ঢাকা: বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৬ শতাংশ হারে আমের উৎপাদন বাড়ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, কৃষিখাতের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমানে আমরা পরিবেশবান্ধব ও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর উপযোগী কার্যক্রমের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বক্তৃতায় তিনি একথা জানান। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে তৃতীয়বারের মতো বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা দুর্যোগে খাদ্য নিরাপত্তায় বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ তেমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়নি। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বে আম উৎপাদনে ৭ম স্থানে রয়েছে এবং প্রতি বছর ১৬ শতাংশ হারে আমের উৎপাদন বাড়ছে। দেশি ফলের উন্নত জাত সম্প্রসারণের পাশাপাশি দেশে চাষ উপযোগী বিদেশি ফল যেমন- ত্বিন, ড্রাগন, অ্যাভোকাডো, আরবি খেজুর, রামবুটান, পার্সিমনের চাষ বেড়েছে। পাহাড়ি এলাকায় কফি, কাজুবাদাম চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণতার প্রভাব মোকাবিলার জন্য শস্যনিবিড়তা বৃদ্ধিসহ স্বল্প জীবনকাল-সম্পন্ন ফসল উৎপাদনের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া চরাঞ্চল, পাহাড়ি অঞ্চল, খরা ও লবণাক্ততাপ্রবণ অঞ্চলে আউশ, আমন ও বোরো ধানের বিভিন্ন স্বল্পমেয়াদি জাতকে সম্পৃক্ত করে ১১ ধরনের শস্য বিন্যাসের কার্যক্রম চলমান। বিশেষ করে খরাপ্রবণ এলাকায় স্বল্পমেয়াদি আমনের জাত সম্প্রসারণে উচ্চ ফলনশীল জাতের চাষাবাদ করা হচ্ছে।
সারা দেশে বর্তমানে ৪১টি জেলায় কৃষকের বাজার স্থাপন করা হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কীটনাশকমুক্ত শাকসবজির যোগান দিতে যাত্রা শুরু করেছে ‘কৃষকের বাজার’। ফলে কৃষকরা কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছে। শ্যামপুরে স্থাপিত ফাইটোস্যানেটারি প্রতিষ্ঠানটি রপ্তারিযোগ্য কৃষিভিত্তিক পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় রিজিওনাল সার্ক সিড ব্যাংক গঠন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সমৃদ্ধ কৃষির অগ্রযাত্রায় সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি এবং এসডিজি বাস্তবায়ন শীর্ষক পরিকল্পনা দলিল প্রণয়ন করা হয়েছে। এ দলিলে কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে মোট ৬টি থিমেটিক এরিয়া/কৌশল, যথা-কৃষি গবেষণা ও উন্নয়ন, গুণগতমানসম্পন্ন কৃষি উপকরণ সরবরাহ ও প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ, কৃষি সম্প্রসারণ, সেচ কাজে পানিসম্পদের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলা এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন চিহ্নিত করা হয়েছে।
করোনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষায় প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। বাজেটে মোট আয় ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। ঘাটতি ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। মোট উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা। আর মোট অনুন্নয়ন ব্যয় ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
এছাড়া বাজেটে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যখাতে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন, কৃষিখাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২১
জিসিজি/এএ