“আগে দর্শনদারী, তারপর গুণবিচারী”- বাক্যটির সাথে সবাই পরিচিত। শুনলেই পাত্র-পাত্রী দেখার ব্যাপারটা মাথায় আসে না? কিন্তু এটা ছাড়াও আপনাকে দেখার জন্য আরো কিছু ব্যক্তি বসে আছেন।
এজন্য সিভি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন, এটা দেখা মাত্রই চাকরিদাতার মনে ধরে যায়, এবং আপনার দেওয়া তথ্যসমূহ তাঁর পড়তে ইচ্ছা করে। মনে রাখবেন, সিভি দেখেই যদি তাঁদের কাছে তেমন ফরমালভাবে সাজানো মনে না হয়, তাহলে সাধারণত সেই সিভি পড়ে দেখা হয়না। কীভাবে বুঝবেন যে, তাঁদের কোন ধরণের সিভি পছন্দ? এটার একটা ফরমাল নিয়ম কানুন আছে, যেটা সর্বজনস্বীকৃত, যেটা প্রধাণত সবার কাছে সুন্দর। সিভি শুধু লিখলেই হবে না, বানাতে হবে।
কি কি থাকবে আপনার সিভিতে?
সিভি সবসময় ইংরেজিতে হবে। নিচের পয়েন্টগুলো উল্লেখ করবেন:
১। নাম ও যোগাযোগের তথ্য: নাম বড় ফন্টে সবার উপরে লিখবেন। ডিজাইনের উপর ভিত্তি করে বাম, ডান কিংবা মাঝ বরাবর হতে পারে। আর ফোন নম্বর, ইমেইল এড্রেস, বাসার ঠিকানা দিতে হবে। আপনার যদি পরিপাটি লিঙ্কডইন প্রোফাইল থাকে, সেটা অবশ্যই দিতে পারেন।
২। ছবি: ফরমাল ক্লোজআপ পোর্ট্রেইট ছবি দিবেন। স্বাভাবিক হাসি মুখ থাকবে। হাসিমুখ সবাই পছন্দ করে। ছবি যেখান থেকে তুলবেন ব্যাকগ্রাউন্ড (পোষাকের সাথে সমন্বয় করে) হালকা কোন রং দিতে বলবেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে গাঢ় কোন রং ভালো দেখায় না।
৩। অবজেক্টিভ: “Career Objective” না লিখে, শুধু “Objective” লেখাই যথেষ্ঠ। এখানে দুই এক বাক্যের মধ্যে আপনি কিভাবে আপনার দক্ষতা (Skill), অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উন্নতি করতে চান, সেটা ফরমাল ভাবে লিখবেন।
৪। অভিজ্ঞতা: কোথায় কি কাজ করেছেন সেগুলো থাকবে। এখানে পদের নাম, কাজের সময়সীমা, কাজের ধরণ উল্লেখ করতে হবে। কাজের সময়সীমা শুধু মাস আর বছর লেখা যথেষ্ঠ।
৫। এডুকেশন: স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যলয়ের ডিগ্রি, পাসের সন, বিভাগ, বিষয় উল্লেখ করতে হয়।
৬। ট্রেনিং: আপনি কোন ট্রেনিং নিয়ে থাকলে, ট্রেনিং এর নাম, প্রতিষ্ঠানের নাম, কতদিনের কোর্স ছিল আর সাল উল্লেখ করবেন।
৭। দক্ষতা: কি কি বিষয়ে দক্ষ সেগুলি এবং আপনার পার্সোনালিটি থাকবে এখানে। আমরা সবাই কোন না কোন বিষয়ে দক্ষ। যে পদের জন্য সিভি পাঠাবেন, শুধুমাত্র সেখানে যেগুলি কাজে লাগবে সেগুলি উল্লেখ করুন। আর, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করুন।
৮। এক্টিভিটিস: এখানে পড়াশুনার পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য কি কি করেছেন বা করেন উল্লেখ করবেন। কোন পুরষ্কার বা বৃত্তি পেয়ে থাকলে সেটা জানাতে ভুলবেন না।
৯। ভাষা: আপনি কোন ভাষায় কোন লেভেলে আছেন? বাংলার ক্ষেত্রে Native লিখতে পারেন। ইংরেজিতে খুব ভালো হলে Fluent লিখতে পারেন। যোগ্যতা অনুযায়ী এই ৩টির একটি ব্যবহার করুন Fluent > Conversational> Basic
১০। শখ/ ইন্টারেস্ট: এখানে কিছু শখের বিষয় তুলে ধরুন যেগুলি আপনার মনোভাবকে, আচার-আচরণকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করে। মিথ্যা তথ্য দিবেন না।
