ঢাকা, বুধবার, ১৪ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

বাজেট

বাজেট ঘিরে সিলেটে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪২ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২২
বাজেট ঘিরে সিলেটে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

সিলেট: ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার। ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বিশালাকারের বাজেটে অনুদান বাদে ঘাটতি ধরা হয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশের সমান।

‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শীর্ষক প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিলেটের ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও পেশাজীবী নেতারা। সরকার দলের নেতারা বাজেটকে জনবান্ধব বললেও বিএনপি নেতারা বাজেট গণবিরোধী বলে প্রত্যাখ্যান করছেন। আর পেশাজীবী নেতারা বাজেটকে উন্নতি অগ্রগতির ধারাবাহিকতা মনে করলেও কেউ কেউ এটা নির্বাচনী বাজেট হিসেবে দেখছেন। আর অন্য দলগুলোর নেতারা প্রস্তাবিত বাজেটকে ব্যবসায়ী বান্ধব হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না।

জাসদের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি লোকমান আহমদ বলেন, ‘বাজেট গতানুগতিক, আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ নেই। ’

বাজেটের করারোপকে জনগণের ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ আখ্যা দিয়ে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, এই সরকারই যেখানে অবৈধ, সেখানে তাদের বাজেট কীভাবে জনবান্ধব হবে। এটা জনগণের বাজেট নয়। মেনে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। প্রতিটি দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করে জনগণের নাভিশ্বাস তোলা হচ্ছে। তাদের তথাকথিত ব্যবসায়ীদের কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক ও মেগা প্রকল্পের নামে লোপাটকারীদের বিদেশে পাচার করা টাকা বৈধতার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা, যারা ট্যাক্স ভ্যাট দিয়ে ব্যবসা করেন।

তিনি বলেন, তারা মেগা প্রকল্পের মেয়াদ ও টাকা বাড়িয়ে লুটপাট করছে। সেই টাকা জনগণ থেকে আদায় করতেই চটকদার বাজেট। এই দ্বৈত নীতির কারণে সরকার ও তাদের লোকজন সম্পদের পাহাড় বানাচ্ছে। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করছে। আর আমরা সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তাছাড়া বর্তমান সরকার কোনো ঘাটতি বাজেটই পূরণ করতে পারেননি। এই সরকার ব্যর্থ।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, এটি আওয়ামী লীগ সরকারের ১৪তম বাজেট। ১৩তম বাজেট পর্যন্ত শতভাগ অর্জন না হলেও কাছাকাছি অর্জন সম্ভব হয়েছে। সামষ্টিকভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে শিক্ষা ও সামরিক খাতে বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। সেই সঙ্গে কোভিড পরবর্তীকালীন সময়ে যেখানে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলছে, সেখানে মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকার বিগত বছরগুলোতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ লক্ষ্যমাত্রা আদায়ের কাছাকাছি পৌঁছাতে পেরেছে। তাই বাজেটের আকারের সঙ্গে প্রবৃদ্ধি, জিপিডিও বাড়ছে। মূলত দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছাতে জনবান্ধব বাজেট পেশ করেছে সরকার। এতে করে মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় জনগণের জন্য কাজ করে। প্রকৃতভাবে বাংলাদেশকে সামষ্টিকভাবে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে জনগণের কল্যাণে সাহসী বাজেট দেওয়া হয়েছে। তবে বাজেটের ঘাটতি নিয়ে কথা উঠতে পারে, সেটা অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ এবং বৈদেশিক সাহায্যের মাধ্যমে পূরণ সম্ভব হবে।

