।

বরাদ্দ কমছে যেসব খাতে:
২০২০-২১ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে ৯০০ কোটি টাকা। চলতি বছরে এ খাতে ৪০ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও আগামী বছরে বরাদ্দ থাকছে ৩৯ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। একইভাবে বরাদ্দ কমানো হয়েছে গৃহায়ণ খাতে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ কমছে ৫১০ কোটি টাকা। নতুন বছরে এ খাতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ হচ্ছে ছয় হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। যা চলতি বছরে রয়েছে সাত হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। সর্বশেষ বরাদ্দ কমার তালিকায় আছে শিল্প ও অর্থনৈতিক সার্ভিস খাত। এ খাতে বরাদ্দ কমছে ৭৯৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল চার হাজার ৪৭৮ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে তিন হাজার ৯৪০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২০
জিসিজি/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।