বিভিন্ন আলোচনা-সভা বা মিটিংয়ে ‘কমফর্ট ব্রেক’ নেওয়ার কথাটা এখন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই আগের মতো ‘টয়লেট ব্রেক’ আর বলা হয় না।
শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়, ক্যারিয়ার গঠনে চাই আরও কিছু আনুষঙ্গিক বিষয়জ্ঞান। প্রয়োজন ব্যক্তিত্বের পরিস্ফুটন। জানতে হবে শব্দ ও শব্দগুচ্ছের ব্যবহার। সব ভাষার ক্ষেত্রেই কথাবার্তায় মার্জিত হওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। ইংরেজিও এর ব্যতিক্রম নয়। ‘please’, ‘thank you’, ‘excuse me’-র মতো কিছু পরিশীলিত শব্দ বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহারের গুরুত্ব সবাই জানে। কিন্তু সব সময়ই এই ব্যবহার খুব সহজ হয় না বা সোজাসুজি বলাও চলে না। পরিশীলিতভাবে কথা বলতে গেলে অনেক সময়ই একটু ঘুরিয়ে বলা উচিত এবং বাক্যের মধ্যে লম্বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা প্রয়োজন। খুব বেশি সরাসরি কথা আবার বড্ড কর্কশ শোনায়, অমার্জিত মনে হয়। ঠিক এ কারণেই ইমপ্যারেটিভ (আদেশসূচক শব্দ) ব্যবহারের প্রবণতা এড়িয়ে চলাই ভালো। ইমপ্যারেটিভ কী? কোনো কোনো ক্রিয়াপদকে এককভাবে ব্যবহার করা, যাতে সে নিজেই একটা অর্থ বহন করে। যেমন ‘sit’ বা ‘go’।
ক’দিন আগেই আমার সহকর্মী আফতাব আমাকে বলেছে ‘come’ – মাত্র একটা শব্দ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ইংরেজিতে এ ধরনের শব্দের ব্যবহার মানুষকে উদ্দেশ্য করে নয়, বরং পোষা প্রাণীর উদ্দেশে করা হয়ে থাকে। শুরুতেই বলেছিলাম মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হলে আপনাকে একটু ঘুরিয়ে কথা বলতে হবে আর লম্বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করতে হবে। যেমন- could you come here, please’, please come this way’. যে সব শব্দ ব্যবহার করলে তা কোনো স্পর্শকাতর বিষয়ে আঘাত করতে পারে, অপ্রিয় বা আপত্তিকর হতে পারে, এসব এড়িয়ে চলাই ভালো। যেমন- মৃত্যু, শরীরবৃত্তীয় ক্রিয়া, ধর্ম ইত্যাদি। মৃত্যুকেই ধরা যাক। প্রিয়জন মারা গেলে আমরা ‘ডেড’, ‘ডেথ’ বা ‘ডাই’ শব্দগুলো খুব কম ব্যবহার করি। পরিবর্তে ‘passed away’, ‘at peace’, ‘in a better place’, ‘lost’ শুধুমাত্র শব্দ পাল্টে আমরা কথাটিকে একটু নরম করে বলার চেষ্টা করি আর মৃত মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা দেখাই। মার্কিনিরা বিশেষ করে ‘টয়লেট’ শব্দটা ব্যবহারের ব্যাপারে খুব স্পর্শকাতর। শব্দটাকে তারা বেশ অমার্জিত বলে মনে করে। এর বদলে তারা ‘রেস্টরুম’, ‘ওয়াশরুম’ বা ‘বাথরুম’-এর মতো শব্দ ব্যবহার করে। বিভিন্ন আলোচনা সভা বা মিটিংয়েও এখন একটা ‘কমফর্ট ব্রেক’ নেওয়ার কথা বলাটা রেওয়াজ হয়ে গেছে। সেই আগের দিনের মতো ‘টয়লেট ব্রেক’ নেওয়ার কথা আর বলা হয় না। কিন্তু ব্রিটেনে ‘টয়লেট’ শব্দটা মাঝেমধ্যে ব্যবহার করা হয়। অনেক বয়স্ক ব্রিটিশ মানুষ এখনো একটা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেন- ‘I want to spend a penny’, আসলে এক সময় পাবলিক ল্যাবরেটরিতে ঢোকার খরচ ছিল এক পেনি। তা থেকেই কথাটি এসেছে। তবে একে এখন আধুনিক রূপ দেওয়া দরকার, তাই না? ‘I want to spend at least a pound’ কেমন শোনাবে? খুব রাগ বা হতাশার সময় ‘God’ শব্দটি ব্যবহার করা অনেকের কাছে খুবই আপত্তিকর। তার বদলে তারা ‘Oh my God’, ‘Gosh’, ‘Good lord’ শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে থাকেন।
স্পর্শকাতর শব্দগুলোকে সরিয়ে তার পরিবর্তে অন্য শব্দ ব্যবহার করে যখন আমরা এমন একখানা লম্বা শব্দগুচ্ছ বানিয়ে ফেলি, যা পরোক্ষ ওই হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তাকে বলা হয় ‘Cuchemism’। অনেকের কাছে ‘Cuchemism’ বোঝা খানিকটা সমস্যা হতে পারে। কারণ এর মূল অর্থটি অনেক গভীরে নিহিত থাকে। ‘ক্রাইম’ শব্দটিকেই ধরা যাক। খবরের কাগজে বা টিভির খবরে অনেক সময়ই দেখা/শোনা যায়, একজন মানুষ ‘hellping the police with enquiries’ ‘অর্থাৎ, তিনি গ্রেফতার হয়েছেন, কিন্তু এখনো অপরাধী সাব্যস্ত হননি। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই তিনি দোষী। কিন্তু বাক্যটিতে কোথাও বলা হলো না, তিনি ‘criminal’-এর পেছনে যুক্তিসঙ্গত আইনি কারণ রয়েছে। কারণ, আপনি কাউকে ‘ক্রিমিনাল’ বললে, পরে দেখা গেল সে নিরপরাধ, তখন কিন্তু আপনার নামে মানহানির মামলা হতে পারে। সুতরাং শব্দ চয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলেই বাড়বে কথার ছন্দ। ফলে হতে পারবেন সবার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে।
লেখক : সিনিয়র সাব এডিটর ও অনলাইন ইনচার্জ
বাংলাদেশ প্রতিদিন