সিলেট জেলা প্রেসক্লাব সভাপতি আল আজাদ বলেন, একটি জাতির অর্থনৈতিক সামর্থ্যের প্রকাশ হচ্ছে জাতীয় বাজেট। এই বাজেটে আগামী এক বছরের উন্নয়ন ধারা ফুটে ওঠে। যেহেতু বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে, তাই এই বাজেটের প্রতি কেবল দেশের জনগণই নয়, বিশ্ববাসীও নজর রাখেন। বাজেটের দু’টি দিকই আছে। কেউ ইতিবাচক, কেউ নেতিবাচক মত প্রকাশ করে থাকেন। আমরা বিশ্বাস করি, সংসদীয় পদ্ধতির গণতান্ত্রিক পরিবেশে জনস্বার্থকে বড় করে দেখে এই বাজেট চূড়ান্ত করা হবে। কেননা, দেশ ও জনগণের কল্যাণেই বাজেট। তবুও এ নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনার সুযোগ আছে। সবকিছুর পর বলা যায়, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আরও গতিশীল করতে এই বাজেট। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ অপ্রতিরুদ্ধ গতিতে ২০৪১ সালের দিকে এগিয়ে চলেছে। এই বাজেট সেই গতিকে আরও বেগবান করবে।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. নাসির উদ্দিন খান বলেন, বৈশ্বিক ঝুঁকি কাটিয়ে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে জনজীবনে স্বস্তি ফেরানোই এবারের বাজেটের প্রধানতম লক্ষ্য। ইতোমধ্যে সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। গত অর্থবছরে স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এবার প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ হাজার ১৩২ কোটি টাকা বেশি এবং মহামারি পরবর্তী স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে। তাছাড়া এই বাজেট সামাজিক সুরক্ষা খাতে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে।

আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদুল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, কোভিডের পর যে বাজেট দেওয়া হলো, সেটা জনবান্ধব মনে করি না। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার এই বাজেট ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের উচিত ছিল- ছায়া বাজেট, বিরোধী দল ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে পরামর্শ এবং সমন্বয় করে বাজেট প্রণয়ন। বিরোধী দল কিংবা যারা অর্থনীতি নিয়ে কাজ করেন, তাদের পরামর্শগুলোও পর্যালোচনায় নিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা যেতো। তাছাড়া সরকারের উচিত ছিল কৃষিখাতে ভর্তুকি দিয়ে কৃষিপণ্য কেনা। তাতে কৃষকেরা লাভবান হতেন। এটা বাস্তব সম্মত নয়। বিশেষ করে প্লাস্টিক জাতীয় পণ্যের দাম কমানো, এক শ্রেণির পুঁজিপতিদের সন্তুষ্ট করতে কিংবা তাদের পরামর্শে প্লাস্টিক পণ্যে আমদানিতে ট্যাক্স কমানো হয়েছে। তাতে পাটজাত পণ্যের ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। আর মেগা প্রকল্পের ব্যয়ের মাধ্যমে সৃষ্ট চাপ জনগণের ওপর পড়বে।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, এই সরকার ব্যবসায়ী বান্ধব নয়। বাজেটের পরে সব কিছুর দাম দ্বিগুণ বাড়বে। এই সরকার ব্যর্থ, সামগ্রিকভাবে তারা অর্থনীতিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারবে না। এই বাজেট গণবিরোধী। এটা জনগণও মানে না।  সরকার লুটপাটের বাজেট দিয়েছে, যা জনগণের কোনো উপকারে আসবে না। এই বাজেটে ঘাটতি আছে প্রায় আড়াইশ’কোটি টাকা। এই ঘাটতি জনগণের ঘাড়ে থেকে আদায় করা করে।

সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, এই বাজেট ব্যবসায়ী বান্ধব। প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ চিন্তা করেই বাজেটে করপোরেট ট্যাক্সে ছাড় দিয়েছেন। আর অপ্রদর্শিত টাকা দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে। মূল্যস্ফীতি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা ও কৃষি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়নে সময়োপযোগী পদক্ষেপ এসেছে বাজেটে। বিশেষ করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে বেকার রেখে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, সে চিন্তা থেকেই মানবসম্পদ উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া মহামারি করোনা ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অস্থিরতা চলছে। ঠিক সে সময় মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় জনবান্ধব ও গণকল্যাণমুখী বাজেট পেশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০২২
এনইউ/এনএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।