এছাড়াও কাজ ও পারদর্শিতা ভেদে সিভিতে অন্য পয়েন্টও আসতে পারে। যেমন, একজন ডিজাইনার তাঁর পোর্টফোলিও দেখাতে পারেন; ইঞ্জিনিয়ার তাঁর প্রজেক্টগুলো সম্বন্ধে বলতে পারেন।
পেপার
সবসময় A4 সাইজের পেপারে সিভি বানাবেন। অনেকে লেটার সাইজ ব্যবহার করতে চায়, কিন্তু A4 সাইজ স্ট্যান্ডার্ড। ২ পৃষ্ঠার মধ্যে সিভি শেষ করবেন। ডিজাইনের উপর ভিত্তি করে একটি সিভি ২ পৃষ্ঠায় শেষ করা যায়।
ফন্ট
সিভিতে সর্বোচ্চ ৩টি ফন্ট ব্যাবহার করবেন। এর বেশি করা উচিৎ নয়। ২টি ফন্ট ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো। সুন্দর এবং ফরমাল ফন্ট নির্বাচন করুন। Times New Roman ফরমাল হলেও এটা ব্যবহার করবেন না। বর্ণনার জন্য Calibri, Candara, বা Tahoma ব্যবহার করতে পারেন। আর কোন পয়েন্টের হেডলাইনে Aharoni ব্যবহার করতে পারেন। বর্ণনার জন্য ১১ বা ১০ সাইজ ভালো, তবে প্রয়োজনবোধে ডিজাইন অনুযায়ী ৯ হতেই পারে। পয়েন্টগুলি বোল্ড করে দিন।
লে-আউট
উপরের ১০টি পয়েন্টের ক্রম বজায় রাখুন কিন্তু এটা যে নিচে নিচেই দেখাতে হবে, তা নয়। যেমন, এক বক্সে এডুকেশন দেখালেন, পাশেই অন্য আর একটি বক্সে অভিজ্ঞতা দেখিয়ে দিতে পারেন। অনেকে টেবিল করে সন, ডিগ্রি এসব দেখায়, এরকম করবেন, ভালো দেখায় না। বরং স্পেস দিয়ে গুছিয়ে এগুলো লিখতে পারেন।
রং নির্বাচন
সাদা কালো ছাড়াও আপনি ধূসর (Grey), নীল, সবুজ রং ব্যবহার করতে পারেন। তবে ইচ্ছেমত বিভিন্ন জায়গায় রং করে দিবেন না। পয়েন্ট/ হেডলাইন/ বর্ডার/ সেপারেটর ইত্যাদিতে রং ব্যবহার করবেন। চাইলে শুধু ধুসর রং এরই ৫টি প্রকার ব্যবহার করতে পারেন। বর্ণনাতে কালো ব্যবহার করবেন।
কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন
প্রফেশনাল সিভি বানাতে কখনোই মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা এ জাতীয় কোন সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন না। অবাক লাগার কিছু নেই। কারণ এগুলোতে আপনি তত সাপোর্ট পাবেন না। তাহলে কী ব্যাবহার করবেন? Adobe InDesign/ Illustrator ব্যবহার করতে পারেন। তবে আমি সকলের জন্য সহজ পদ্ধতি বলবো- মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট (PowerPoint) ব্যবহার করতে। এটা দিয়ে খুব সহজেই ডিজাইনের জন্য বিভিন্ন আকারের বক্স, বৃত্ত, ইত্যাদি আকৃতি ব্যবহার করে আকর্ষনীয় করে ফেলতে পারেন সিভিকে। এরপর পিডিএফ এ সেইভ করবেন। কমপক্ষে মাইক্রোসফট ২০১৩ ভার্সন ব্যবহার করা উচিৎ।
কঠিন লাগছে? দয়া করে কঠিন ভাববেন না। কারণ যেটা সহজ সেটাকে আপনি কঠিন মনে করে বসে থাকলে, অন্যদিকে আর একজন আপনার চেয়ে এগিয়ে যাবে; সুন্দর একটা সিভি বানিয়ে জমা দিয়ে দিবে। আর প্রথম দিকে একটা কথা বলেছিলাম না? “বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করুন” - মাঝেমাঝে নিজের কমনসেন্স খাঁটিয়ে চেষ্টা করতে থাকুন, অবশ্যই পারবেন! যুগের সাথে তাল মিলাতে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জন, দক্ষতা বৃদ্ধি এখন নিজের উন্নতির প্রধান পথ।
পরামর্শ দিয়েছেন
গাজী গোলাম মোর্শেদ সাগর
আই.বি.এ., জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
ডকুমেন্ট ডিজাইনার ও এইচ.আর.এম. স্পেশালিস্ট
ইমেইল: [email protected]