আবার অনেকে অফিসের কাজ বাসায় নিয়ে আসেন, এমনকি ছুটির দিনেও অফিসের কাজ করেন। অনেককে বলতে শুনেছি ‘আমি ছাড়া অফিসের একটা কাজও হয় না, বস আমাকে ছাড়া কিছু বোঝেন না, খুব ব্যস্ত থাকি, কাজের অনেক চাপ পরিবারকে সময় দেব কীভাবে’ ইত্যাদি ইত্যাদি।
কখনও কি ভেবে দেখেছেন আপনি এই কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগেও এই কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান কিন্তু ঠিকই চলতো, আপনি ওই কোম্পানিতে না থাকলেও ওই প্রতিষ্ঠান আপনার পরিবর্তে ঠিকই অন্য একজন কর্মচারীকে খুঁজে নেবে, আপনার থাকা না থাকায় ওই কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের কিছু আসবে যাবে না। কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করতে হবে। কিন্তু তাই বলে অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে নয়। প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে যতটুকু পারিশ্রমিক পাচ্ছেন তার জন্য ততটুকু কাজ করুন। কারণ প্রতিষ্ঠান আপনাকে ত্রিশ হাজার টাকা বেতন দিলেও আপনাকে দিয়ে যেভাবে খাটিয়ে নিচ্ছে তাতে কোম্পানি একলাখের বেশি টাকা আয় করে নিচ্ছে। তাই খাটতেই যদি হয় নিজের জন্য খাটুন।
মনে রাখবেন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে আপনি শুধু একজন কর্মচারী, যতদিন আপনাকে তাদের প্রয়োজন হবে ততদিন তারা আপনাকে রাখবে, যখন তাদের কাছে আপনার প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে তখন তারা আপনাকে ছুড়ে ফেলে দেবে।
কখনও কি নিজেকে প্রশ্ন করেছেন যখন আপনার চাকরি থাকবে না তখন আপনার শেষ আশ্রয় কোথায় হবে? উত্তর হচ্ছে আপনার পরিবার। পরিবারের জন্য, আত্মীয়-স্বজনের জন্য সময় রাখুন। তাদের সঙ্গে সময় কাটান, শুধু কাজ নয় নিজের পরিবারকেও ভালোবাসুন।
চাকরি কেন করতে হবে?
চাকরি ছাড়া কি অন্য কিছু করা যায় না? আমি বলব চাকরির পিছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করুন। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে প্রতিবন্ধকতা বলে কিছু নেই। মাত্র বিশ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেও লাখ লাখ টাকা আয় করা যায়। আর প্রযুক্তি খাতে টাকা আয় করতে হলে চাকরির প্রয়োজন হয় না, একটা কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই চাকরির চেয়ে বেশি টাকা আয় করা যায়। কিন্তু তার জন্য চাই আইসিটিতে দক্ষতা।
আপনি বলতে পারেন আপনি মফস্বল থেকে পড়াশোনা করেছেন, কম্পিউটার নেই, আপনি কীভাবে আইসিটিতে দক্ষ হবেন? নিজের ইগো দূরে সরিয়ে যে বন্ধুর কম্পিউটার রয়েছে তার হাতে পায়ে ধরে তার কাছ থেকে প্রতিদিন কম্পিউটার শেখার জন্য তিরিশ মিনিট করে সময় চান, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা কমিয়ে ইউটিউব থেকে প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ই-মেইল মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইনিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিখুন। বুঝতে সমস্যা হলে যারা আইসিটিতে কাজ করেন তাদের কাছে যান, দেখবেন নিজে কাজ করতে করতে একসময় নিজের একটা প্রতিষ্ঠান হয়ে গেছে।
আইসিটি যদি কঠিন লাগে কৃষিকাজে আসুন, কোনো কাজই ছোট করে দেখবেন না, বর্তমানে আধুনিক বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কৃষিক্ষেত্র অনেক এগিয়ে গেছে। মাস্টার্স পাস করা একটি ছেলে চাকরি বাদ দিয়ে লিচুর বাগান করে এক মৌসুমে ১৮ লাখ টাকা আয় করছে, অনার্স পাস করা একটি মেয়ে চাকরি বাদ নিজের ফ্যাশন হাউজ গড়ে তুলে আরও পাঁচজন মেয়ের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছে।
বর্তমানে আমাদের দেশের অধিকাংশ বাবা-মা সন্তানকে বড় হয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বড় সরকারি অফিসার হওয়ার জন্য বলে। কিন্তু কোনো বাবা-মা তার সন্তানকে বলে না তুমি বড় হয়ে মার্ক জুকারবার্গের মতো একটি বড় সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের প্রতিষ্ঠাতা হবে বা ল্যারি এলিসনের মতো বড় একটা সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করবে।
স্বপ্নটা সবসময় বড় দেখতে হয়, গাড়ি কিনতে হলে বিএমডাব্লিউ কেনার স্বপ্ন দেখা ভালো বিএমডাব্লিউ কিনতে না পারেন দেখবেন একটা নোয়া গাড়ি ঠিকই কিনে ফেলেছেন। কিন্তু আপনি যদি শুরু থেকেই নোয়া গাড়ি কেনার স্বপ্ন দেখেন আপনার কপালে দেখবেন একটা সাইকেল জুটেছে।
মনে রাখেবন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য মনের ইচ্ছাটাই সর্বপ্রথম দরকার। আপনার কাছে কি আছে আর কি নেই সেটা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট না করে যা আছে তাই নিয়েই শুরু করুন। আপনার কাছে কি আছে আর কি নেই সেটা বড় বিষয় নয়, কি পেতে চান সেটাই আসল বিষয়।
জীবনটা খুব বেশি বড় না, তাই এই সুন্দর জীবনটাকে চাকরির যাঁতাকলে পিষ্ট করার কোনো মানে হয় না। নিজের মতো করে বাঁচুন, জীবনটাকে উপভোগ করুন এবং অবশ্যই পরিবারকে ভালোবাসুন।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০১৭
এএ